X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

আ.লীগের কাছেই সন্দেহের তালিকায় খাদ্যমন্ত্রী!

পাভেল হায়দার চৌধুরী
০৯ মার্চ ২০১৬, ০৪:০২আপডেট : ০৯ মার্চ ২০১৬, ০৪:১২

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সন্দেহের তালিকায় উঠে এসেছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। মীর কাসেমের বিচার নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে জড়িয়ে তিনি কেন বিতর্কিত মন্তব্য করতে গেলেন, সে উত্তর খুঁজছেন সবাই।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য করে ঘরে-বাইরে সমালোচিত হয়েছেন কামরুল। এ ই্স্যুতেই তিনি নেতাকর্মীদের সন্দেহের তালিকায় উঠে এসেছেন। শুধু তাই নয়, মানবতাবিরোধী বিচার নিয়ে আইনমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও প্রতিপক্ষ বানিয়ে খাদ্যমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যও গ্রহণ করেনি আওয়ামী লীগের কোনও মহল। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে গত সোমবার মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে সতর্ক করেছেন, এমন খবর প্রকাশ হলে কামরুলের প্রতি দলীয় নেতাদের সন্দেহ-ক্ষোভ আরও তীব্র হয়। দলের অনেক শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রীর মুখ খোলার পরপর খাদ্যমন্ত্রীকে ‘বেনিফিসিয়ারি’ বলেও অভিযুক্ত করতে দ্বিধা করছেন না। আপিল বিভাগের রায়ের আগে সরকারের একজন মন্ত্রী হয়েও মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাসেমকে নিয়ে কেন কামরুল এমন বিতর্কিত বক্তব্য দিতে গেলেন সেই উত্তর খুঁজছেন সবাই।
শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের বক্তব্যে বিশেষ কোনও ‘মিশন’ রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপিল বিভাগের রায়ের মাত্র দিনকয়েক আগে ধুম্রজাল সৃষ্টি করার মতো বক্তব্য খাদ্যমন্ত্রী কেন দিলেন তা তারা ভেবে পাচ্ছেন না। তাছাড়া কামরুলের এ বিষয়ে কথা বলার এখতিয়ারও নেই। তাদের দৃষ্টিতে উচ্চ আদালতের রায়ের আগে তার মীর কাসেম আলীকে নিয়ে দেওয়া তার বক্তব্য অমার্জনীয় অপরাধ। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন শীর্ষ সারির নেতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পরই গম কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলেন কামরুল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ক্ষমা করে দেন। এবার তিনি আরও বড় অপরাধ করেছেন।
ওই দুই নেতা বলেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো বিভিন্ন সময়ে অনেক অপ্রয়োজনীয় কথাও বলেছেন কামরুল, যা সরকারের ও দলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়ে কথা বলে প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আপাতত কথা বলব না আমি। সময় হলে আমি ব্যাখ্যা দেব।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম যা বলেছেন, এটা সরকারের কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তা পরিষ্কার করেছেন।’
অতীতের ভুল-শুদ্ধ নিয়ে কাউকে কোনও কথা না বলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করবে এটাই জাতির প্রত্যাশা।’ সব বিষয়ে সবাইকে কথা চালাচালি না করারও পরামর্শ দেন হানিফ।
জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘দায়িত্বশীল সবাইকে আরও দায়িত্বান হতে হবে। যে কোনও বিষয়ে যে কেউ কথা বলবেন, এমন প্র্যাকটিস ঠিক নয়। আমাদের সবাইকে কথার চেয়ে কাজের প্রতি আরও যত্নবান হতে হবে।’
উল্লেখ্য, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মীর কাসেম আলীর আপিল পুনরায় শুনানির দাবি জানিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। গত শনিবার (৫ মার্চ) এক গোলটেবিল আলোচনায় খাদ্যমন্ত্রী এ দাবি জানান। ওই অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্য আদালতে বলছেন, প্রসিকিউশন এবং তদন্তটিমকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিৎ। প্রসিকিউশন মামলা নিয়ে রাজনীতি করছে। তার বক্তব্যে এই মামলার রায় কী হবে আমি অনুধাবন করতে পারছি। এই মামলায় আর মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, আমি যেটা বুঝেছি, প্রধান বিচারপতি এ থেকে বের হতে পারবেন না। হয় খালাস দিতে হবে, না হয় সাজা কমিয়ে দিতে হবে অথবা মামলা পুনর্বিচারে পাঠাবেন। আর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে লোকজন বলবে সরকার চাপ দিয়ে এটি করিয়েছে।
তার এ বক্তব্য নানা মহলে সমালোচনার ঝড় তোলে। মীর কাশেম আলীর কী হবে এ নিয়ে সন্দেহ-সংশয় দানা বাঁধে সর্বস্তরের মানুষের মনে। আওয়ামী লীগের ভেতরেও চরম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মীর কাশেম আলীর রায়ের আগে কামরুল ইসলামের এ বক্তব্যের হেতু খুঁজতে থাকেন দলের নেতারাই। মীর কাসেম আলীর রায় কী হবে এমন অনিশ্চয়তা নিয়ে অপেক্ষা করতে হয় সবাইকে। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার (০৮ মার্চ) আপিল বিভাগ মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেছেন।

 

/এজে/আপ-এমএসএম

সম্পর্কিত
নেত্রকোনায় ঝটিকা মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: অ্যাটর্নি জেনারেল
ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আ.লীগ নেতা বাবাকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ
সর্বশেষ খবর
ইয়েমেনে হুথিদের তিনটি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালালো ইসরায়েল
ইয়েমেনে হুথিদের তিনটি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালালো ইসরায়েল
বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হাসিবের পরিবারের অনুদান না পাওয়ার অভিযোগ
বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হাসিবের পরিবারের অনুদান না পাওয়ার অভিযোগ
কুষ্টিয়াসহ তিন জেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান, অস্ত্র-মাথার খুলিসহ গ্রেফতার ৪
কুষ্টিয়াসহ তিন জেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান, অস্ত্র-মাথার খুলিসহ গ্রেফতার ৪
শেখ হাসিনাকে ‘বাংলার ইয়াজিদ’ বললেন এনসিপি নেত্রী সামান্থা
শেখ হাসিনাকে ‘বাংলার ইয়াজিদ’ বললেন এনসিপি নেত্রী সামান্থা
সর্বাধিক পঠিত
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত 
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত 
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে