X
বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নির্বাচন নিয়ে সেনাবাহিনীর কথা বলার এখতিয়ার নাই, তারা ক্যান্টনমেন্টেই থাকুক: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৭ মে ২০২৫, ১৮:২৩আপডেট : ২৭ মে ২০২৫, ১৮:২৩

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি বাংলাদেশের সেনাবাহিনী পলিটিক্সের (রাজনীতি) মধ্যে একটা নতুন বয়ান জন্ম দিয়েছে। উনি (সেনাপ্রধান) বলেছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে হবে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর এই কথা বলার এখতিয়ার নাই। সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টেই থাকুক।

মঙ্গলবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সংস্কার সমন্বয় কমিটি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক রূপান্তর: মৌলিক সংস্কার ও নির্বাচন' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি বাংলাদেশের সেনাবাহিনী পলিটিক্সের মধ্যে একটা নতুন বয়ান জন্ম দিয়েছে। উনি (সেনাপ্রধান) বলেছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে হবে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর এই কথা বলার এখতিয়ার নাই। সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টেই থাকুক। তাদের যে ফোর্সের নিয়মিত কার্যক্রম... আমরা দেখতে পাচ্ছি— বিএসএফ বাংলাদেশে পুশ ইন করছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন দেশের অপারেটিভগুলো একটিভ রয়েছে, সেগুলো তারা নিয়ন্ত্রণ না করে বাংলাদেশের জনসাধারণকে তারা আয়নাঘরে রেখেছিল, গুম করেছিল, খুন করেছিল। সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়ায় না গিয়ে যখন আমরা একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথযাত্রা শুরু করেছিলাম— সেটা বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সেজন্য আমরা তাদেরকে আহ্বান জানাবো মিলিটারিকে পলিটিক্স থেকে সেপারেট করতে হবে। এবং বাংলাদেশে যে আর্ম ফোর্সেস রয়েছে সেখানে তাদেরকে একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। গত ১৫ বছরে আমরা দেখেছি, ক্যান্টনমেন্টের রাস্তাগুলো প্রশস্ত হয়েছে, উঁচু উঁচু দালান উঠেছে কিন্তু তাদের কাছে আমরা কোনও অস্ত্র দেখি নাই। তাদের পেটগুলো ভারী হয়েছে বসে বসে। তাদের আমরা মার্চ করতে দেখি নাই, বিভিন্ন মহড়া করতে দেখি নাই। আমরা তাদেরকে আহ্বান জানাবো, আপনারা সৈনিক, জনগণের পক্ষে আপনাদেরকে থাকতে হবে। এবং জনগণের পক্ষে যদি আপনাদেরকে লড়তে হয় নতুন বিশ্বে যে কলাকৌশলগুলো এসেছে সেগুলো রপ্ত করে সেই জায়গায় আপনারা প্রশিক্ষিত হোন। রাজনীতিতে আপনারা কোনও মেডেলিং করতে আসবেন না।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি— অনেক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আমরা তাদেরকে আহ্বান জানাবো,  আপনি যখন অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন আপনি সেখানে সিটিজেন আকারে অভিমত প্রকাশ করতে পারেন কিন্তু কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে জনতার আদালতে বিচারের কাঠগড়ায় আপনাদের দাঁড়াতে হবে।

এনসিপির এই নেতা বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন বাহিনীতে অসন্তোষ বিরাজ করছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতি না দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দলীয় এজেন্ডায় এই পদ বেচা-বিক্রি হয়েছে। ক্ষমতায় কে আসবে— সেই ভিত্তিতে এখনই লাইন-আপ করা হয়েছে। সেই ফোর্সেসের প্রধান যারা রয়েছেন তাদেরকে আমরা বলবো, মেরিটের ভিত্তিতে নিয়োগ চালু করুন।

জনগণের উদ্দেশে নাসীরুদ্দীন বলেন, আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে দেশবাসীকে আহ্বান জানাবো, আমাদের গণপ্রতিরক্ষা অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। সেই ক্ষেত্রে গণপ্রতিরক্ষার মানোন্নয়ন কীভাবে আরও করা যায় আপনারা সজাগ থাকবেন। যদি কোনও যুদ্ধ আসে সেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকবেন।

নির্বাচন কমিশন নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় যে স্টেকহোল্ডার সেটা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের ২০২২ সালের যে কালো আইনটা রয়েছে, যেটা শেখ হাসিনার আমলে তৈরি করা হয়েছিল, সেই কালো আইনের ভিত্তিতেই এই পাঁচজন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাদেরকে কমিশনার না করে দলীয় চেয়ারম্যান, দলীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট, দলীয় সেক্রেটারি— এভাবেই যদি আমরা বলতে পারতাম তাহলে হয়তো তাদের সাথে অনেক বেশি মানানসই হতো। গণঅভ্যুত্থানের ১০ মাস পূরণ হয় নাই— এর মধ্যে তারা নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন দলের একটি দলীয় অফিস বানিয়েছে। আমরা শুনতে পাচ্ছি, বিভিন্ন জায়গায় দলীয় এজেন্ডার ভিত্তিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আমরা শুনছি, বিভিন্ন দলের সাজানো স্ক্রিপ্টে আসন বিন্যাস প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। আমরা তাদেরকে বলবো, সময় আছে ভালো হোন। সময় গেলে সেই সুযোগ আর পাবেন না।

তিনি বলেন, আমরা ডেমোক্রেসির মাধ্যমে বাংলাদেশে আর কোনও অটোক্রেটিক গভর্মেন্ট দেখতে চাই না। আমরা যদি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে না গিয়ে নির্বাচনে যাই তাহলে যেই সিস্টেমটা আমাদের চলমান রয়েছে, আমরা মনে করি বাংলাদেশে নতুন একটি স্বৈরাচার আবির্ভূত হবে। অর্থাৎ, সিস্টেমের যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে শেখ হাসিনার চেয়ে বড় স্বৈরশাসক আবার বাংলাদেশে আসতে পারে, তারা প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। এই স্বৈরশাসকদের ঠেকানোর জন্য আমরা আর রক্ত দিতে চাই না।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, অধ্যাপক দিলারা জামান, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।

/এএজে/এমএস/
সম্পর্কিত
আমরা ব্যতিক্রম ও বাংলাদেশপন্থা রাজনীতি করবো: মাহবুব আলম
আমাদের দেশের ভোটাররা ভোট বিক্রি করে দেয়: হাসনাত আবদুল্লাহ 
রয়টার্সের প্রতিবেদনবাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার নেপথ্যে কী?
সর্বশেষ খবর
পটুয়াখালীতে তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টি
পটুয়াখালীতে তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টি
হারের কারণ হিসেবে ইন্টেন্টের অভাব দেখছেন বাংলাদেশের স্পিন কোচ
হারের কারণ হিসেবে ইন্টেন্টের অভাব দেখছেন বাংলাদেশের স্পিন কোচ
সরকারি দায়িত্ব ছাড়ছেন ইলন মাস্ক
সরকারি দায়িত্ব ছাড়ছেন ইলন মাস্ক
কমলাপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে এক কিশোরের দুই পা বিচ্ছিন্ন
কমলাপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে এক কিশোরের দুই পা বিচ্ছিন্ন
সর্বাধিক পঠিত
আনু মুহাম্মদের স্ট্যাটাসে আসিফ নজরুলের বিস্ময়
আনু মুহাম্মদের স্ট্যাটাসে আসিফ নজরুলের বিস্ময়
ঢাবিতে বামপন্থিদের মশাল মিছিল ঘিরে উত্তেজনা, ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি
ঢাবিতে বামপন্থিদের মশাল মিছিল ঘিরে উত্তেজনা, ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি
সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জুয়েলারি ব্যবসা বন্ধ
সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জুয়েলারি ব্যবসা বন্ধ
ভুয়া পরিচয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে ১২ বছর চাকরি: বরখাস্ত মামা-ভাগনে
ভুয়া পরিচয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে ১২ বছর চাকরি: বরখাস্ত মামা-ভাগনে
কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা