X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২

‘কতজনের রক্তের ওপর দিয়ে সরকার ক্ষমতায় যায়, আমরাও দেখবো’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:১৩আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:১৩

বিএন‌পির স্থায়ী ক‌মি‌টির সদস‌্য সে‌লিমা রহমান বলেছেন, আমরা লড়াই করছি জনগণের জন্য, জনগণের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য। এখানে  অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। তিনি বলেন, ‘আপনারাও নেমে আসুন। দেখা যাক, কতজনের জনের রক্তের ওপর দিয়ে বর্তমান সরকার আবারও ক্ষমতায় যায়, আমরাও দেখবো। আমরাও বুকের রক্ত দিয়েছি।’

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর)  জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিরোধী দলগুলোর কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ও প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ শীর্ষক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি। মানববন্ধনের আয়োজন করে কারাবন্দিদের আত্মীয়-স্বজনরা।

সেলিমা রহমান বলেন, ‘আপনারা জানেন, একটা ফ্যাসিস্ট সরকার কীভাবে নারকীয় ও দানবীয় তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে। তাদের দুঃশাসনের চিত্র আপনারা দেখছেন। আপনারা আজকে অনেক মা, বাবা, সন্তানদের কাঁদতে দেখেছেন। কিন্তু এই সরকার তার ক্ষমতার শাসন, তার সিংহাসন ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে বিরোধী দলের— যারা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছে, তাদেরকে সমানে কারাগারে নিচ্ছে।’ 

সরকার ষড়যন্ত্রের খেলা খেলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তারা আজকে অনেক রকম ষড়যন্ত্রের খেলা খেলছে। আমার কাছে একটু আগে আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর মেসেজ পাঠিয়েছেন। তিনি (শাহজাহান ওমর) বলেছেন— তিনি এবং তার পরিবার সরকারের চাপে রয়েছেন। সরকারের কিংস পার্টি,  বিএনএম পার্টি হয়েছে, সেখানে যোগদান করার জন্য তার পরিবারের ওপর এবং কারাগারে তাকে ভীষণভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা কেউ রাজি হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের পর আমাদের ২০ হাজারের মতো নেতাকর্মী কারাগারে আটক আছেন। তাদের পরিবার আজকে করুণ অবস্থায় আছে। এ দেশে সুশাসন ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের মানুষ বর্তমানে এক অসহনীয় পরিস্থিতিতে আছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায়— এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করা।’

সভাপতির বক্তব‌্য জাতীয়তাবা‌দী ম‌হিলা দ‌লের সভাপ‌তি আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।  ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছেলেরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেও হার মানিয়েছে। স্বাধীন দেশে ভোটের অধিকার চাইতে যাওয়াই কি অপরাধ?  এই লড়াই একার লড়াই না। এই লড়াই সমগ্র দেশের মানুষের লড়াই। দেশের গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে হলে সম্মিলিতভাবে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।’

নাগ‌রিক ঐক্যে‌র সভাপ‌তি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘পুলিশ যাকে গ্রেফতার করতে যায়, তাকে না পেলে তার স্বজনদের ধরে নিয়ে যায়। এরা মানুষের কষ্টে আনন্দ পায়। এই দেশের ক্ষমতায় যারা বসে আছেন তারা পাষান, তাদের হৃদয় পাথর। আপনারা প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দেবেন, ওনার কিছু করবার আছে বলে মনে হয় না। হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার আছে, তাদের স্বজনরা একযোগে রাস্তায় আসলেই তো হয়ে যায়। এই নির্বাচন নির্বাচন নয়। চলুন, আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে লড়াই করি, দৃঢ় চিত্তে বিজয় ছিনিয়ে আনি।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘সাজানো ফরমায়েশি মামলায় গ্রেফতারকৃতদের স্বজনরা মানবিক দাবি নিয়ে এখানে এসেছেন। কোনও সুস্থ মানুষের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব না। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দেশে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজার পরিবর্তে বাংলাদেশে এখন মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে সরকার। পুলিশ যেভাবে কোনও কারণ ছাড়াই গ্রেফতার করছে, তাতে মনে হয় পুলিশ সরকারের অঙ্গ সংগঠন। বিচার ব্যবস্থা তো আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন না। তাহলে সেভাবে আপনারা বিচার কার্য পরিচালনা করেন, কোনও পক্ষপাতিত্ব ছাড়া। এই সরকার ঘরে ঘরে যুদ্ধ লাগিয়ে দিতে চাচ্ছে। গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এই সরকার। পুলিশ ভাইদের বলি, আপনারা সরকারের  অঙ্গসংগঠনের মতো ব্যবহার করবেন না। পুলিশি  ত্রাস বন্ধ করার জন্য আপনারা হাইকোর্টের রুল-জারি করতে পারেন।’

