X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

‘সাংবাদিকদের প্রয়োজন সহযোগিতা’

হাসনাত নাঈম
১২ আগস্ট ২০১৮, ২০:১৬আপডেট : ১২ আগস্ট ২০১৮, ২০:৩৪

সাংবাদিক নাসিমা খান মন্টি। দীর্ঘদিন যাবত কাজ করছেন মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে। বর্তমানে আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। অর্থনীতি বিষয়ক কোনও সংবাদমাধ্যমে এই প্রথম কোনও নারী সাংবাদিক সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। বেশ স্বাচ্ছন্দের সঙ্গেই কাজ করে যাচ্ছেন। ঘর, সংসার, সন্তান এবং অফিস এক হাতে সামলাচ্ছেন। এই কর্মোদ্দীপক নারী বাংলা ট্রিবিউনকে জানালেন তার অভিজ্ঞতার কথা।  ‘সাংবাদিকদের প্রয়োজন সহযোগিতা’

আপনার সাংবাদিকতার শুরুর গল্পটা জানতে চাই

নাসিমা খান মন্টি: মূলত ছাত্রজীবন থেকে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘উইম্যান অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজে’ মাস্টার্স করেছি ২০০০ সালে। তখন আমি সংবাদমাধ্যমে নারীদের অবস্থান নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলাম আমার মার্স্টাসের ডিসারটেশনের জন্য। এজন্য আমাকে সংবাদপত্রে নারী বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন পড়তে হয়েছে। তখন থেকে আমার সংবাদ মাধ্যমের ব্যাপারে আগ্রহটা বাড়ে। আর ঘরের ভিতর থেকেও উৎসাহটা আসে। এরপর ২০০৫ সালে আমি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া’তে মাস্টার্স করার সময়ও আমি সিনে ম্যাগাজিনে নারীদের অবস্থান ও উপস্থাপন নিয়ে একটা গবেষণা করেছি। পাশাপাশি নারীদের নিয়ে আমি কিছু লেখালেখিও করি। ‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজম’ থেকে গণমাধ্যম বিষয়ে কিছু প্রশিক্ষণও নিয়েছি। এভাবেই মূলত আমার সাংবাদিকতায় আসা। পরবর্তীতে দেশে-বিদেশে বেশ কিছু প্রশিক্ষনেও অংশ নিয়েছি।

১৮-২০ বছরের অভিজ্ঞতায় আজ আপনি সম্পাদক, এই দীর্ঘ সময়ে আপনার প্রতিবন্ধকতা কেমন ছিল?

নাসিমা খান মন্টি: যেকোনও বিষয়ে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে প্রতিবন্ধকতা থাকে। তবে আমার ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ভিন্ন, যেহেতু পারিবারিকভাবেই এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি তাই পরিবার থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি। আমি পেশা হিসেবে সংবাদপত্রে আমার কাজের শুরু দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায়।

এরপর যেহেতু টেলিভিশন সাংবাদিকতায় আমার আগ্রহ ছিলো তাই এটিএন নিউজের শুরুর দিকে সেখানে কাজ করি। সেখানে কাজ করতে গিয়ে আমি কোনো কপ্রোমাইজ করিনি। সেখানে আমি রাতের শিফটেও কাজ করেছি। তবে সেখানে কাজ করার সময়ই আমি বিশেষভাবে লক্ষ করি অনেক নারী সহকর্মীই রাতের শিফট করতে বা বাইরে রিপোর্টিংয়ে যেতে অনীহা। যার মূল কারণ পরিবারের বাধা ও নিরাপত্তাহীনতা। তবে আমি মনে করি কর্মস্থল নারীদের বিষয়ে সহযোগিতামূলক হলে মেয়েরা যে কোনো সময় যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। 

সাংবাদিকতা বিভাগে অনেক মেয়ে পড়েছেকিন্তু পড়াশোনা শেষে তারা অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেএ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?

নাসিমা খান মন্টি: আসলে সাংবাদিকতা একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা। নারী-পুরুষ নির্বিশেষেই এই চ্যালেঞ্জটা আছে। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে  নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। রাতে অফিস করা, বাইরে যে কোনো সময় রির্পোটিংয়ের জন্য যাওয়া, যে কোনো দুর্যোগে বা দুর্ঘটনায় গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করা অর্থাৎ পেশাগত ঝুঁকি ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় নারীদের এই পেশায় কম আসার অন্যতম কারণ। এ ছাড়াও সাংবাদিকতা পেশাটিকে প্রথমত আর্থিকভাবে নিরাপদ মনে করে না অনেকে। তাই হয়তো তারা অন্য পেশার দিকে ঝোঁকে। যদিও এই সমস্যাটা বর্তমানে কমে এসেছে।

‘সাংবাদিকদের প্রয়োজন সহযোগিতা’ পত্রিকা অফিসের সম্পাদকের দায়িত্ব একটি বড় চ্যালেঞ্জের জায়গাসেই সঙ্গে আপনার একটা পরিবার আছেসব মিলিয়ে আপনি কীভাবে সামলে নেন?

