ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ না করা ও হলে উপস্থিতি কম থাকায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের থাকার তিনটি কক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
গত বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত একটার দিকে গেস্টরুমে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর নির্দেশে কক্ষগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এসময় যেসব শিক্ষার্থী হলে উপস্থিত ছিলেন না তাদের বই, মালপত্র, জামাকাপড় কক্ষের বাইরে রাখার নির্দেশও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি জানাজানি হলে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নির্দেশে কক্ষগুলো আবার খুলে দেওয়া হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় হলটিতে গিয়ে দেখা যায়, হলের একটি কক্ষে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে দরজা বন্ধ করে কথা বলছেন ৪৩ তম আবর্তনের কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। কক্ষগুলোর সামনে বারান্দায় পড়ে আছে শিক্ষার্থীদের ট্রাঙ্ক, মালামাল, জামা-কাপড়ের স্তূপ। কিছুক্ষণ পর ওই ছাত্রলীগ কর্মীরা বের হয়ে আসলে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বললে মুহূর্তের মধ্যে তাদের ইশারায় বারান্দা থেকে পড়ে থাকা মালামালগুলো কক্ষে নেওয়া হয়।
জানা যায়, ভাসানী হলের প্রথমবর্ষের (৪৪ তম আবর্তন) শিক্ষার্থীদের জন্য ১১০, ১১২, ১১৩, ১১৪ ও ১২০ নম্বর এই পাঁচটি কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। ৪ আসনের ওই কক্ষগুলোতে প্রায় ১২-১৫ জন শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত ২২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিতে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। নতুন দুই নেতাকে বরণ করে নিতে বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আনন্দ মিছিল বের করে ছাত্রলীগ। কিন্তু ওই মিছিলে ভাসানী হলের প্রথমবর্ষের (৪৪ তম আবর্তনের) শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণ কম থাকায় ওই দিন রাত ১২টার দিকে গেস্টরুমে বৈঠকে বসে ছাত্রলীগ কর্মীরা। সেখানে ৪২ তম আবর্তনের ছাত্রলীগ কর্মী আল্লামা ইকবাল (পরিবেশ বিজ্ঞান), আমিরুল ইসলাম (আইন ও বিচার) ও মাহবুবুর রহমান নীলের (দর্শন) নির্দেশে জুনিয়র ছাত্রলীগ কর্মীরা হলের ১১২, ১১৩ এবং ১১৪ নম্বর কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
ফলে বুধবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই তিন রুমের শিক্ষার্থীরা ১১০ ও ১২০ নম্বর কক্ষে অবস্থান করে। কেউ কেউ আবার হলের ডাইনিং রুম, অন্য হলে রাত কাটান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন,‘ সামনে বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা। এমনিতেই হলে নানা সংকটের কারণে পড়াশুনা করা সম্ভব হয় না। তার মধ্যে বড় ভাইদের এমন শাস্তি আসলেই অমানবিক।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ কর্মী আমিরুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন,‘কক্ষ বন্ধ করে দেওয়ার কোনও ঘটনা ঘটেনি। কয়েকজনের জিনিসপত্র কক্ষের বাইরে রাখায় লোকজন ভেবেছে কক্ষ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
আল্লামা ইকবালকে ফোন করা হলে তিনি ওই গেস্টরুমের বৈঠকে ছিলেন না বলে জানান।
মাহবুবুর রহমান নীলকে ফোন করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
হলটির সর্বোচ্চ নেতা জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুরশিদুর রহমান আকন্দ বলেন,‘ হলে ৩ টি কক্ষ বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। ১২ মার্চ ৪৫ তম আবর্তননের শিক্ষার্থীরা হলে উঠবে বলে তাদের জন্য একটিমাত্র কক্ষ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
মওলানা ভাসানী হলের প্রভোস্ট সৈয়দ হাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আমি সন্ধ্যায় খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য লোক পাঠিয়েছিলাম। তারা গিয়ে কক্ষগুলো খোলা দেখতে পেয়েছেন। শুনেছি, প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের দোতলায় উঠানো হবে বলে কক্ষগুলো খালি করা হয়েছিল।’
এসআরএস/ এমএসএম/