X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘বিশ্বজিৎ’ শব্দটি উত্তেজিত করে তোলে তাদের!

জাকিয়া আহমেদ
০৭ আগস্ট ২০১৭, ২১:৫৩আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০১৭, ১০:১১

মিটফোর্ড পুরান ঢাকার দরজি দোকানি বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে ওই সময়কার ভিডিও ফুটেজের কোনও মিল নেই বলে আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। এরপর এ বিষয়ে বিশ্বজিতের মরদেহের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মিটফোর্ড হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মাকসুদুর রহমানের বক্তব্য জানতে সোমবার (০৭ আগস্ট) হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকদের তোপের মুখে পড়তে হয় এ প্রতিবেদককে। নানাভাবে হেনস্থা করেন ফরেনসিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. বেলায়েত হোসেন খান ও তার সহকর্মীরা।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে বিশ্বজিৎ দাসকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনের চ্যানেলে এই হত্যাকাণ্ডের যে ফুটেজ দেখানো হয় তার সঙ্গে একেবারেই বেমানান এই হত্যা মামলায় আদালতে দায়ের করা বিশ্বজিতের মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন। মামলার  পর্যবেক্ষণে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার এসআই ও হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

ডা. মাকসুদুর রহমানের কক্ষ রায়ে ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠার পর বক্তব্য জানতে রবিবার (৬ আগস্ট) ডা. মাকসুদুরকে ফোন করা হয়। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘ফোনে কথা বলবো না। আগামীকাল (সোমবার) অফিসে আসেন, কথা হবে।’ এরপর থেকেই তার ফোন বন্ধ ছিল। সেই অনুযায়ী সোমবার হাসপাতালে গেলে ফরেনসিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. বেলায়েত হোসেন খান এ প্রতিবেদকের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত ও রাগান্বিত হয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি কোনোভাবেই এখানে আসতে পারেন না। আপনাকে তথ্য অধিকার মেনে, অ্যাপ্লিকেশন করে তারপর আসতে হবে।’ ডা. বেলায়েত হোসেন তার কক্ষে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে সহকর্মীদের নিয়ে এ প্রতিবেদকের ওপর চড়াও হন।

ঘটনার সময় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ধারণ করা ভিডিওচিত্রে বিশ্বজিতের ওপর এমন নৃশংস হামলার দৃশ্য দেখা গেলেও মিডফোর্ড হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা বিশ্বজিতের মরদেহে এসব রড-লাঠি-ধারালো অস্ত্রের কোনও আঘাতই খুঁজে পাননি। ধরা পড়েনি কিল-ঘুষি ও লাথির জখমও। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. মাকসুদুর রহমান বিশ্বজিতের শরীরে ধারালো অস্ত্রের মাত্র একটি আঘাতের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তার দেওয়া এ প্রতিবেদনের নম্বর ৪৬৭/১২। রিপোর্ট তৈরির তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২। রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, পিঠের ডান পাশে ৩ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও দেড় ইঞ্চি প্রস্থের একটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বাম পা থেঁতলে গেছে। মৃত্যুর কারণ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। এর বাইরে আর কোনও তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

ডা. বেলায়েত হোসেনের কক্ষ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে কথা বলতে মিটফোর্ড গেলে ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাকুসুদুর রহমান ছুটিতে আছেন বলে জানানো হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. বেলায়েত হোসেন খানের কক্ষে গেলে তিনি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন এবং এ প্রতিবেদককে নানাভাবে হেনস্থা করেন। তবে প্রথমে তিনি এ প্রতিবেদককে তার কক্ষে ঢুকতে দিতেই রাজি হননি। বাইরে থেকে কিছুক্ষণ কথা বলার পর অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকলে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন তার কক্ষভর্তি মানুষ নিয়ে নানাভাবে আক্রমণাত্মক কথা বলেন। বিশ্বজিতের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ছুটিতে থাকার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ছুটিতে থাকার বিষয়টি তার জানা নেই।

বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তার এটি জানার কথা বললে তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘আমি কি আপনাকে বলেছি উনি ছুটিতে আছেন? আমি তো আপানাকে বললাম তিনি কলেজের ভেতরেই কোথাও রয়েছেন। আপনি কেন বারবার একই প্রশ্ন করছেন? আর ছুটির বিষয়টি আমার জানা নেই।’

বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. মাকসুদের সঙ্গে কথা বলতে চাই জানালে অধ্যাপক বেলায়েত তাকে হাইকোর্টের রায় শোনাতে বলেন। ভিডিও ফুটেজ এবং ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের প্রতিবেদনে মিল নেই জানালে কক্ষে থাকা আরেকজন উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘ভিডিওফুটেজ বলতে আপনি কোনটা মিন করছেন, যেটা টিভিতে দেখা যায়, সেটি?’ এসময় হ্যাঁ উত্তর দিলে বিভাগীয় প্রধান উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আপনাকে এসব বিষয়ে জানতে হলে তথ্য অধিকার আইন মেনে আসতে হবে, কিসের ভিত্তিতে আপনি এখানে এসেছেন? সঠিক প্রসেস মেনে আসেন, হাইকোর্টের রায় নিয়ে আপনি কী তদন্ত করবেন?’ এ সময় তিনি বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষের মোবাইল ফোন নম্বর চেয়ে আরেক দফা দুর্ব্যবহার করেন। 

বেলায়েত হোসেনের কক্ষে ওই সময় বেশ কয়েকজন আগে থেকেই ছিলেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে তিনি উচ্চস্বরে কথা বলার সময় আরও কয়েকজন কক্ষটিতে ঢুকেন। তারা এ প্রতিবেদকের চারিদিকে ঘিরে বসেন এবং নানা ধরনের  আক্রমণাত্মক কথা বলতে থাকেন। এক সময় ডা. বেলায়েত বলেন, ‘এই কক্ষে যারা আছেন, তারা কেউ ডা. মাকসুদ নন, কাজেই আপনি এখন আসতে পারেন।’

/জেএ/এএম

 

আরও পড়ুন:

হাসপাতালে থেকেও বিশ্বজিতের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বললেন, আমি ছুটিতে!

ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে ময়নাতদন্তের কোনও মিল নেই: হাইকোর্ট

বিশ্বজিৎ হত্যা: তদন্ত কর্মকর্তা ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে দুই শ্রমিকের মৃত্যু
সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে দুই শ্রমিকের মৃত্যু
একবছরের জন্য ঘোষিত চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি সাড়ে ৫ বছর পর বিলুপ্ত
একবছরের জন্য ঘোষিত চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি সাড়ে ৫ বছর পর বিলুপ্ত
পেঁয়াজ চুরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন
পেঁয়াজ চুরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি