বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের জনমত জরিপ ও মতামত গ্রহণে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দেশ পরিবর্তনে তিনটি পরামর্শও চাওয়া হচ্ছে তাদের জরিপে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী বুথ বসিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রাজধানীর পান্থপথ সিগন্যালের পাশে একটি বুথে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে ভিড় করতে দেখা গেছে। সেখানে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে বিভিন্ন লিখিত পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে।
সেখানে দেখা গেছে, বুথে কয়েকজন শিক্ষার্থী পাশাপাশি বসে আগত দর্শনার্থীদের সহযোগিতা করছেন। বুথে একটি টেবিলে সাজানো রয়েছে নির্ধারিত ফরম। ওই ফরমে দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে। ফরমরে প্রশ্নে সাত নম্বর পয়েন্টে লেখা আছে, আপনার মতে কোন তিনটি কাজ করলে দেশ বদলে যাবে? এরপরের পয়েন্ট, ৮ নম্বরে লেখা আছে নতুন রাজনৈতিক দলের কাছে আপনার জীবনের সমস্যার সমাধান চান? নতুন দলের কাছে কী প্রত্যাশা করেন? দলের নাম কী হতে পারে এবং দলের মার্কা কী হবে–ফরমে এমন অনেক প্রশ্ন রেখে উত্তর জানতে চান শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে এই ফরম পূরণ করতে দেখা গেছে।
ফরমে রবিউল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘দুর্নীতি দূর করতে হবে, বেকারত্ব দূর করতে হবে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন করতে হবে।’ তিনি এই দলের কাছে প্রত্যাশা করেন সততা, যোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা।
মো. আরিফুল ইসলাম মোতালিব নামে এক ব্যবসায়ী ফরমের ৮ নম্বর পয়েন্টে লেখেন, আমি এ দেশের একজন নাগরিক, এটি যেন স্বাধীনভাবে বলতি পারি।’ সুন্দর একটি আদর্শে দেশ গড়ে তোলার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, সেটা প্রত্যাশা করেন তিনি।
বুথে বসা কলাবাগান থানার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি মাহবুব গাজী বলেন, ‘গতকাল থেকে এটা চালু হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চালু থাকে। আমাদের এই ক্যাম্পিং চলবে টানা তিন দিন। তবে বেড়ে সপ্তাহব্যাপী হতে পারে। ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থীদের একটি টিম পালাক্রমে কাজ করছে। প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০টির মতো লিখিত ফরম জমা পড়ছে। আজ বিকাল ৫টা পর্যন্ত জমা পড়েছে প্রায় ১০০টি।’
শুধু পান্থপথ নয়, রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও এ বুথের কার্যক্রম দেখা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি বুথে এই ক্যাম্পেইন চালাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আজ সারা দিন চলছে এ ক্যাম্পেইন।
জানা গেছে, রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশে এই জরিপ চালাবেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা। জরিপ শেষ হলে শিক্ষার্থীদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে নতুন রাজনৈতিক দলের সূচনা করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাংস্কৃতিক সেলের সদস্য সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আজ সকাল থেকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত নিচ্ছি। ছয়টি বুথে এই কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়ে আগামীকাল থেকে সারা দেশে এই জরিপ শুরু হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামনে যেহেতু একটি রাজনৈতিক দল আসতে যাচ্ছে, সেটাকে কেন্দ্র করেই কেমন বাংলাদেশ চাই ক্যাম্পেইনটি চলছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত জানাবে। আজ আমরা শিক্ষার্থীদের ভালো সাড়া পেয়েছি। সম্ভবত এই ক্যাম্পেইন সপ্তাহব্যাপী দেশের বিভিন্ন স্থানে চলবে।’
এর আগে, মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণে জরিপ শুরুর ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি লেখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন একসময় দুই সহস্রাধিক প্রাণের বিনিময়ের গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়, যার নেতৃত্বে ছিল বাংলাদেশের বিপ্লবী ছাত্র-তারুণ্য। সেই তরুণরাই গঠন করতে যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দল। সেই দল গঠনে আমরা জানতে চাই ছাত্র সমাজের প্রত্যাশা। ছাত্রসমাজের মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়েই গঠন করা হবে নতুন রাজনৈতিক দল। সেই লক্ষ্যে আমরা শুরু করেছি, আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ নামে ক্যাম্পেইন।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর মতামত আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনারা মতামত দিন। আপনার মতামতের ভিত্তিতেই গঠিত হবে আপনার আকাঙ্ক্ষা ধারণকারী নতুন রাজনৈতিক দল।’