পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনির মৃত্যুর অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমানের আদালত এই আদেশ দেন।
সাত দিনের রিমান্ড শেষে আছাদুজ্জামান মিয়াকে আদালতে হাজির করেন পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক গোলাপ মাহমুদ। এছাড়াও উত্তরা পূর্ব থানার আরেকটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র পাল।
আদালতে আছাদুজ্জামান মিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা জামিন চেয়ে শুনানি করেন। এসময় রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে উত্তরা পূর্ব থানার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভার এলাকা থেকে আছাদুজ্জামান মিয়াকে আটক করেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এরপর গত ১২ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে ‘ক্রসফায়ারের নামে হত্যার’ অভিযোগের ওই মামলায় তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিল আদালত।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি খিলগাঁও এলাকায় পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নুরুজ্জামান জনি নিহত হন। এ ঘটনার ৯ বছর পর গত ২ সেপ্টেম্বর জনির বাবা ইয়াকুব আলী খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলা পুলিশের ১৩ সদস্য এবং সাবেক এমপি সাবের হোসেন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের ৪৯ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে নূরুজ্জামান জনি ও তার সহপাঠী মইন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যান। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেরার পথে আসামিরা জনি ও মইনকে ডিবি পরিচয়ে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালায়।
এসময় নুরুজ্জামান জনির স্ত্রী মুনিয়া পারভিনসহ আত্মীস্বজনরা খিলগাঁও থানা, ডিবি দক্ষিণ অফিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিসসহ বিভিন্ন থানায় খোঁজ করেন উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, প্রায় দুই দিন ধরে খোঁজাখুঁজির পরও নুরুজ্জামান জনির কোনও সন্ধান পাওয়া যায় না। ২০ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর খেলার মাঠের আশপাশের মানুষজন কান্নার শব্দ শুনতে পান। নির্যাতিত ব্যক্তি চিৎকার করতে থাকেন। ঘটনাস্থলের পাশে সি ব্লকের বাসিন্দা লাভলী বেগম ও এ ব্লকের বাসিন্দা সাইফুদ্দিনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার সেতু কান্না ও চিৎকারের শব্দ শুনতে পান। সেই সময় গুলির শব্দ পান আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা। ভোরে বাদীসহ প্রতিবেশীরা খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর মাঠের দিকে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের দেখতে পান।
এসময় স্থানীয়দের পুলিশ জানিয়েছে, নুরুজ্জামান জনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তার মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। বাদী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে দেখতে পান নুরুজ্জামানের বুকের বামে, ডান দিকে, দুই হাতের তালুতে ১৬টি গুলির চিহ্ন ছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতারর দেখানো মামলার আবেদনে বলা হয়, মামলার বাদীর ছেলে আ: আজিজ পেশায় গার্মেন্টস কর্মী। গার্মেন্টসের বিভিন্ন খুচরা পন্য ক্রয় করে অন্যত্র বিক্রয় করে নিজের এবং পরিবারের বায় নির্বাহ করতেন। ঘটনার দিন গত ৫ আগস্ট ভিকটিম আজিজ উত্তরাস্থ একটি অফিস থেকে গার্মেন্টসের স্টক লড আনার জন্য সকালে গাজীপুর থেকে ঢাকার উত্তরার দিকে রওয়ানা দেন। সকাল ৭টার দিকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের সামনে পৌঁছামাত্র ওই স্থানে অবস্থানরত পুলিশ এবং অবৈধ অস্ত্র-সন্ত্রে সজ্জিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডাররা সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে ভিকিটিম আজিজের উপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন। ওই সময়ে ভিকটিম গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকলে প্রত্যক্ষদর্শী পথচারীরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসা অবস্থায় গত ৭ আগস্ট ভিকটিম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এ মামলায় এজাহারনামীয় ৬ নং আসামি আছাদুজ্জামান মিয়া।