আগামী ১৭ জুন উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। এ সময় যাত্রা পথে সড়ক-মহাসড়কে বিভিন্ন রকম বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে পশুবাহী ট্রাক চলাচল করায় সড়কে দেখা যায় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ও বাড়তি যানজট। যানজটসহ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, চাঁদাবাজি এসবের ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়ে যায় দিগুণ। ঈদে যাত্রীরা যাতে স্বস্তিতে বাড়ি পৌঁছাতে পারেন সেজন্য সড়ক-মহাসড়কে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ঈদযাত্রায় মহাসড়কে সব ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে বিভিন্ন ভাগ হয়ে কাজ করবে সংস্থাটির সদস্যরা। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অস্থায়ীভাবে সাব-কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে কাজ করবে তারা। সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটের তথ্যগুলো সহজে পেতে রাখা হয়েছে কুইক রেসপন্স টিম। যাত্রা পথে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সেবার বুথ, খাবার পানির ব্যবস্থা, হয়রানি ঠেকাতে অতিরিক্ত গোয়েন্দা টিম প্রস্তুত রাখা হবে। এদিকে যাত্রীরা বলছেন, সব ধনের ভোগান্তি কমিয়ে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে চান তারা।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন দীপন রায়। বরিশালের উজিরপুরে গ্রামের বাড়িতে বছরে দুইবার দুই ঈদে যান তিনি। এ সময় যাত্রা পথে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাকে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কাজের জন্য সারা বছর ঢাকাতেই থাকতে হয়। খুব কম সময় গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়। অন্য সময় না গেলেও ঈদে যেতে হয়। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত বাস ভাড়া ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। ঈদে লোকাল বাসে যাই, তারপরও ভাড়া নেয় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। বর্তমানে বাড়তি ভাড়া নেওয়া একটি নিয়ম হয়ে গেছে। আমরা বললে কী লাভ হবে! আর যে যত কথাই বলুক ঢাকা থেকে বের হতে যানজটের মুখে পড়তেই হয়। কোনও কোনও সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকি। সুষ্ঠুভাবে বাড়ি পৌঁছাতে পারলেই আমরা খুশি। কর্তৃপক্ষের কাছে এটাই চাই।
একই এলাকার আরেক যাত্রী সাব্বির খান বলেন, আমরা অল্প আয়ের কর্মচারী। বসুন্ধরা শপিংমলে পোশাকের দোকানে কাজ করি। আমাদের মতো যারা আছেন তাদের ছুটি হয় চাঁদ রাতে। এ সময় যারা গ্রামের বাড়ি যান একমাত্র তারাই জানে পথে পথে কী রকম ভোগান্তি পোহাতে হয়। গাড়িচালকরা বসে থাকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার জন্য। আমাদের বাড়ি যেতেই হবে, তাই কোনও উপায় না পেয়ে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ভাড়া দিয়ে গাড়িতে উঠতে হয়। তবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় সড়কে যানজট কম দেখেছি গত ঈদে। এবার যেন সুন্দরভাবে বাড়ি পৌঁছাতে পারি।
হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, এবারও ঈদুল আজহা উপলক্ষে যাত্রা পথে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল/ টহল বৃদ্ধি, পিকেট ডিউটি বৃদ্ধি, গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অস্থায়ীভাবে সাব-কন্ট্রোল রুম স্থাপন, সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটের তথ্যগুলো সহজেই পেতে কুইক রেসপন্স টিম। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিং সেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। সরকারি রেকার ছাড়াও সমন্বয়ের মাধ্যমে বেসরকারি রেকার ও ক্রেনগুলোকে প্রস্তুত রাখা হবে। প্রস্তুত রাখা হবে অ্যাম্বুলেন্সও।
হাইওয়ে পুলিশ আরও জানিয়েছে, সড়ক-মহাসড়কে জেলা ও মেট্রোপলিশ পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে তারা। বাস স্ট্যান্ড ও বাজার বা যেখানে লোকসমাগম বেশি থাকবে সেখানে স্পেশাল টিম মোতায়েন করা হবে। মহসড়কে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হাইওয়ে পুলিশের ইন্টেলিজেন্সের একাধিক টিম কাজ করবে। যাতে কোনও প্রকার চাঁদাবাজি না হয় সেজন্য পুলিশ সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। মহাসড়কে যাতে অবৈধ থ্রি-হুইলার চলাচল করতে না পারে সে জন্য হাইওয়ে পুলিশ কাজ করবে। হাইওয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন অফিসাররা সার্বক্ষণিক অফিসার ও ফোর্সদের তদারকি করবেন। ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হবে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাক্ষেপে ঈদের আগে ৩ তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক, লরি ও মালবাহী ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঈদের আগে ও পরের ৭ দিন মহাসড়কে সুনির্দিষ্ট পূর্ব তথ্য ছাড়া এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত যানবাহন না থামানো ও চেকিং না করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এবারের ঈদযাত্রা নিয়ে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো.শাহাবুদ্দিন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বরাবরের মতো এবারও ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এবার ঈদযাত্রায় আমরা নতুন একটি বিষয় যুক্ত করতে যাচ্ছি। বিশেষ বিশেষ জায়গায় যেখান থেকে পোশাক শ্রমিকরা বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে গাড়িতে উঠবেন, সেসব জায়গায় আমাদের আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সেটি বাস্তবায়ন করতে আগামীকাল থেকে আমাদের টিম মাঠে কাজ করবে। যাত্রা পথে যেন যাত্রীদের কোনও অসুবিধা না হয়, গরমে যেন অসুস্থ না হন, সে জন্য সেসব জায়গায় অস্থায়ীভাবে মেডিক্যাল ক্যাম্প বসানো হবে। অস্থায়ী যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা করা হবে। খাবারের পানির ব্যবস্থা রাখা হবে। অপরাধীদের ঠেকাতে অতিরিক্ত ফোর্সও কাজ করবে।
এর আগে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি জনগণের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়ক এবং সড়কে ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানান। বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ সময় পুলিশ প্রধান সড়ক অথবা নৌপথে কোরবানির পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে পশুবাহী গাড়ির সামনে গন্তব্যস্থান উল্লেখ করে ব্যানার লাগানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানান। তারপরও কোরবানির পশু পরিবহনে কেউ বাধা দিলে কাছের থানা অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করার জন্য অনুরোধ করেন। পশু ব্যাপারীদের অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, আসন্ন ঈদুল আজহায় মহাসড়কে চাঁদাবাজি অনেক কম হবে। বিভিন্ন সময় পুলিশ ফিটনেসবিহীন গাড়ি চেক করার জন্য সড়কে থামায়। গাড়িতে অবৈধ কিছু নিয়ে যাচ্ছে, এমন মনে করলে থামায়। এটা কোনও চাঁদাবাজির অংশ নয়। এটা নিয়মিত চেকিংয়ের বিষয়। চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতারাও চাঁদাবাজির বিষয়ে খেয়াল রাখছেন। আশা করি এবার ঈদুল আজহায় চাঁদাবাজি অনেক কম হবে।
তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে নসিমন-করিমন চলাচলের বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা চাই অবৈধ কোনও যান যেন মহাসড়কে না আসে। মহাসড়ক যেন নিরাপদ থাকে সে জন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে।