গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর বিসিবি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই তদন্ত রিপোর্টে সাকিব আল হাসান খালেদ মাহমুদ সুজনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন। টিম ম্যানেজার হিসেবে টিম মিটিং থেকে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তামিম ইকবালও অনেকটা একই সুরে তদন্ত প্রতিবেদনে বক্তব্য দিয়েছেন। বিশেষ করে সাবেক অধিনায়ক তামিম সুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, পছন্দ মতো ক্রিকেটারদের প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি। সাকিব ও তামিমের এমন অভিযোগে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিসিবির সাবেক পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। নট আউট নোমানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেছেন, ‘আমি সাকিব আর তামিমের সঙ্গে ফোনে কথা বলবো। আমি ওদের মুখ থেকেই শুনতে চাই, ওরা কথাগুলো বলছে কিনা। ওরা সুপারস্টার বলে যা তা বলে পাড় পেয়ে যাবে, এটা ভুল। তাদের ভুলের কারণেইতো আজকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই অবস্থা। তাহলে আমরা সবাই তাদের ওপর আঙুল তুলতে পারি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে কাদা ঝোড়াছুড়ির এই কালচার, এর চেয়ে খারাপ কালচার আর কিছুতে নেই।’
টিম মিটিংয়ে সুজনের থাকা নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করে মন্তব্য করেন সাকিব। সাকিবের এমন মন্তব্যেও বিস্মিত সুজন, ‘অবশ্যই সারপ্রাইজিং। আমি জানতে চাইবো সাকিবের কাছে। আমি অবশ্যই সাকিবকে কল করবো। আমি ওর কাছে জানতে চাইবো, কোথায় আমার সমস্যা ছিল? তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমাকে সামনা-সামনি বললেই পারতো, সুজন ভাই আপনাকে এখানে দরকার নাই। ওতো এমন ঠোঁটকাটা ছেলেই। কাউরে বলে দিতে পারতো, ডিরেক্টরকে দরকার নাই এখানে।’
সুজন আরও বলেছেন, ‘আমি আগে একাদশ নিয়ে কথা বলতাম। কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম হাথুরুসিংহে এটা পছন্দ করছে না, তখন চুপ হয়ে গেলাম। আমারতো ঠেকা পড়েনি, আমিতো কোচ না। খালি খালি আমার ওপরে আমি ব্লেম নিবো। বিশ্বকাপে পুরো সময়টাই আমি নষ্ট করেছি। জানি না সাকিব এই কথা কেন বলছে, আমিতো কখনই দল নির্বাচনে ছিলাম না। আরও একটা বাংলাদেশ দলের কনফিডেন্সশিয়াল কথা কখনোই শেয়ার করি না। আমি কেন বলতে যাবো? আমার দরকার আছে? আমি বাংলাদেশ দলের ভালো চাই, খারাপ চাই না।’
সাকিবের তীব্র সমালোচনা করে সুজন বলেছেন, ‘‘তোরা (সাকিব) যে রান করতে পারিস না, উইকেট নিতে পারিস না, অন্য লোকের দোষ দিচ্ছিস কেন? ধরলাম আমি খবর ফাঁস করেছি, জালাল ভাই করেছে কিংবা তামিম করেছে; তামিম কি তোকে (সাকিব) বলছে তুই রান করিস না।, তুই ম্যাচ হার। খেলা চলাকালীন তোমার নির্বাচন করার কী দরকার ছিল? এমপি হতে কে বলছিল তোমারে? তোমাকে আমরা নিষেধ করেছিলাম, সাকিব এখন করিস না বাবা! এগুলো দোষ না? একজন রানিং ক্রিকেটার হিসেবে তোমার এমপি হওয়ার দরকার কী? এতো খায়েস কেন তোমার? তুমি ক্রিকেট খেলা ছাড়ো, তারপর এমপি হও। কেউতো মানা করেনি।’ এগুলো নিয়েতো আমরা কখনো প্রশ্ন তুলেনি। আমাদের ফিউচার ক্রিকেটারদের কাছে বিষয়গুলো খুব বাজে ভাবে যাচ্ছে।’’
তামিমও তদন্ত রিপোর্টে সুজনের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন। তার দাবি সাবেক অধিনায়ক পছন্দের ক্রিকেটারদের প্রায়োরিটি দেন। এ বিষয়ে সুজন বলেছেন, ‘তামিমের ক্রিকেট বেড়ে উঠাতো আমার হাত দিয়েই। ভুলে গেলে হবে না। আমার সাথে কোন প্লেয়ারের সম্পর্ক খারাপ আছে, একটু জিজ্ঞেস করা দরকার। হ্যাঁ, মোসাদ্দেক, তাসকিন, লিটনরা আবাহনীতে খেলে অনেক বছর ধরে। আমি কি তাদের প্রায়োরিটি দিয়েছি, তামিমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে ইচ্ছা করে। আমার কি কোন ক্ষমতা আছে আলাদা ভাবে কাউকে কিছু করার।’
তামিম এমন মন্তব্য করেছেন সেটি জানলে দুইদিন আগেও তামিমের সাথে যে কথা হয়েছে সেটিও হতো না বলে উল্লেখ করেছেন সাবেক এই অধিনায়ক, ‘তামিমের কাছ থেকে এমনটা শুনে আমি অনেক বেশি সারপ্রাইজ হয়েছি। আমার সাথে পড়শুদিনও তামিমের কথা হয়েছে, আমি অবশ্যই ওর কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইবো। আমি জিজ্ঞেস করবো, ভালো সম্পর্কের সূত্র ধরে কীভাবে দলের মধ্যে ভাগ তৈরি করলাম। সত্যি কথা, আমি আগে জানলে তামিমের সাথে কথাই বলতাম না। তামিমতো আমার ক্লাবের কাউন্সিলর হইলো। প্রতিদিন কথা হচ্ছে। আমার ব্যাপারে এমন মনোভাব জানলে সম্পর্কই থাকতো না।’
