হুট করে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) এই বিষয়ে অবগত ছিল না। ছিলেন না সাবেক-বর্তমান সতীর্থরাও। তামিমের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক সবাই। সাবেক অধিনায়ক ও সতীর্থ মাশরাফি বিন মুর্তজা তো রীতিমত বিস্মিত। ফেসবুকে বিশাল পোস্টে মাশরাফি লিখেছেন, ‘চাইলে তোর এই সিদ্ধান্তের পোস্টমর্টেম করতে পারতাম। কিন্তু করলাম না তোর সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে।’
তামিমের অবসর নেওয়া প্রসঙ্গে মাশরাফি দীর্ঘ পোস্টের শুরুতে লিখেছেন, ‘তামিম, তোর সিদ্ধান্ত একান্তই তোর। এটা কারও ভালো লাগলেও তোর, ভালো না লাগলেও তোর। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথাই হবে। তবে সবচেয়ে ভালো কোনটা, সেটা তুই ছাড়া কেউ ভালো বুঝবে না। তাই তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি ব্যক্তিগতভাবে শতভাগ সম্মান জানাই।’
তারপরও মাশরাফি প্রশ্ন রেখেছেন তামিমের কাছে? ‘তবে কিছু কথা জানতে মন চায়, মাত্র ৩৪ বছর ১০৮ দিনেই বিদায় কেন! আসলেই কি চালিয়ে যেতে পারছিস না? না কি কোনও চাপ তোকে বাধ্য করেছে! তোর অনেক ভক্ত হয়তো খুঁজে ফিরবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর। আজ খুঁজবে, এমনকি ভবিষ্যতেও আরও অনেকদিন খুঁজবে।’
এই প্রসঙ্গ শেষ করেই মাশরাফি হয়ে উঠলেন স্মৃতিকাতর, ‘তোকে প্রথম দেখেছি চট্টগ্রামে তোদের বাসায়, হাফ প্যান্ট পরে খেলছিলি। তোর ভাই, আমার বন্ধু নাফীস ইকবাল তোকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। পরের বার দেখলাম জাতীয় লিগে ওপেন করতে খুলনার মাঠে। তারপর ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে একসঙ্গে পথ চলতে চলতে তুই হয়ে গেলি বন্ধুর মতো। কত দিন কত রাত এক সঙ্গে সময় কাটিয়েছি, একসঙ্গে খেতে যাওয়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা, দুষ্টুমি, মজা, তর্ক, খেলা নিয়ে কত কত আলোচনা করেছি, সেসবের কোনও হদিস নেই। ’
মাশরাফি আরও লিখেছেন, ‘যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলাম, তখন তুই ছিলি আমার অন্যতম ‘স্নাইপার।’ সেটা তুই নিজেও খুব ভালো করে জানিস। যেদিন দল থেকে বের হয়ে এলাম, সেদিন তুই আমাকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলি। পরে সারারাত একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছিলাম। যে কোনও সিরিজ বা সফরে তুই ছিলি আমার রুমে আড্ডার অবধারিত সঙ্গী। আরও কত শত স্মৃতি এখন মনে পড়ছে।’
হুট করে তামিমের সিদ্ধান্তর ব্যাপারে কারও কোন ধারনা না থাকলেও মাশরাফি মনে করেন তিনি চাইলেই এই সিদ্ধান্তের কারণ খুঁজতে পারতেন। কিন্তু তামিমের সিদ্ধান্তকে স্বাগত সম্মান জানিয়ে চুপ আছেন তিনি, ‘তোকে যতটুকু চিনি, তাতে তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি অনায়াসে পোস্টমর্টেম করতে পারতাম। কিন্তু তা করবো না, কারণ তোর নিজস্ব সিদ্ধান্তকে অবশ্যই সম্মান জানানো উচিত।’
তামিমকে সান্ত্বনা দিয়ে মাশরাফি লিখেছেন, ‘তোর মানসিক অবস্থা আমি বুঝতে পারছি, সেই সঙ্গে এটাও বলছি যে, তুই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যা কিছু দিয়েছিস, তা আমরা আজীবন মনে রাখবো। একজন তামিম হয়ে উঠতে কতটা পরিশ্রম, কতটা সময়, কতটা মেধা আর কত ত্যাগ থাকতে হয়, তা সময় সব কিছু বুঝিয়ে দেবে। তোর প্রতি রইল অফুরন্ত ভালোবাসা। পরবর্তী জীবন পরিবার নিয়ে দারুণ কাটাবি, সেই আশাই করছি।’
তামিমের বিদায়ে দলের সবচেয়ে বড় পরিসংখ্যান বিধকে হারালো বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম। মাশরাফির জানা নেই এই অভাব কে পূরণ করবেন, ‘আর একটা কথা, দলের ভেতর নানা পরিসংখ্যান নিয়ে বিশ্লেষণ নির্ভর আলোচনা এখন কে করবে, ঠিক জানি না। হয়তো কেউ করবে। তবে তুই এই জায়গায় সবসময়ই থাকবি সেরাদের সেরা।’
একদম শেষে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে শুভকামনা জানিয়ে মাশরাফি লিখেছেন, ‘গুড বাই মি. তামিম ইকবাল খান। একজন কিংবদন্তির বিদায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য শুভ কামনা, এগিয়ে চলুক দুর্বার গতিতে। আমাদের এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়।’