নাসিমা খান মন্টি: আসলেই এটা একটা চ্যালেঞ্জের জায়গা। সকালে অফিসে এসে রিপোর্টারদের সাথে মিটিং, তারপর আজকের পত্রিকায় কোন কোন বিষয় মিস করলাম এটা দেখা। বিকেলে নতুন কোনও ব্রেকিং হলো কিনা সেটা দেখা। মূলত প্রথম এডিশন প্রিন্ট হওয়া পর্যন্ত একটা বড় চাপের মধ্যে থাকতে হয়। এ ছাড়াও বাচ্চাদের দেখাশোনাসহ বাসার কাজও করতে হয়। সবমিলিয়ে একটা রুটিনের মধ্যে চলতে হয়। রুটিন ফলো করলেই আর সমস্যা হয় না। তবে নিজের পরিশ্রম করার মানসিকতাও থাকতে হয়। সময়কে ভাগ করে নিয়ে চলতে হয়। অফিসের কাছাকাছি বাসা হওয়ায় অনেকটা সুবিধা হয়েছে। সময়গুলোকে সহজে ভাগ করে নিয়ে সব কাজ সহজেই করতে পারি।

আপনার সম্পাদকীয় নীতি সম্পর্কে জানতে চাই

নাসিমা খান মন্টি: সম্পাদকীয় নীতিতে আমি শ্রদ্ধেয় আমাদের নতুন সময় পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানকে অনেকটা অনুসরণ করি এবং অনুপ্রেরণা নেই। আমার সাংবাদিকতার উত্থান তার পরিচর্যাতেই। তাই তাকেই অনুসরণ করি। পাশাপাশি নিজেরও অনেক সংযোজন আছে। তবে আমরা যেন দেশ ও জনগণ পরিপন্থী না হই, সেটিই আমাদের মূল নীতি। 

আপনার সাথে যারা পুরুষ সহকর্মীরা আছেন, তাদের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পান?

নাসিমা খান মন্টি: হ্যাঁ, তারা অনেক সহযোগিতা করেন। আমার প্রতিষ্ঠানে যারা আছেন, তাদের সবার সহায়তায় আমি এই অবস্থানে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছি।  তারা পাশে না থাকলে তো সফলতা সম্ভব হতো না।

দশ বছর পর সাংবাদিকতায় নারীদের কোথায় দেখতে চান?

নাসিমা খান মন্টি: অবশ্যই ভালো একটা অবস্থানে দেখতে চাই। যদিও সংবাদ মাধ্যমের বড় বড় পর্যায়ে নারীর সংখ্যা বর্তমানে কম কিন্তু একটা সময় তা বাড়বে। নারীরা ঘরে বাইরে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই নারীরা ভবিষ্যতে আরও ভালো অবস্থা গড়তে পারবে। এক গবেষণায় দেখেছি, কর্মজীবী নারীদের সন্তানেরা পড়াশোনায় ভালো হয়। সেটা কিন্তু সত্যিই আমাদের দেশে এখন হচ্ছে। 

গণমাধ্যম নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

নাসিমা খান মন্টি: আমরা চিন্তা করছি এবং চেষ্টাও শুরু করেছি এমন একটা মিডিয়া প্রতিষ্ঠান করতে যেখানে শতভাগ না হলেও ৮০ ভাগ নারী নিয়ে কাজ করতে।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন।

/এফএএন/
সম্পর্কিত
বাংলা ট্রিবিউনকে আমির খসরু মাহমুদ‘দুই নেতা ছিলেন উষ্ণ, বৈঠক ভবিষ্যৎ রাজনীতি গড়ে তোলার মাইলফলক’
একান্ত সাক্ষাৎকারে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু৭২-এর সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের, দেশের মানুষ ইতিহাসের বিকৃতি মানবে না
সাক্ষাৎকারএকাত্তর ইতিহাস নয়, রাজনৈতিক চর্চায় পরিণত হয়েছে: আফসান চৌধুরী
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক