ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত সরকারি দল আওয়ামী লীগের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবার যুক্তরাষ্ট্রের তিন কংগ্রেসম্যানও এমন অভিযোগ তুলেছেন দলটির বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জামায়াত অর্থায়ন করছে এমন অভিযোগ তুলে তারা দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্টকে অনুরোধ করেছে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য।
জামায়াতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়নের অভিযোগ তোলা এই তিন কংগ্রেসম্যান হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের জিম ব্যাংকস, টেনেসির চাক ফ্লেইসমান ও টেক্সাসের র্যান্ডি ওয়েবার। তাদের অভিযোগ, জামায়াত ও এর সঙ্গে যুক্ত অঙ্গ সংগঠনগুলো শুধু দক্ষিণ এশিয়াতেই তাদের তৎপরতা চালাচ্ছে না বরং এশিয়া ও ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করেছে।
এই তিন কংগ্রেসম্যান গত ১ নভেম্বর স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাউন্টার টেরোরিজম কো-অর্ডিনেটর নাথান সেলসের কাছে জামায়াতের সন্ত্রাসী অর্থায়নের যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তারা বলেছেন হেল্পিং হ্যান্ডস ফর রিলিফ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এইচএইচআরডি) এবং ইসলামিক সার্কেল অফ নর্থ আমেরিকা (ইসনা) জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কিত।
চিঠিতে বলা হয়, ’কোনও সন্দেহ নেই জামায়াতের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের একটি অংশ হচ্ছে ইসনা এবং এইচএইচআরডি।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ’হেল্পিং হ্যান্ডস ফর রিলিফ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং ইসনা যে সরাসরি সন্ত্রাসী অর্থায়নে জড়িত এর স্বপক্ষে প্রচুর প্রমাণ আছে।’
জামায়াতের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে কংগ্রেসম্যানরা বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্সের প্যারামিলিটারি হিসাবে জামায়াত কাজ করতো এবং অনেক বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা ও বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ’২০১৫ সালে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির তৃতীয় কুখ্যাত সহিংস আর্মড গ্রুপ হিসেবে পরিচিতি পায়।’
তথ্য-প্রমাণ দেখিয়ে কংগ্রেসম্যানরা বলেন, ২০১৭ সালে পাকিস্তানে একটি কনফারেন্সের আয়োজন করে হেল্পিং হ্যান্ডস ফর রিলিফ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট যেখানে ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশন ও আল-খিদমত নামক দুটি সংস্থা আয়োজনে সরাসরি সহায়তা করে। এরমধ্যে জামায়াতের দান-খয়রাতকারী প্রধান শাখা সংগঠন হচ্ছে আল-খিদমত।
চিঠিতে বলা হয়, ’২০১৬ সালে ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশনকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এছাড়া আল খিদমত আরেকটি সংগঠন হিজব-উল-মুজাহেদিনকে সাহায্য করে থাকে এবং মুজাহিদিনকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করেছে।’
শুধু তাই নয় হেল্পিং হ্যান্ডস ফর রিলিফ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট তার ২০১৭ সালের বার্ষিক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে আল-খিদমতের ২১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সংস্থাটি।
এই অভিযোগ নিয়ে জামায়াতের বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করলে, জামায়াত ইউরোপ শাখার মুখপাত্র আবুবকর মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কংগ্রেসম্যানরা স্টেট ডিপার্টমেন্টে চিঠি পাঠিয়েছে এই বিষয়টি আমরা অবগত।’
তবে ইসনার সঙ্গে জামায়াতের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন তিনি। আবুবকর মোল্লা বলেন, এর আগেও দুই একজন কংগ্রেসম্যান এধরনের চিঠি লিখেছিলেন কিন্তু কোনও ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে তিনি জামায়াতের সঙ্গে হেল্পিং হ্যান্ডস ফর রিলিফ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পর্ক বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
কংগ্রেসম্যানরা চিঠি লেখার পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আমরা যোগাযোগ করিনি।’ তদন্ত শুরু করেছে কিনা এটি জানার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্টে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: জামায়াতের জঙ্গি অর্থায়নের খোঁজে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দারা
বাংলাদেশে জামায়াতি সন্ত্রাসের অর্থায়নে জড়িত ছিল পশ্চিমবঙ্গ!
এনজিও’র আড়ালে জঙ্গি অর্থায়ন ও জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম