অনেক সময় আপনি ধারণাও করতে পারবেন না, সামনে কী হতে চলেছে! মানে চিন্তা-ভাবনার বাইরেও অনেক সময় অনেক কিছু হয়ে যায়। কে ভেবেছিল টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করবে বাংলাদেশ! তাও আবার তাদের মাটিতে। চিন্তা ভাবনার মধ্যে না থাকলেও সাকিব আল হাসান-লিটন দাসরা কিন্তু সবকিছুই সত্যি করে দেখিয়েছেন। প্রথমবার এমন অভাবিত সাফল্য দেখিয়ে দেশবাসীকে দিয়েছেন অপার আনন্দময়ী একক্ষণ।
প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জেতার পর খোদ পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। লাল সবুজ দলের অবিশ্বাস্য জয়ে সবার চোখে মুখে ছিল বিস্ময়ের বিচ্ছুরণ। বাংলাদেশ দল যেমন আনন্দে ভেসেছে, বিপরীতে পাকিস্তানের দিকে সমালোচনার তীর ধেয়ে এসেছে।
প্রথম টেস্টে দাপুটে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচ নিয়ে প্রত্যাশা দ্বিগুণ হবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রত্যাশার বেলুন কিন্তু চুপসে যেতে দেননি মিরাজরা। শুরুর দিনে বৃষ্টি বড় বাগড়া দিলে অনেকে মনে করেছিলেন অন্তত তাতে করে ১-০ তে সিরিজ জয়ের সুযোগ তো থাকবে। প্রকৃতি কিন্তু এই যাত্রায় বাংলাদেশের পক্ষে ছিল। নতুন ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ। তাই এরপর থেকে খেলাতে সেভাবে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
লিটনের বড় স্কোর। হাসান মাহমুদের ৫ উইকেট। নাহিদ রানার গতিময় বোলিং, যা ওয়াকার ইউনুস-ওয়াসিম আকরামদের স্মরণ করে দিয়েছে। এছাড়া সাকিব-মুশফিকদের দৃঢ় ব্যাটিং দলকে নিয়ে গেছে জয়ের বন্দরে।
সবাই জানতেন, এমন সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে তা হবে বড়সড় ঘটনা। হয়তো সেই তাড়না খেলোয়াড়দের সবার মধ্যে বেশ ভালোভাবে কাজ করেছে। তানাহলে শেষ দিন পর্যন্ত দাপট দেখিয়ে খেলে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা পতপত করে উড়ে?
এ এক অপার নির্মল আনন্দ। পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের মাঠে দুটি ম্যাচেই জয় করায়ত্ত করে নেওয়া। এমন ঘটনায় দেশের বর্তমান বন্যা ও সংকট পরিস্থিতিতে সবার মধ্যে আনন্দের রেণু বইছে তা বলতে তো কোনও দ্বিধা নেই।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন যুগের শুরু তা বলতে বাধা নেই। টেস্টে যৌবন হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের পর পাকিস্তানকে সরাসরি উড়িয়ে দেওয়া চাট্টিখানি কথা তো নয়। বাংলাদেশের খেলার ইতিহাসে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় ঘটনা তো বটেই, হয়তো স্বাধীনতা উত্তর খেলার ইতিহাস ঘাটলে পাকিস্তান বধের কাহিনী শীর্ষে থাকবে। কেউ কেউ যদি এটাকে একদম চূড়ায় রাখতে চান তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
অন্তত এটা বলা যায়, দেশের সংকটময় অবস্থায় যেভাবে বাংলাদেশ দল টানা সাবলীল গতিতে খেলে স্মরণকালের স্মরণীয় জয় তুলে নিয়ে হোয়াইটওয়াশ করছে তা সত্যি অতুলনীয়।
পাকিস্তানের মাঠে এমন জয় অমূল্য, তাহলে এখন বলতেই হয় টেস্টে বাংলাদেশের নতুন যুগে আগমনধ্বনি এটি। যারা বড় দলের বিপক্ষে তাদের চিরচেনা মাঠে জিততে জানে।
২০০০ সালের ১০ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অভিষেক হয়। প্রায় ২৪ বছরে দেরিতে হলেও শক্তিধর-ঐতিহ্যবাহী (যদিও এখন কিছুটা ক্ষয়িষ্ণু) পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে ক্রিকেট বিশ্বে ঝড় তুলে দিয়েছে।
টেস্টে বাংলাদেশ যে একদম ফেলনা নয়, তারই রূপ আজ দেখা গেছে। সাধারণত এক ম্যাচ জিতলে পরেরটিতে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়া বাংলাদেশ দলের বদঅভ্যাস, তা এবার হয়নি। সামনের দিকে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। দেখাতে হবে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে সফল এক দল, পিছিয়ে থেকে জিততে জানে। তাহলে বলতে আর দেরি নেই যে টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে অন্যতম এক শক্তির নাম বাংলাদেশ!