জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া শতাধিক বিলাসবহুল গাড়ির খোঁজ শুরু করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে এসব গাড়ি খালাস করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দার অভিযানে ইতোমধ্যে দুটি গাড়ি জব্দও করা হয়েছে, যেগুলোর জন্য ২০ কোটি টাকারও ওপরে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিনহাজ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিপুল অঙ্কের রজস্ব ফাঁকি দিয়ে বের করা গাড়ির খোঁজ করছি। এই সংখ্যা শতাধিক। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে গাড়িগুলো যে কোনোভাবে বের করা হয়েছে। এসব গাড়ি অনেক হাত বদল হয়। এছাড়া গাড়িগুলোর কাগজপত্রও বের করতে একটু সময় লাগে। এরপর সেগুলো বিআরটিএ-তে নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষার প্রয়োজন হয়। এ কারণে গাড়িগুলো জব্দ করতে সময়ও লাগে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সব গাড়ির ক্রেতারা সাধারণ উচ্চবিত্ত পরিবারের। নানাভাবে তারা গাড়ির কাগজপত্রও করে ফেলেন। আবার গাড়ির সিসিও পরিবর্তন করে থাকেন। আবার দেখা যায়, যে স্থানে গাড়ি রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়, সেখানে আমরা যাওয়ার পর গাড়ি থাকেও না। আর হঠাৎ করে এসব গাড়ি জব্দও করা যায় না। সব কাগজপত্র হাতে নিয়েই অভিযানে যেতে হয়। এই কারণে গাড়ি জব্দ করা একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
মিনহাজ উদ্দিন বলেন, তবে আমরা আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আমাদের কাছে যেসব কাগজপত্র রয়েছে সেগুলোর যাছাই-বাছাই অনেকটাই সম্পন্ন হয়েছে। এখন লোকেশন দেখে শুধু গাড়ি জব্দের অপেক্ষা। অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা আরও গাড়ি জব্দ করবো।
গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতে চট্টগ্রামের খুলশি থানার রোজ ভ্যালি হাসান টাওয়ার-১ এর ৪২ নম্বর বাসার গ্যারেজ থেকে মিথ্যা ঘোষণা ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা বিলাসবহুল একটি নিসান সাফারি গাড়ি জব্দ করা হয়। গাড়িটির ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বরের বিপরীতে কোনও বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়নি বলে জানানৈ কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে কোন আমদানি দলিলপত্রের ভিত্তিতে গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ তা জানাতে পারেনি। অর্থাৎ আমদানি সংশ্লিষ্ট কোনও দলিল দাখিল করতে না পারা এবং বিআরটিএ থেকে গাড়িটির কোনও আমদানি তথ্য না পাওয়ায় এটি শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে আমদানি করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। এটা কাস্টমস আইন, ২০২৩ এর ধারা ২(২৪), ১৮, ৩৩, ৮১, ৯০ এর লঙ্ঘন এবং এই আইনের অধীন অপরাধ হিসেবে গণ্য।
শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, গাড়িটির মোট আমদানি শুল্ক ৮২৭ শতাংশ এবং আনুমানিক শুল্ক-কর ১০ কোটি টাকা।
এর আগে ১৩ নভেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও থেকে বিএমডব্লিউ-৭ সিরিজের আরেকটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়। সূত্র জানায়, আমদানি করা গাড়িটি মূলত মিথ্যা ঘোষণায় দলিল জালিয়াতি করার মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস দিয়ে ছাড় করা হয়েছে। এটা কাস্টমস আইন, ২০২৩ এর সেকশন ১৮, ৩৩, ৯০, ১২৬ এর লঙ্ঘন এবং একই আইনের ২ (২৪) অনুসারে চোরাচালান হিসেবে গণ্য হওয়ার যোগ্য।
কর্মকর্তারা বলেন, এই গাড়িটির ক্ষেত্রেও বিপুল অঙ্কের টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য গাড়ির ক্ষেত্রেও বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি প্রমাণিত হচ্ছে। যেসব গাড়ি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বাইরে বের হচ্ছে, বর্তমানে সেগুলোর রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ কয়েকশ কোটি টাকা হবে।