শহীদ পরিবার তার ন্যায্য দাবি-দাওয়া থেকে বঞ্চিত। শহীদদের বিচার হচ্ছে না। বিচার নিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা করছে। কিন্তু আজ নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মরিয়া হয়ে উঠেছে। ঐক্য হবে, সংস্কার হবে, নির্বাচন হবে; কিন্তু আগে প্রত্যেকটা হত্যাকাণ্ডের বিচার বাংলার জমিনে দৃশ্যমান হতে হবে। এর আগে কেউ নির্বাচনের কথা মুখে আনবেন না। সোমবার (২৪ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটির ব্যানারে ‘জুলাই-২৪ এর গণহত্যার বিচার ত্বরান্বিত করা এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে’ আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
মানববন্ধনে শহীদ শাহরিয়ার হাসানের বাবা আবুল হাসান বলেন, শহীদ পরিবার তার ন্যায্য দাবি-দাওয়া থেকে বঞ্চিত। শহীদদের বিচার হচ্ছে না। বিচার নিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা করছে। ট্রাইব্যুনাল নামের বিভিন্ন রঙ্গমঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বিচারের নামে আমাদের ঘুম পাড়ানোর গান শোনাচ্ছে। আট মাস পরেও সন্তানদের বিচারের জন্য কেন আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হবে?
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করতেছেন। আমি মনে করি, এই শহীদদের বিচার না হওয়ার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে— প্রথম হচ্ছে আপনারা তাদের সঙ্গে (আ. লীগ) নেগোসিয়েশন করেছেন। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, আপনারা হয়তো প্রচুর টাকা খেয়ে ঘুমিয়ে আছেন। কিন্তু আমাদের তো ঘুম হচ্ছে না।
শহীদ আহনাফের মা জারতাজ পারভীন বলেন, আমাদের সন্তান হত্যার বিচার এ সরকার এখনও করতে পারেনি। এ সরকারের অনেকেই পা চাটা। আপনারা এই ৮ মাসে গদিতে বসে শুধু টাকা ইনকাম করেছেন। একটা সন্তান হত্যারও বিচার করেননি। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে— তাদের একজনেরও যদি ফাঁসি দিতেন, ভাবতাম আপনারা আমাদের সরকার। আপনারা আমাদের সরকার না। আপনারা বসেছেন গদিতে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য। ভোগ বিলাসিতা করার জন্য।
শহীদ সায়েমের মা শিউলী আক্তার বলেন, আমাদের ছেলেদের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনও নির্বাচন হবে না। আমাদের ছেলের রক্তের সঙ্গে কীভাবে বেঈমানি করেন? কোনও বেঈমানি করা যাবে না। আপনারা কী করে বলেন, স্বৈরাচার সরকার আওয়ামী লীগকে এ দেশে আনার জন্য, কী করে পারেন নির্বাচন করার জন্য? আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে দেন। এসময় আগে বিচার করে এরপর সংস্কার করে তারপরে নির্বাচন আয়োজন করার দাবিও জানান তিনি।
জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটির চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, আমাদের সন্তানদের বিনিময়ে যেসব উপদেষ্টারা মসনদে বসে আছেন, তাদের পরিষ্কার বলতে চাই, এই সরকারের আমলেই যদি বিচারকার্য করতে না পারেন, তাহলে নির্বাচন দিয়ে দেন। আর অন্তর্বর্তী সরকার যদি পারে তাহলে আমাদের কাছে বলতে হবে এতটুকু অগ্রগতি করেছি বিচারের জন্য। আমরা যেভাবে আপনাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি আপনারা কোনও সম্মান আমাদের করেননি।
এসময় মানববন্ধনের আন্দোলনে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে স্মারকলিপি দিতে তারা উচ্চ আদালতের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান।