X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদের দিনে কী হয়?

উদিসা ইসলাম
১৬ জুন ২০২৪, ২২:০০আপডেট : ১৬ জুন ২০২৪, ২৩:০৭

২০১৭ সালে যখন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়, তখন প্রথম দিকের ঈদ উৎসবে ক্যাম্প এলাকাজুড়ে ছিল কান্নার রোল। নিজ বাসস্থান ছেড়ে এসে ভিনদেশে একটা ক্যাম্পের মধ্যে ঈদের আনন্দ বলে কিছু ছিল না তাদের। এখন সাত বছর পর পরিস্থিতি বদলেছে। ঈদের দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদের নামাজে এখন আর কান্নার রোল পড়ে না, তবে বিষণ্ণতা থাকে বয়োজ্যেষ্ঠদের মাঝে।

বেসরকারি সংস্থাগুলো কোরবানি ঈদে ক্যাম্পে পশু কোরবানির ব্যবস্থা করে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্পগুলো নিজেদের আয়োজনে সাজিয়ে থাকে, নামাজের জায়গা পরিচ্ছন্ন করে কিছু কাগজ কেটে সাজাতেও দেখা যায়। সব মিলিয়ে ঈদের দিন ও পরের দিন উৎসবের আমেজে কাটে তাদের। ক্যাম্পের বয়োজ্যেষ্ঠরা বলছেন, ঈদে বার্মা থাকতে তারা পুরো এলাকা জরি দিয়ে সাজাতেন। নানা রকম মিষ্টান্ন রান্না হতো। সে উৎসব তাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেখতে পারবে না ভাবলেই চোখ ভিজে আসে।

বিশ্বে নজিরবিহীন নির্যাতনের শিকার এই রোহিঙ্গাদের প্রথম ঈদের বর্ণনা দিতে গিয়ে ক্যাম্প ফোর এক্সটেনশন নিবাসী রাবেয়া গুলবাহার বলেন, ‘কখনও ভাবিনি এরকম বন্দি এলাকায় আত্মীয়-স্বজনবিহীন নিরানন্দ ঈদ কাটাতে হবে। সেবার ঈদে নামাজের জামাত হয়েছিল। কিন্তু এমন কেউ ছিল না যারা কান্নায় ভেঙে পড়েনি। মসজিদে মসজিদে মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম ফিরে যাওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেছেন। এখন এত বছর পর আমরা বুঝতে পারছি,  চাইলেও ফিরে যাওয়ার রাস্তা নেই। তাই এখন দিনটা আমাদের সন্তানদের নিয়ে ভালো কাটানোর চেষ্টা করি। এখন নতুন আত্মীয়ও হয়েছে। আমরা এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে যাই। ভালো-মন্দ রান্নার সুযোগ আছে। নিজেদের মানিয়ে নিয়েছি।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ছবি: প্রতিবেদক বালুখালী ক্যাম্পের দোকানদার বায়তুল বলেন ঈদকে ঘিরে কিশোরীদের উচ্ছ্বাসের গল্প। তিনি বলেন, ঈদে এমন কেউ নেই যে মেহেদি কিনে না। অন্যান্য সময়ের তুলনায় তিনগুণ মেহেদি দোকানে তুলতে হয় তাকে। কিশোরীরাই ক্রেতা বেশি উল্লেখ করে বায়তুল বলেন, রোহিঙ্গা মেয়েরা সারা বছরই মেহেদি পরে। খেয়াল করে দেখবেন, এটা তাদের সাজের অপরিহার্য জিনিস। আর ঈদের আগে তো কথাই নেই। তবে শুরুর দুই বছর এসব দেখা যায়নি। তখন কোনটা ঘর আর কে পর সেসব নিয়ে মানুষ শঙ্কায় ছিল। এখন এখানেই মানিয়ে নিয়েছে।

ক্যাম্পের কিশোরীদের ঈদ উৎসবের বড় অংশজুড়ে থাকে একে-অপরকে মেহেদি পরানো, আর সাজগোজের নানা জিনিস কেনা। কুতুপালং বাজারে মেহেদি কিনতে আসা রোকাইয়ার হাতে মেহেদি পরা। তারপরেও তিনি দোকান থেকে মেহেদি কিনছেন। কার জন্য কিনছেন জানতে চাইলে বলেন, এখান থেকে ১০টা কিনে নিয়ে গিয়ে ক্যাম্পের ভেতরে ১০ টাকা বেশিতে বিক্রি করে দেবেন। আর দুটো থাকবে তার তিন বোনের হাতে পরানোর জন্য।

ঘরে ঘরে কোরবানির মাংস পৌঁছানোর আগেই দুপুরে খাওয়ার জন্য কিছু মাংস কেনা হয়। কিছু না হলেও মুরগির ব্যবস্থা থাকে এই দিনে। আর নানা ধরনের ঘরে বানানো মিষ্টান্ন থাকে। কিন্তু যেহেতু গ্যাস ব্যবহারে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা আছে, ফলে যত খুশি থাক না কেন, রান্না থেকে নিজেরা বিরত থাকতে হয়।

রোহিঙ্গা কিশোরীদের বিশেষ পছন্দ মেহেদি এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ক্যাম্পের আশপাশে গরু ও খাসি কেনাবেচা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে হাটে তাদের পশু কিনতে দেখা গেছে। উখিয়ার কুতুপালং টিভিকেন্দ্র সংলগ্ন কোরবানির পশুর হাট থেকে রোহিঙ্গা সমাজের নেতৃস্থানীয় কিছু ব্যক্তি পশু কিনেছেন। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগে এবার ২ হাজার ২০০টির বেশি পশু কোরবানির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ-দ্দৌজা নয়ন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণত ইসলামি বিদেশি সংস্থাগুলো বড় দায়িত্ব পালন করে। এবারও তাদের উদ্যোগে সব ক্যাম্পের জন্য ২ হাজার ২০০টির বেশি পশু কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ঈদের পরের দিনে টার্কিস এনজিওগুলো থেকে প্যাকেটজাত মাংস দেওয়ার কথা আছে। সব মিলিয়ে তারা ঈদের আমেজে থাকেন।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
চীন সফর নিয়ে বিশেষ সংবাদ সম্মেলনরোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের অধিকতর কার্যকর ভূমিকা চেয়েছে বিএনপি
বৈশ্বিক অনুদান কমায় রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে
বিপুল পরিমাণ মাদকসহ রোহিঙ্গা তরুণ আটক
সর্বশেষ খবর
‘বিদেশি হাইপের কারণে দেশি মেধাবী কেউ যেন বঞ্চিত না হয়, সেটা দেখতে হবে’
‘বিদেশি হাইপের কারণে দেশি মেধাবী কেউ যেন বঞ্চিত না হয়, সেটা দেখতে হবে’
বিএমইউতে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান মাসের’ র‌্যালি ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
বিএমইউতে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান মাসের’ র‌্যালি ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
প্রসঙ্গ 'সামান্য একটু ডিটেইল'
প্রসঙ্গ 'সামান্য একটু ডিটেইল'
স্কুলশিক্ষার্থীকে অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
স্কুলশিক্ষার্থীকে অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট