X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
২০ বৈশাখ ১৪৩২

মামলাটি বিদ্বেষপূর্ণ, খালেদা জিয়া নির্দোষ ছিলেন: আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ

বাহাউদ্দিন ইমরান
১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৫০আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৫০

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আপিল মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। মামলাটি ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ উল্লেখ করে রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্তের ফলে আপিলকারী এবং যারা আবেদন করতে পারেননি, তারা যে নির্দোষ ছিলেন, তা আবারও প্রতিষ্ঠিত হবে।’

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিক্রমে এই রায় ঘোষণা করেন। এর আগে মোট চার দিনের মতো শুনানি শেষে রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করা হয়েছিল। 

পর্যবেক্ষণসহ মামলার রায়ে আদালত বলেছেন, ‘সর্বসম্মতিক্রমে সবার আপিল মঞ্জুর করা হলো। সেইসঙ্গে হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করা হলো। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস দেওয়া হলো। মামলাটি বিদ্বেষপূর্ণ বলে গণ্য হলো। যারা আপিল করেননি, এই রায় তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।’ এরমধ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যক্রমের অবসান ঘটবে বলেও উল্লেখ করেন আপিল বিভাগ।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ। কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।

মামলার রায় প্রসঙ্গে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে মামলার সারবর্তা কিছুই ছিল না। এই মামলায় সাজা দেওয়ার মতো কোনও উপাদানই ছিল না। সেই মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ ৫ বছর থেকে ১০ বছর করেছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। তখন বিচার ব্যবস্থা বলে কিছুই ছিল না। ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে বলতো, সেভাবে রায় হতো। আজকে মনে হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। এই প্রসিকিউশন ছিল ম্যালিসাস। এটি ছিল বিদ্বেষমূলক এবং প্রতিহিংসামূলক মামলা।’

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘এই মামলা ছিল শেখ হাসিানার ব্যক্তিগত জিঘাংসা। তিনি (শেখ হাসিনা) সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যা বলতেন। বলতেন— তিনি (খালেদা জিয়া) এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। এই রায়ে খালেদা জিয়া নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। আজ প্রমাণিত হলো খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের ওপর অবিচার করা হয়েছিল।’

দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান জানান, ‘মোট চারটি আপিল ছিল, সবগুলোই মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্ট এবং বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করেছেন। সেইসঙ্গে যারা আপিল করতে পারেননি, তাদেরও খালাস দিয়েছেন। আদালত বলেছেন— পুরো মামলাটাই ছিল ম্যালিসাস প্রসিকিউশন। তাই তারাও (যারা আপিল করেননি) এ সুবিধা পেয়ে খালাস পেলেন। রায়টি দুদককে জানাবো, পরে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এর আগে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। একইসঙ্গে এ মামলার অন্য পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অরফানেজ ট্রাস্টের নামে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান। একইসঙ্গে এই মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি ছয় আসামির প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।  

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক এমপি ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান। এর মধ্যে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া।  

পরে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ-টু আপিল করেন খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন ধরে সে আবেদনটি আইনজীবীদের উদ্দোগের অভাবে শুনানির জন্য ঝুঁলে ছিল। এরপর ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করেন আদালত। খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাজা স্থগিত রাখা হয়। পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে আপিলের সার সংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় মামলাটি আপিল বিভাগে শুনানিতে ওঠে।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
পর্নোগ্রাফি প্রচারের অভিযোগে ২ নারী কারাগারে
খালেদা জিয়া সোমবার সকালে ঢাকায় পৌঁছাবেন: মির্জা ফখরুল
জনগণ খালেদা জিয়াকে আস্থার প্রতীক মনে করে: শিমুল বিশ্বাস
সর্বশেষ খবর
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষার্থীর হামলায় শিক্ষক আহত, বিক্ষোভ
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষার্থীর হামলায় শিক্ষক আহত, বিক্ষোভ
ভারতের গোয়ায় মন্দিরে পদদলিত হয়ে  নিহত ৬
ভারতের গোয়ায় মন্দিরে পদদলিত হয়ে নিহত ৬
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসমাবেশ শুরু
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসমাবেশ শুরু
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় মামলা
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় মামলা
সর্বাধিক পঠিত
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’