গণসংহ‌তি আ‌ন্দোল‌নের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে যারা কারাগারে বন্দি আছেন, তাদের স্বজনরা বিচার চাইতে এসেছে। ২৮ তারিখের সমাবেশে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা সৃষ্টি করা হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে গ্রেফতারকৃতদের নির্যাতন করা হচ্ছে। নিম্ন আদালত কারও জামিন দিচ্ছেন না। প্রধান বিচারপতি স্বৈরাচারী সামরিক শাসন দেখেছেন। আমরা আপনার কাছে বলতে চাই, আদালত একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, জনগণের শেষ ভরসা। আপনি বিচারপতিদের নির্দেশ দেন— তারা যেন ন্যায়বিচার করেন। দমন পীড়ন করে এই সরকার একটা একতরফা নির্বাচন করতে চাইছে। আপনার আদালতে যদি ন্যায়বিচার না হয়, তাহলে জনগণের আদালতের বিচারে আপনারা কেউ পার পাবেন না। কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা পুরো বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করছে। কতিপয়রা হুঁশিয়ার হয়ে যান।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আ ফ ম ইউসুফ হায়দার বলেন, ‘সরকারকে বলবো, এই নির্যাতিত পরিবারের কথা শুনুন। আমার অনুরোধ এবং দাবি— এই মিথ্যা মামলায় যাদেরকে জড়িয়ে রেখেছেন, অতিসত্বর তাদেরকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন।’

গণঅধিকার প‌রিষ‌দের সভাপ‌তি নুরুল হক নূর বলেন, ‘আমার ছোট্ট শিশুটিও পুলিশের আচরণ দেখেছে, এখন পুলিশ দেখলেই ভয় পায়। শেখ হাসিনা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অভিশপ্ত বাংলাদেশ তৈরি করছে। পুলিশ যে আচরণ করছে, এদের বিচার হবে। বিচারপতিদের বলি— এই সরকারের অবৈধ আদেশ পালন করে জনগণের রোষানালে পড়বেন না। আরেকটু ধাক্কা দিলেই এই সরকার পড়ে যাবে। আমাদেরকে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। দেশটাকে এই সরকার এতিম প্রজন্ম বানিয়েছে।’

সমাবেশকারীরা মানববন্ধন শেষে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির  কাছে স্মারকলিপি দিতে যান।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপ‌তি‌ত্বে মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন— সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, বিএনপি নেত্রী আসিফা আশরাফী পাপিয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার, সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম। এছাড়া আটক বন্দিদের স্বজনরা উপস্থিত ছি‌লেন।

নির্যাতিত পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন— ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মনিরের স্ত্রী  শায়লা জামান, জেলখানায় নিহত আবুল বাশারের স্ত্রী, গুম হওয়া পল্টন যুবদলের নেতা রাজীব ও কারাবন্দি লিয়ন হকের বড় বোন আফরোজা পারভীন জেবা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীর স্ত্রী শিউলী বেগম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আআহ্বায়ক ইউনুস মৃধার মেয়ে আনিতা, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহাজাহানের স্ত্রী রহিমা জাহান মায়া, বিএনপি চেয়ারপারসনের  উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের স্ত্রী  শাহনারা মায়া, সাতক্ষীরার বিএনপি নেতা হাবিবুর ইসলাম হাবিবের স্ত্রী শাহানা ইসলাম, ছাত্রনেতা আমানউল্লাহ আমানের ভাতিজি মার্জিয়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামের শিশু পুত্র সিয়াম, বিএনপি নেতা এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী রাজিয়া, মির্জা আব্বাসের  ছোট বোন শাহিদা মির্জা, ছাত্রদল নেতা আব্দুর রহিম, আব্দুল হামিদ ভূইয়ার পিতা আব্দুল হাই ভূঁইয়া প্রমুখ।

/এএজে/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব, প্রধান শিক্ষকের চেয়ার ঝুলছে গাছে
নীতি প্রণয়নে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে বিএনপির কর্মসূচি শুরু শুক্রবার
‘বিচার বিভাগে ফ্যাসিবাদের পক্ষে যারা ছিলেন, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে’
সর্বশেষ খবর
কালীগঞ্জে ৪ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন, চার ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে
কালীগঞ্জে ৪ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন, চার ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার আইভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার আইভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
তিন শিক্ষক আর পাঁচ শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে সরকারি বিদ্যালয়
তিন শিক্ষক আর পাঁচ শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে সরকারি বিদ্যালয়
রাতে সমাধান হয়নি, যমুনার সামনে বিক্ষোভ অব্যাহত
রাতে সমাধান হয়নি, যমুনার সামনে বিক্ষোভ অব্যাহত
সর্বাধিক পঠিত
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
দেশ ছেড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
দেশ ছেড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার
নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম