২০১২ সালে বিপিএল মাঠে গড়ানোর পর ব্যাপক আলোড়ন হয়েছিল। ১২ বছর আগে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগের যাত্রা শুরু হলেও এখনও এর কোনও কাঠামো দাঁড় হয়নি। প্রতি বছরই কোনও না কোনও বদল আসে। নেই কোনও নিয়ম-নীতি। সবকিছুই হয় অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে। রেভিনিউ শেয়ারিং সিস্টেম তো অনেক দূরের কথা, আর্থিক ভিত্তি গড়ার কোনও সিস্টেম এখনও তৈরি করতে পারেনি বিসিবি। ফলে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান না হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদের জন্য পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। নতুন করে সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর রেভিনিউ শেয়ারিং নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। চলতি আসরে পুরোপুরি রেভিনিউ শেয়ারিং করা না গেলেও টিকিট বিক্রি থেকে রেকর্ড আয়কৃত অর্থের কিছু অংশ ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ।
বিসিবির পাঠানো ভিডিও বার্তায় ফারুক রেভিনিউ শেয়ারিং নিয়ে বলেছেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজিদের একটা বিরাট দাবি ছিল রেভিনিউ শেয়ারিং। তখন তাদের বলেছিলাম, আমি আসলে লাভটা কত কী হয়, এটা জানি না। আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সব ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য সুখবর, যদিও রেভিনিউ শেয়ারিং বলতে সব ক্ষেত্রেই বোঝায়, অন্যগুলো ওরকম করে করতে পারিনি। তবে টিকিট বিক্রির একটা ভালো ভাগ তাদের দেবো।’
ফারুকের দাবি, বিপিএলে টিকিট বিক্রি থেকে ১২ কোটি ২৪ লাখ টাকার বেশি আয় হয়েছে, ‘পুরো বিপিএলে আমরা প্রায় ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি করেছি। ছোট্ট একটা তুলনা যদি আপনাদের দেই। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড গত ১০ আসরে যে টিকিট বিক্রি করেছে, সেটা ১৫ কোটি টাকার মতো। বিবেচনা করলে আমরা এক বছরেই সেটার কাছাকাছি চলে গিয়েছি। আমরা টিকিট সত্ত্ব বিক্রি বাবদও তিন বছর চুক্তি করেছি এক কোটি টাকা করে। এটা একটা বিরাট মাইলফলক।’
মূলত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে টিকিট বিক্রি করার কারণেই এমন সফলতা এসেছে উল্লেখ করে বোর্ড সভাপতি বলেছেন, ‘আগস্ট মাসে নির্বাচিত হওয়ার পর আমার বেশ কিছু কমিটমেন্ট ছিল। মনে করেছিলাম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে টিকিট বিক্রি একটা জায়গা, যেখান থেকে ভালো একটা লাভ অর্জন করতে পারি, বিশেষত বিপিএলের মতো টুর্নামেন্ট থেকে। আমরা এবার অবিশ্বাস্যরকম সফলভাবে টিকিট বিক্রি করেছি। এটার বিরাট কারণ ছিল আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গিয়েছি ১০০ ভাগ, আপনারা জানেন অত্যন্ত সিকিউরড, বিশ্বকাপে যেভাবে টিকিট বিক্রি হয় ওভাবে। যদিও পুরোপুরি অনলাইন যেতে পারিনি, জাস্ট নতুন একটা সিস্টেম দেখার জন্য। প্রথম রাউন্ডে আমরা ৩৫% টোটাল টিকিটের, পরের রাউন্ডে ৪০% গিয়েছিলাম অনলাইনে।’
প্রতি আসরেই বিপিএল নিয়ে তৈরি হয় নানা অসংগতি। এবার তো আরও হ-য-ব-র-ল অবস্থা। দুর্বার রাজশাহী কয়েক দফা সময় দিয়ে ঠিকমতো ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে পারেনি। পরবর্তীতে সরকারের হস্তক্ষেপে পারিশ্রমিক পরিশোধ করেছে রাজশাহী। শুধু রাজশাহী নয়, আরও বেশ কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজির ঠিকমতো পারিশ্রমিক পরিশোধ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। ছিল না তারকা মানের বিদেশি ক্রিকেটার। হুটহাট এসে খেলে গেছেন কিছু ক্রিকেটার। ভবিষ্যতে এমন কিছু সমস্যা এড়াতে আগে ভাগেই বিপিএল নিয়ে কাজ করার কথা জানালেন ফারুক, ‘বিপিএলে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। প্রথম দিকে টিকিট যেহেতু নতুন একটা সিস্টেম, সেটা নিয়ে ঝামেলা ছিল। দুয়েকটা ফ্র্যাঞ্চাইজি টাকা দেওয়ার ব্যাপারেও একটু অসুবিধার সৃষ্টি করেছে। এটা নিয়ে অনেক নেতিবাচক নিউজ হয়েছে। তবে যদি ওভার অল দর্শক, উইকেট, টিকিট বিক্রি, দর্শকদের অংশগ্রহণ এবং আমাদের যে টিভি প্রডাকশন…। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ’
ইতোমধ্যে বিপিএলের নতুন উইন্ডো নিয়ে কাজ চলছে বলে জানালেন বিসিবি সভাপতি, ‘আগামী বিপিএল নিয়ে এখনই কাজ শুরু করে দিয়েছি। একটা উইন্ডো বের করেছি আমরা। এখন তো সব দেশে অনেকগুলো টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হয়, ওগুলো ক্ল্যাশ হয়। আমরা একটু অন্যরকম করে যেন করতে পারি, যাতে একটু মানসম্পন্ন বিদেশি পাই।’