নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সরে গেছে দুবাইয়ে। আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা দক্ষিণ আফ্রিকার। এই সফরের আগে বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। গত দুদিনে তারা চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ও মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে বিসিবিতে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে গেছেন তারা। যদিও নিরাপত্তা প্রতিনিধিদল দেশে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডের কাছে রিপোর্ট পেশ করবেন। তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারণ হবে আসন্ন সিরিজের ভাগ্য।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিস গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে যতটুকু বুঝতে পেরেছি, তারা খুবই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। বারবার বিসিবিসহ নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে এত আয়োজন আমরা করতে পেরেছি। তারা (প্রতিনিধিদল) দেশে গিয়ে তাদের বোর্ডের কাছে রিপোর্ট পেশ করবেন, এই সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ কাজগুলোও সেরে ফেলতে পারবো। আশা করি ইতিবাচক কিছুই হবে।’
শনিবার রাতে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডের চার সদস্যের একটি পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় এসে পৌঁছান। পর্যবেক্ষক দলটি রবিবার সকালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ঘুরে দেখেছেন। ওখানকার হোটেলসহ অন্যান্য সুবিধা নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করেছেন। আজ সোমবার দেখলেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। মূল মাঠ, ড্রেসিং রুম, অ্যাকাডেমি মাঠের সুযোগ-সুবিধা ঘুরে ঘুরে দেখেছেন তারা। এমনকি প্রেসকনফারেন্স রুম, মিডিয়া সেন্টারসহ প্রেসবক্সও ঘুরে ঘুরে দেখেছেন।
প্রতিনিধি দলের এই কার্যক্রম শেষ হতেই মিরপুরে হুট করেই বিকট শব্দে বোমার বিস্ফোরণ ঘটে! কিছুক্ষণের মধ্যে খেলোয়াড়রা হয়ে পড়েন জিম্মি! তখন জরুরি তলবে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। জিম্মি হওয়া খেলোয়াড়দের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন সেনা সদস্যরা। এরপর খেলোয়াড়দের হেলিকপ্টারে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ অবস্থানে। তাদের নিরাপদে পাঠিয়ে বাকি সদস্যরা স্টেডিয়াম শত্রুমুক্ত করার মিশনে নামেন। আসলে এটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার নিরাপত্তা প্রতিনিধি দলের সামনে সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলের মহড়া।
মহড়া শেষ হতেই প্রতিনিধি দল বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে সভায় বসেন। সব কিছু নিয়ে পরে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিস জানান, ‘আমাদের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। সেই পরিবর্তনের কারণে আমরা আইসিসি উইমেন্স টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারিনি। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ডের একটু কনসার্ন ছিল। বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপার এবং আমরা কীভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছি সেই বিষয়গুলো তারা নিজ চোখে দেখতে এসেছিল।’
নাফিস আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যখন কোনও আন্তর্জাতিক সিরিজ আয়োজন করে থাকে, এটা আমাদের একেবারে রেগুলার একটা ড্রিল। এমন প্রস্তুতি আমাদের সবসময় থাকে। শেষবার হয়তো ২০১১ ও ২০১৪ বিশ্বকাপের সময় করেছিলাম। যেহেতু নিরাপত্তা বাহিনীতে কিছুটা রদ বদল হয়েছে, এই কারণে সিরিজ শুরুর আগে আমরা আরেকবার বিষয়টি দেখলাম সব ঠিকঠাক আছে কিনা। আমি আবারও বলছি, এটা আমরা নিয়মিতই করে থাকি। যেহেতু ওরা (প্রতিনিধি দল) আমাদের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে চেয়েছিল, এ কারণে আমরা ওদের সামনে মহড়া করেছি।’
আগামী ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ সফরে আসার কথা দক্ষিণ আফ্রিকার। একদিনের বিশ্রাম শেষে প্রোটিয়ারা অনুশীলন করবে ১৮, ১৯ ও ২০ অক্টোবর। মিরপুরে সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু ২১ অক্টোবর। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট চট্টগ্রামে ২৯ অক্টোবর। শেষ পর্যন্ত প্রতিনিধি দলের কাছ থেকে ইতিবাচক মন্তব্য পাওয়া যাবে তো? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন নাফিস, ‘আমি জানতে চাচ্ছি। গত ৭ কিংবা ১৪ দিনে বাংলাদেশে খুব বড় কিছু কি ঘটেছে? আমি পুরোটা সময় তাদের সঙ্গে ছিলাম, বিমানবন্দর থেকে হোটেল, হোটেল থেকে বিমানবন্দর, মাঠ থেকে হোটেল– কোথাও অস্বাভাবিক কিছু দেখিনি। আমার মনে হয় না তারা এই ধরনের নেতিবাচক কিছু গ্রহণ করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা অস্বাভাবিক কিছু তো হয়নি, কেন তারা সেসব পিক করবেন?’