X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ইউজিসির অর্থ বরাদ্দ থাকলে ভালো হতো

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
০২ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:৩৬আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ১৬:১০

বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অর্থ বরাদ্দ থাকলে ভালো হতো। আমরা বিভিন্ন সময় এই দাবি তুলেছি। ভবিষ্যতে হয়তো বাস্তবতার আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইউজিসির অর্থ বরাদ্দ পাবে। যা জনবান্ধব হবে এবং সরকারের ‘সবার জন্য শিক্ষা’ এই কথার বাস্তবতাও থাকবে।

বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. নুরল আনোয়ার। তিনি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন।

২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চারটি অনুমোদিত অনুষদ রয়েছে। চট্টগ্রামের দক্ষিণ খুলশীর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় ইউনিভার্সিটির অস্থায়ী ক্যাম্পাস। এরই মধ্যে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে ১০টি বিভাগে অধ্যয়ন করছেন পাঁচ হাজার পাঁচশ শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠানের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরীর কল্পলোক আবাসিক এলাকায় হচ্ছে স্থায়ী ক্যাম্পাস। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষিত সমাজ তৈরিতে ইউনিভার্সিটির চলমান কর্মকৌশল ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. নুরল আনোয়ার।

বাংলা ট্রিবিউন: যুগোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরিতে কি ধরনের ভূমিকা রাখছে পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি?

ড. মো. নুরল আনোয়ার: আধুনিক জ্ঞান ও যুগোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। শিক্ষার্থীদের দক্ষ, সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশ এবং শিক্ষা কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে প্রতিনিয়ত নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি আমরা। আজকের শিক্ষার্থীরা যাতে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে পারেন সেভাবে তৈরি করছি তাদের। আধুনিক কর্মকৌশল ও যুগোপযোগী শিক্ষা পাচ্ছেন বলেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আস্থা বেড়েছে আমাদের ওপর। বর্তমানে ১০ বিভাগের ৯টিতে ডিগ্রি প্রদান অব্যাহত আছে। পাঁচ হাজার পাঁচশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। আগামী দিনে শিক্ষার্থী আরও বাড়বে। 

বাংলা ট্রিবিউন: বছর বছর শিক্ষার্থী বাড়ছে, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরও বিভাগ বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে কিনা?

ড. মো. নুরল আনোয়ার: বর্তমানে পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, জার্নালিজম, ইংরেজি, আইন, কম্পিউটার সাইন্স, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি ও ন্যাচারাল সাইন্স বিভাগ আছে। ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি নতুন বিভাগ খোলার পরিকল্পনা আছে। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নুরল আনোয়ার

বাংলা ট্রিবিউন: শিক্ষার্থী বাড়লে সেক্ষেত্রে ক্যাম্পাস বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে কিনা?

ড. মো. নুরল আনোয়ার: খুলশী থেকে বড় পরিসরে নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব নতুন একটি ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হওয়ার অপেক্ষায় আছি আমরা। কল্পলোক আবাসিক এলাকায় ক্যাম্পাস নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত। সেখানে এক একরের সমান জায়গা কেনা আছে আমাদের। ১০তলা ভবনের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্ল্যান পাস হয়েছে। ২৪ কোটি টাকা সিডিএকে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, স্থায়ী ক্যাম্পাস সেখানেই স্থানান্তরিত হবে। সেখানে ক্যাম্পাসের পরিধি বর্তমানের চেয়ে বড় হবে। তবে খুলশীর ক্যাম্পাস পুরোপুরি সরানো হবে না। কিছু স্থাপনা হয়তো থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য স্থাপনাকে পূর্ণতা দেবে নতুন ক্যাম্পাস।

বাংলা ট্রিবিউন: মানসম্মত শিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে আপনারা কেমন কর্মকৌশল অনুসরণ করছেন?

ড. মো. নুরল আনোয়ার: দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে আমরা সবসময় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছি। নানাবিধ কর্মকৌশলের মাধ্যমে তাদের গড়ে তুলছি। নিয়মিত ক্লাসের ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি একাডেমিক ক্লাসের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। যাতে ক্লাস মিস না হয়। ক্লাসের উপস্থিতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ওপর আমাদের নজর থাকে। পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা, আচরণবিধির ব্যাপারে আমরা কঠোর। আমাদের ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত। আমাদের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ইতিবাচক ফল দিচ্ছে। ফলে মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করতে পারছেন আমাদের শিক্ষার্থীরা। 

বাংলা ট্রিবিউন: পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ আছে কিনা?

ড. মো. নুরল আনোয়ার: সরকারি রাজস্ব ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় খরচ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই আসে। সে তুলনায় কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনায় খরচ বেশি নয়। মুনাফার জন্য নয়; জ্ঞান বিতরণের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়েছি আমরা। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনেক ছাড় দিই। বিভিন্ন ধরনের ফি মওকুফ করা হয়। যাদের আর্থিক সামর্থ্য নেই তারা যেন ভর্তি হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন সে ব্যবস্থা রেখেছি আমরা। জিপিএ-৫ পাওয়া কোনও কোনও শিক্ষার্থীকে বিনা ফি-তে পড়াই। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একসঙ্গে সব ফি গ্রহণ করি না। ধাপে ধাপে সেশনভিত্তিক ফি গ্রহণ করি। যাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর চাপ সৃষ্টি না হয়। বছরে তিন কোটি টাকা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি। এরপরও শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি ফি ধার্য করিনি। সবকিছু সমন্বয় করে চলতে হয় আমাদের।’

বাংলা ট্রিবিউন: কি ধরনের পদক্ষেপ নিলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার খরচ কমবে?

ড. মো. নুরল আনোয়ার: দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সেইসঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারিভাবে হয়। অবকাঠামো উন্নয়ন ও যাবতীয় খরচ সরকার বহন করে। শিক্ষার্থীদের সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। যার কোনোটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। ফলে খরচ একটু বেশি হওয়া স্বাভাবিক। খরচ কমাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থ বরাদ্দ থাকলে ভালো হতো। আমরা বিভিন্ন সময় এই দাবি তুলেছি। ভবিষ্যতে হয়তো বাস্তবতার আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইউজিসির অর্থ বরাদ্দ পাবে। যা জনবান্ধব হবে এবং সরকারের ‘সবার জন্য শিক্ষা’ এই কথার বাস্তবতাও থাকবে। তখন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচটা কমে যাবে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
উত্তাল চুয়েট, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা