লালমনিরহাটে হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত বাবা ও ছেলেকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগ তুলে মারধরের পর পুলিশের কাছে সোপর্দ করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির বলেন, “গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২০ জুন) লালমনিরহাটের পাটগ্রামে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ তুলে একদল মানুষ ৬৬ বছর বয়সী পবন চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে মারধর করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। ঘটনার পূর্বে স্থানীয় একটি মসজিদের মাইক থেকে উসকানিমূলক ঘোষণা দেওয়া হয়।”
আসক মনে করে, ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ধর্মীয় স্বাধীনতা ও আইনের শাসন রক্ষাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কোনও অভিযোগ থাকলে তা প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগতভাবে ‘মব জাস্টিস’ প্রতিষ্ঠা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি কেবল আইনের শাসনকেই ক্ষুণ্ন করে না, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকেও হুমকির মুখে ফেলে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ধর্মীয় অবমাননার মতো স্পর্শকাতর অভিযোগে নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রমাণভিত্তিক বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। অপরাধ প্রমাণের আগে অভিযুক্তদের সামাজিকভাবে হেয় করা, নিপীড়নের শিকার করা বা সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়া ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।
আসক আরও উল্লেখ করে, অতীতেও এ ধরনের ঘটনার পর যথাযথ বিচার না হওয়ায় এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি সমাজে আতঙ্ক তৈরি করছে এবং আইনের শাসনের প্রতি জনআস্থা নষ্ট করছে।
সংস্থাটি আরও দাবি করেছে, এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে হবে এবং ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। পাশাপাশি, যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মিথ্যা প্রচারণা, উসকানি বা সংঘবদ্ধ সহিংসতায় যুক্ত, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে।