পেশাদার ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ। এখান থেকে দুটি ক্লাব বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলে থাকে। সেই চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে একের পর এক রেফারিদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। সবশেষ সিটি ক্লাব ও বাফুফে এলিট একাডেমির ম্যাচ শেষে রেফারি জিম এম চৌধুরী নয়ন মারধরের শিকার হয়েছেন।
কমলাপুর স্টেডিয়ামে নতুন টার্ফ স্থাপনের কাজ চলায় চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ হচ্ছে পূর্বাচলের জলসিড়ি প্রকল্পের মাঠে। সেখানে গতকাল খেলা শেষেই মাঠে ঢুকে নয়ন চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আঘাতে মাঠেই লুটিয়ে পরেন নয়ন। এমনকি মাঠ ছাড়ার সময়ও তাকে মারধর করা হয়েছে। আঘাত পেয়ে রাতে চট্টগ্রামের বাসায় গিয়ে আপাতত বিশ্রামে রয়েছেন।
মূলত দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে সিটি ক্লাবের বিপক্ষে পেনাল্টি দিয়েছিলেন নয়ন। এলিট একাডেমি গোল করে ১-১ সমতা আনে। এরপর খেলা মিনিট দুয়েক চলার পর শেষ বাঁশি বেজে উঠে। তখনই সিটি ক্লাবের কেউ কেউ মাঠে ঢুকে রেফারিকে ঘুষি মারতে থাকেন। এমনটি জানিয়ে নয়ন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘আমার অপরাধ কেন পেনাল্টি দিলাম। কিন্তু ওটা তো জেনুইন পেনাল্টি হয়েছে। ওই পেনাল্টিতে সিটি ক্লাব তিন পয়েন্ট নিতে পারেনি। এই ক্ষোভ আমার ওপর দিয়ে মিটিয়েছে। ওরা এক কর্মকর্তাসহ মাঠে ঢুকে আমার ওপর হামলা করে। কোমর ও বুকসহ নানান জায়গায় ব্যথা পেয়েছি। অন্যরা না বাঁচালে বড় বিপদ হতো। হঠাৎ এমন আক্রমণে হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। কোনওমতে নিজের জীবন নিয়ে ফিরতে পেরেছি। সোজা সেখান থেকে চট্টগ্রামের বাসায় রাতেই চলে আসি। ডাক্তারের শরণাপন্ন হবো।’
১৮ বছর ধরে মাঠে বাঁশি বাজিয়ে যাচ্ছেন। কখনও এমন পরিস্থিতির শিকার হননি নয়ন, ‘আমার ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে এবারই প্রথম এমন হামলার শিকার হলাম। শুধু আমি নই, লিগে জসিমসহ আরও কয়েকজন এর আগের ম্যাচগুলোতে হামলার শিকার হয়েছে।’
এর থেকে পরিত্রাণের উপায় বলতে গিয়ে অভিজ্ঞ রেফারি বলেছেন, ‘আসলে ফুটবল খেলার আইন কানুন সবাইকে বুঝতে হবে। লিগ শুরুর আগে নিচের স্তরের খেলোয়াড় কর্মকর্তাদের নিয়ে নিয়মগুলো নতুন করে দেখাতে হবে। স্পোর্টিংলি মনোভাব থাকলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এছাড়া খোলা মাঠে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রয়োজন। এখানে অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে খেলা চালাতে হচ্ছে।’
সিটি ক্লাবের কোচ মাহবুব আলী মানিক অবশ্য হামলার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘ওটা আসলে পেনাল্টি হয় না। রেফারি ইচ্ছাকৃতভাবে বাঁশি বাজিয়েছে, আমাদের জেতা ম্যাচ ছিল। এই ম্যাচ জিতলে পয়েন্ট টেবিলে আরও এগিয়ে যেতাম। এই কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে সমর্থকরা রেফারিকে তাড়া করে। যদিও এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। রেফারির গায়ে হাত তোলা ঠিক হয়নি কিন্তু ওরকম মুহূর্তে নিজেদের আটকে রাখাও কঠিন।’
বাফুফের হেড অব রেফারিজ আজাদ রহমান ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বলেছেন, ‘এভাবে হলে রেফারিং করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাদেরকে মারধর কোনওভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি। মাঠে সবাই যদি ক্ষমতা দেখাতে চায় তাহলে তো সমস্যা। এখন পুরো বিষয়টি ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাছে যাবে।’
এদিকে, বাফুফের রেফারিজ কমিটি এখনও গঠিত না হওয়ায় রেফারিরাও তাদের সমস্যা কিংবা অন্য কোনও বিষয় নিয়ে কিছু জানাতে পারছেন না।