X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

জানুয়ারিতে জামায়াতের নতুন আমির!

সালমান তারেক শাকিল
২২ জুলাই ২০১৬, ১৪:০২আপডেট : ২২ জুলাই ২০১৬, ১৪:০৩

জামায়াতে ইসলামী

প্রায় ১৫ বছর পর কেন্দ্রীয় আমির নির্বাচনে যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াতে ইসলামী। আগামী সাতদিনের মধ্যে আমির নির্বাচনে তিনজনের একটি প্যানেল বাছাই করে এক মাসের মধ্যে আমির নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এরপর আগামী জানুয়ারিতে (২০১৭) আনুষ্ঠানিকভাবে আমিরে জামায়াতের নাম ঘোষণা করবে দলটি।

গত শনিবার বিকাল থেকে মধ্যরাত অবধি কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সঙ্গে সেক্রেটারি জেনারেলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় জামায়াত। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ, মজলিসে শূরা ও কেন্দ্রীয় শীর্ষনেতাদের সহচরদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে গোলাম আযমের উত্তরসূরী হিসেবে নিজামী জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে দায়িত্ব পান। এর তিন বছর পর ফের আমির হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ২০১০ সালের ২৯ জুন একটি মামলায় মতিউর রহমান নিজামী গ্রেফতার হওয়ার পর নায়েবে আমির মকবুল আহমাদ ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পান। ২০১১ সালের জুনে তার আমিরের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। চলতি বছরে আমির নির্বাচন সম্পন্ন হলে প্রায় ছয়বছর পর নির্বাচিত আমির পাবে জামায়াত।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার দায়িত্বশীল সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত শনিবারের বৈঠকের পর থেকে আমির নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করে জামায়াত। প্রথমে গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী সারাদেশে ৩৭ হাজার রুকনদের (শপথগ্রহণকারী)মধ্য থেকে পরামর্শ করে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা তিনজনের একটি প্যানেল নির্বাচন করবে। তবে আমির নির্বাচনের ক্ষেত্রে রুকনরা প্যানেলের বাইরে থেকে রুকনদের মধ্য থেকেও ভোট দিতে পারবেন। জামায়াতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেতা হওয়ার নিয়ম নেই বলে রুকনদের ভোট থেকে প্যানেল হবে।

শূরাসূত্র জানায়, আগামী সাতদিনের মধ্যে মজলিসে শূরা (সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৮৫) পরামর্শক্রমে তিনজনের প্যানেল নির্বাচন করবে। এরপর এক মাসের মধ্যে সারাদেশের রুকন-ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়ে আমির নির্বাচন করবেন।

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও মজলিসে শূরার দুজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আমিরের প্যানেলে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এগিয়ে আছেন। তবে মকবুল আহমাদের বার্ধক্য, অসুস্থতার কারণে সবশেষে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাঈদীর মধ্যে লড়াই চলবে।

জামায়াতের গঠনতন্ত্র থেকে জানা যায়, দলটির আমির নির্বাচনের সময়সীমা তিন বছর। তবে গত বছরের জুনে দলের মুদ্রিত গঠনতন্ত্রের ৫৯তম সংস্করণের ধারা ১৫-এর ৬ এর (ঘ) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, ‘কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বিবেচনায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জামায়াতের আমির নির্বাচন অনুষ্ঠান যদি কিছুতেই সম্ভব না হয়, তা হলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত আমির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অনুমোদন সাপেক্ষে নিজ পদে বহাল থাকবেন।’

 মাওলানা নিজামীর ফাঁসি হওয়ায় আমির ও সেক্রেটারি দুটো পদই খালি রয়েছে। আগেই বাংলা ট্রিবিউন জানিয়েছিল, নিজামীর পরিণতির আগে নেতৃত্ব নির্বাচনে যাচ্ছে না জামায়াত।

শনিবারের বৈঠকে থাকা একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কারাগারে থাকলেও প্যানেলে নির্বাচিত হতে পারেন, এমন কী আমিরও। তবে তাকে আমির করা হলে সরকারের তরফে যে কোনও পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে, এমন সম্ভাবনাও মাথায় রাখছেন জামায়াত নেতারা। পাশাপাশি আইনত কোনও বাধা হবে কী না, এ নিয়েও চিন্তা আছে দলটিতে। ইতোমধ্যে সাঈদীর যাবজ্জীবনের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করেছে সরকার।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের এক সদস্য জানান, সাঈদী আমির নির্বাচিত হলে সরকারের চিন্তা ভিন্নপথে চালিত হতে পারে। ইতোমধ্যে বিএনপিকে ছেড়ে আসতে নানা ধরনের চাপ থাকলেও সাঈদীর বিষয়টিকে ‍তুরুপের তাস হিসেবেই দেখতে পারেন কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের আপিল নিয়েও রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হলে তাজ্জবের কিছুই থাকবে না বলে মনে করেন পেশায় চিকিৎসক এই জামায়াত নেতা।

মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আমির নির্বাচিত হতে পারবেন কী না, এ নিয়ে সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্রে কোনও পরিস্কার ভাষ্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হতে পারে, প্যানেল নির্বাচন হয়ে যেতে পারে। এটা তো বেশি সময়ের কাজ না।

সাঈদীর নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গে মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, এটা তো বলা মুশকিল। কারণ, রুকনরা প্যানেল থেকে ভোট দেবেন। আবার প্যানেলের বাইরে থেকেও দিতে পারেন। ফলে কে হবেন এটা ভোট শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না।

তবে কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের দায়িত্বশীলদের ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। এর বাইরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের দুই ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার তিনজনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হলেও তারা নিজ পরিচয় উদ্ধৃত করতে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য,কেন্দ্রীয়ভাবে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি নেই।

মাওলানা হাবিব জানান, পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে এ বছরের ডিসেম্বর মাস লাগতে পারে।

নির্বাচন পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন ৩ বছর আগেই

এদিকে, আমির নির্বাচনের জন্য প্যানেল নির্বাচন নতুন করে হলেও প্রধান নির্বাচন পরিচালক হিসেবে প্রায় তিনবছর আগেই নিযুক্ত হয়েছেন এটিএম মাসুম। সাবেক নায়েবে আমির অধ্যাপক একে এম নাজির আহমেদ মারা যাওয়ার পর তাকেই নির্বাচন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার দায়িত্বশীল এক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জামায়াতে কেন্দ্রীয় আমিরের সঙ্গে প্যারালালি (সমান্তরালভাবে) নির্বাচন পরিচালক নিয়োগ পান। এক্ষেত্রে সাবেক পরিচালক নাজির আহমেদ মারা গেলে শূন্যপদে এটিএম মাসুদ নিয়োগ পান। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরাই এই পদে দায়িত্বশীল নিয়োগ করে।

সেক্রেটারি জেনারেল ও অন্যান্য নীতিনির্ধারণী কমিটি নির্বাচন যেভাবে

জামায়াত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে নতুন আমিরের কার্যকাল শুরু হবে। প্রথমেই শেষ কেন্দ্রীয় শূরার সদস্যদের নিয়ে প্রথম বৈঠক করবেন নতুন নির্বাচিত আমির। এরপর ফের নতুন শূরার নির্বাচন হবে। সাংগঠনিক জেলাসহ প্রতি ২০০ জন রুকন থেকে একজনকে কেন্দ্রীয় শূরার সদস্য নির্বাচিত হবেন। ওই শূরার সঙ্গে পরামর্শ করে সেক্রেটারি জেনারেল নিয়োগ করবেন আমিরে জামায়াত। জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ২৬ ধারা ২ উপধারায় বলা আছে- ‘আমীরে জামায়াত কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সহিত পরামর্শ করিয়া তাঁহাকে নির্বাচিত করিবেন’।

সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে বিগত ছয়বছরের কর্মতৎপরতা বিবেচনা করে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বশীল ডা. শফিকুর রহমানই এগিয়ে আছেন বলে মনে করেন জামায়াতের একাধিক নেতা।

তাদের ভাষ্য, সিলেটের ডা. শফিকের বিকল্প আপাতত নেই। বিগত বছরে তিনি সাংগঠনিক তৎপরতা দারুণভাবে সম্পন্ন করেছেন। সহিংতাবিরোধী নেতা হিসেবে ইতোমধ্যে দলে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল।

ঢাকার মহানগরীর দুইনেতার দাবি, মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ সেক্রেটারি পদের প্রার্থী হতে চাইলেও ২০১৩,১০১৪ সালে সহিংসতার জন্য তাদের সিদ্ধান্তের সমালোচনা দলের অভ্যন্তরেই আছে।

এছাড়া কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, নায়েবে আমির ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নিয়োগ করবেন আমির। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতেই এসব পদগুলো পূরণ করা হবে।

গঠনতন্ত্রের ধারা-২৩ এর (ক) বলা আছে, ‘আমীরে জামায়াতকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করিবার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক নায়েবে আমীর, একজন সেক্রেটারী জেনারেল, প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল, বিভাগীয় সেক্রেটারী ও অন্যান্য সদস্য সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ গঠিত হইবে’।

একই ধারার (খ) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করিবার জন্য অনধিক একুশ জন সদস্য সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গঠিত হইবে।   কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার প্রত্যেক নির্বাচনের পর মজলিসে শূরার সদস্যগণ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ নির্বাচিত করিবে’।

আরও পড়ুন- 

রংপুরে ৯ জনের কেউ নিখোঁজ নন

র‌্যাবের নিখোঁজ তালিকায় ঝিনাইদহের প্রতিবন্ধী, প্রবাসী ও নিহতদের নাম

/এসটিএস/এবি/আপ-এসটি

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
পিছিয়ে পড়েও জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগপিছিয়ে পড়েও জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার