X
সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ফিরে দেখা বিশ্বকাপ

২০১০: স্পেনের বিশ্ব জয়ের আনন্দ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১০ জুন ২০১৮, ১৭:৫৩আপডেট : ১০ জুন ২০১৮, ২১:২৩

দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। রাশিয়ায় বসতে যাচ্ছে ফুটবল মহাযজ্ঞের ২১তম আসর। তার আগের প্রতিযোগিতাটিগুলো কেমন ছিল, কারাই বা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল- ফুটবল উৎসবের বানে ভেসে যাওয়ার আগে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সেখানে- 

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেন তারকা খেলোয়াড়ের অভাব নেই দলে, ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে আধিপত্য বিস্তার করে তাদের দেশের ক্লাবই, অথচ বিশ্বকাপে ‘পেছনের বেঞ্চের ছাত্র’ হয়েই থাকতে হয় স্পেনকে। ফুটবল বিশ্বের কাছে বিষয়টা ছিল ধাঁধার মতো। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে এসে খোলে সেই জট, নেদারল্যান্ডসকে ফাইনালে ১-০ গোলে হারিয়ে বিশ্ব জয়ের আনন্দে মাতে স্প্যানিশরা।

প্রথমবারের মতো আফ্রিকা মহাদেশে বসেছিল বিশ্বকাপ। দক্ষিণ আফ্রিকার এই প্রতিযোগিতাটি ছিল বিশ্বকাপের ১৯তম আসর। যে আসরে আরেকবার ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। ২০০৬ বিশ্বকাপের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাতেও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় লাতিন আমেরিকার দেশ দুটি।

অন্যদিকে আবারও ফাইনাল হারের যন্ত্রনা সঙ্গী হয় নেদারল্যান্ডসের। ১৯৭০ ও ১৯৭৮ সালের ব্যর্থতার পর আবার স্বপ্ন দেখলেও স্পেনের ‘সুন্দর ফুটবলের’ সামনে আত্মসমর্পন করে ডাচরা।

অন্য চোখে: দক্ষিণ আফ্রিকা বিদায় নেয় প্রথম রাউন্ড থেকে। বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেবারই প্রথম স্বাগতিক দেশ বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকে। ২০১০ সালের আসরে একমাত্র দল হিসেবে অজেয় ছিল নিউজিল্যান্ড, যদিও তারা বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকে।

একনজরে:

আয়োজক: দক্ষিণ আফ্রিকা

মোট দল: ৩২

ভেন্যু: ১০

চ্যাম্পিয়ন: স্পেন

রানার্স-আপ: নেদারল্যান্ডস

মোট ম্যাচ: ৬৪

মোট গোল: ১৪৫

সর্বোচ্চ গোলদাতা: ডিয়েগো ফোরলান (উরুগুয়ে), থোমাস ম্যুলার (জার্মানি), ওয়েসলি স্নেইডার (নেদারল্যান্ডস), দাভিদ ভিয়া (স্পেন)- প্রত্যেকে করেছেন ৫ গোল।

সেরা খেলোয়াড়: ডিয়েগো ফোরলান (উরুগুয়ে)

সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়: থোমাস ম্যুলার (জার্মানি)

সেরা গোলরক্ষক: ইকের কাসিয়াস (স্পেন)

স্পেনের গোলপোস্টে দুর্গ গড়েছিলেন কাসিয়াস, হয়েছিলেন সেরা গোলরক্ষক ফরম্যাট:

২০০৬ বিশ্বকাপের ফরম্যাটেই হয় দক্ষিণ আফ্রিকার আসর। ৩২ দল আট গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলেছে একে অন্যের সঙ্গে। প্রত্যেক গ্রুপে থাকা ৪ দল নিজেদের মুখোমুখি হওয়ার পর পয়েন্ট টেবিলের সেরা দুই দল জায়গা করে নেয় দ্বিতীয় রাউন্ডে। এভাবে প্রত্যেক গ্রুপ থেকে আসা ২ দল নিয়ে নকআউট পর্ব শুরু হয় শেষ ষোলো দিয়ে। সেখানকার জয়ী দল কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল হয়ে জায়গা করে নেয় ফাইনালে।

গ্রুপ পর্ব:

আবারও অঘটন গ্রুপ পর্বে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হয়ে খেলতে নেমে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় ইতালি। তাদের বিদায় করে দিয়ে ‘এফ’ গ্রুপ থেকে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করে প্যারাগুয়ে ও স্লোভাকিয়া। কোনও ম্যাচ না জেতা আজ্জুরিরা মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে।

‘এ’ গ্রুপ থেকে উরুগুয়ে চ্যাম্পিয়ন ও মেক্সিকো রানার্স-আপ হয়ে যায় শেষ ষোলোতে। ‘বি’ গ্রুপে সব ম্যাচ জিতে আর্জেন্টিনা নাম লেখায় পরের রাউন্ডে, সঙ্গে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। ‘সি’ গ্রুপে ইংল্যান্ডকে টপকে চ্যাম্পিয়ন হয় যুক্তরাষ্ট্র। ‘ডি’ গ্রুপে জার্মানির সঙ্গে পরের রাউন্ড নিশ্চিত করে চমক জাগানো ঘানা। ‘ই’ গ্রুপ থেকে নেদারল্যান্ডস ও জাপান, ‘জি’ গ্রুপ থেকে ব্রাজিল ও পর্তুগাল, ও ‘এইচ’ গ্রুপ থেকে শেষ ষোলোতে যায় স্পেন ও চিলি।

শেষ ষোলো:

কার্লোস তেভেজের জোড়া লক্ষ্যভেদের সঙ্গে গনসালো হিগুয়েইনের গোলে আর্জেন্টিনা ৩-১ গোলে হারায় মেক্সিকোকে। ব্রাজিল ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় চিলিকে, লক্ষ্যভেদ করেন হুয়ান, লুইস ফাবিয়ানো ও রবিনহো। থোমাস ম্যুলারের জোড়া গোলের সঙ্গে মিরোস্লাভ ক্লোসা ও লুকাস পোডলস্কির লক্ষ্যভেদে জার্মানি ৪-১ গোলে উড়িয়ে দেয় ইংল্যান্ডকে। সুয়ারেসের জোড়া লক্ষ্যভেদে দক্ষিণ কোরিয়াকে ২-১ গোলে হারায় উরুগুয়ে। দাভিদ ভিয়ার লক্ষ্যভেদে স্পেন ১-০ গোলে হারায় পর্তুগালকে। নেদারল্যান্ডস আবার ২-১ গোলের জয় পায় স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে।

নকআউট পর্বেও চমকে দেয় ঘানা। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১-১ গোলে নির্ধারিত সময় শেষ করার পর অতিরিক্ত সময়ে আফ্রিকার দেশটি জয় নিশ্চিত করে ২-১ গোলে। প্যারাগুয়ে-জাপানের ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় দুই দলই গোল করতে ব্যর্থ হওয়ার পর পেনাল্টি শুট-আউটে প্যারাগুয়ে ৫-৩ গোলে হারায় জাপানকে।

কোয়ার্টার ফাইনাল:

কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম ম্যাচেই ছড়ার চরম উত্তেজনা। ঘানার বিপক্ষে উরুগুয়ের ১-১ গোলে সমতায় নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় শেষ করা, লুই সুয়ারেসের হাত দিয়ে বল ঠেকানো ও লাল কার্ড এবং সবশেষে টাইব্রেকারে উরুগুয়ের ৪-২ গোলের জয়। জোহানেসবার্গের কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে লিড নেয় ঘানা। যদিও ৫৫ মিনিটে লাতিন আমেরিকার দেশটিকে সমতায় ফেরান ডিয়েগো ফোরলান। এই ১-১ গোলেই শেষ হয় নির্ধারিত সময়। এরপর অতিরিক্ত সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে গোল বাঁচাতে গোল লাইন থেকে হাত দিয়ে বল ঠেকান সুয়ারেস। সরাসরি লাল কার্ড দেখে তিনি মাঠ ছাড়লেও উরুগুয়ে টাইব্রেকার জিতে নিশ্চিত করে সেমিফাইনাল।

কেপ টাউনের কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে উড়িয়ে দেয় জার্মানি। ক্লোসার জোড়া লক্ষ্যভেদের সঙ্গে ম্যুলার ও আন্দ্রে ফ্রেদরিচের গোলে ৪-০ ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা।

ব্রাজিলও বিদায় নেয় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। ওয়েলসি স্নেইডারের জোড়া লক্ষ্যভেদে সেলেসাওদের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডস জয় পায় ২-১ গোলে। রবিনহোর লক্ষ্যভেদে ১০ মিনিটে ব্রাজিল এগিয়ে গিয়ে বিরতিতে যায় ১-০ গোলের লিড নিয়ে। কিন্তু ৫৩ ও ৬৮ মিনিটে দুই গোল করে ডাচদের সেমিফাইনালে তুলে নেন স্নেইডার।

প্যারাগুয়ের বিপক্ষে জয়ের জন্য স্পেনকে অপেক্ষা করতে হয় ৮৩ মিনিটে। শেষ ষোলোর পর কোয়ার্টার ফাইনালেও স্প্যানিশদের জয়ের নায়ক দাভিদ ভিয়া।

সেমিফাইনাল:

সুয়ারেসবিহীন উরুগুয়েকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে নেদারল্যান্ডস। কেপ টাউনের ম্যাচটি ডাচরা জেতে ৩-২ গোলে। ১৮তম মিনিটে ফন ব্রোনেকোস্টের গোলে এগিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস, ৪১ মিনিটে ডিয়েগো ফোরলানের লক্ষ্যভেদে সমতায় থেকে বিরিতিতে যায় উরুগুয়ে। এরপর ৭০ মিনিটে স্নেইডার ও ৭৩ মিনিটে আরিয়েন রবেনের গোলে ফাইনালে পৌঁছে যায় ডাচরা। ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে মাক্সি পেরেইরার গোলটি যা ব্যবধানই কমিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশটির।

জার্মানি-স্পেনের ম্যাচটি ছিল জমজমাট। ডারবানের সেমিফাইনালে দুদল সুযোগ তৈরি করে অনেক, যদিও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত ৭৩ মিনিটে কার্লেস পুয়োলের লক্ষ্যভেদে ১-০ গোলের জয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে স্পেন।

একমাত্র গোলে স্পেনকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করলেন ইনিয়েস্তা ফাইনাল:

জোনানেসবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়ামে ওড়ে স্পেনের বিজয় কেতন। প্রথমবার বিশ্বকাপে উঠেই শিরোপা ঘরে তোলে স্প্যানিশরা। তাদের এই সাফল্যের রূপকার আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ফাইনালের ১১৬ মিনিটের গোল করে বার্সেলোনা তারকা নিশ্চিত করেন স্পেনের বিশ্বকাপ।

নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয় গোলশূন্যভাবে। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ফাইনালের ৫৭ মিনিটে প্রথম হলুদ কার্ড দেখা জন হেটিনগা ১০৯ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের সঙ্গে দেখেন লাল কার্ড। ১০ জনের ডাচদের বিপক্ষে গোল করতে উঠেপড়ে লাগে স্পেন। শেষমেষ ১১৬ মিনিটে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১১৬ মিনিটে ইনিয়েস্তার গোলে বিশ্ব জয়ের আনন্দে মাতে ‘লা রোহারা’।

/কেআর/
সম্পর্কিত
অবাধ্য সেনাদের মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে রাশিয়া: হোয়াইট হাউজ
চিলির হারে কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা
বিশ্বকাপের সব উপার্জন দান করবেন এমবাপে!
সর্বশেষ খবর
যুবলীগ নেতা হলেন জুলাইযোদ্ধা, পেলেন অনুদান, তদন্তে কমিটি
যুবলীগ নেতা হলেন জুলাইযোদ্ধা, পেলেন অনুদান, তদন্তে কমিটি
নুসরাত ফারিয়া কারাগারে
নুসরাত ফারিয়া কারাগারে
প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩ জন নিহত
প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩ জন নিহত
নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে রাখার আবেদন
নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে রাখার আবেদন
সর্বাধিক পঠিত
চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে লং মার্চ টু জাহাঙ্গীর গেট
চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে লং মার্চ টু জাহাঙ্গীর গেট
আরও দুর্বল হলো টাকা
আরও দুর্বল হলো টাকা
পাঁচ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে দেশ অচলের হুঁশিয়ারি শ্রমিকদের
পাঁচ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে দেশ অচলের হুঁশিয়ারি শ্রমিকদের
ঢাকা আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী
জামায়াতের দুই নেতাকর্মীকে মারধরের পর গলায় জুতার মালা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ
জামায়াতের দুই নেতাকর্মীকে মারধরের পর গলায় জুতার মালা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