দিনের আলো নিভতেই আলো আঁধারির খেলা শুরু। স্তাদো দা ফ্রান্সের যেন অন্য রূপ; মিশে ছিল নানান রং। ইতিহাসে প্রথমবার এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সেইন নদীতে আয়োজন করে বিশ্ববাসীকেই চমকে দিয়েছে ফ্রান্স। সেই ধারাবাহিকতায় সমাপনীতে ছিল নানান আমেজ। বিদায় রাগিনী শেষে বেজেছে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলসের অলিম্পিক গেমসের আগমনী বার্তাও।
যা কেউ ভাবতে পারেনি তাই করে দেখানো হয়েছে। ঘড়ির কাটা ৯টা বাজতেই ফরাসি সঙ্গীত দিয়ে শুরু হয় গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠান। ফ্রান্সের জাতীয় সঙ্গীতের পর গেমসে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো পতাকা নিয়ে নানান ঢংয়ে মার্চ পাস্টে অংশ নেন। বাংলাদেশের পতাকা ছিল গেমসের এক ভলান্টিয়ারের হাতে। ছিলেন না বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদ বা কর্মকর্তাদের কেউ। যা ছিল দৃষ্টিকটূ।
গেমসে পদকজয়ী অনেক ক্রীড়াবিদকেই সমাপনীতে দেশের পতাকা বহন করতে দেখা গেছে। তাদের অনেকে নিজ নিজ দেশের পতাকা নিয়ে মঞ্চের চার পাশে বৃত্তাকারে জায়গাও করে নেন। তাতে আবার ভলান্টিয়ারদের আলাদা সম্মান জানানো হয়েছে। ভলান্টিয়ারদের উপস্থিতির মধ্যেই ক্রীড়াবিদের পদচারণায় মুখরিত হয় পুরো স্টেডিয়াম। সবার উপস্থিতিতে গান ও আলোর রোশনাইয়ে ছিল উৎসব মুখর পরিবেশ। দুই সপ্তাহের মাঠের লড়াইয়ের ক্লান্তি ভুলে ক্রীড়াবিদদের অনেকেই এক সুরে গেয়েছেন ও নেচেছেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্যেই পুরস্কার প্রদান হয়েছে নারী ম্যারাথনের। আইওসি সভাপতি টমাস বাখ ও বিশ্ব অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সভাপতি সেবাস্তিয়ান কো উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের পদক তুলে দিয়েছেন। নেদারল্যান্ডস স্বর্ণ জেতায় তাদের জাতীয় সঙ্গীত বাজে। তাদের অ্যাথলেট হাসানের যেন খুশি ধরছিল না। এরপর গত দুই সপ্তাহের গেমসের নানা মুহূর্ত ডিসপ্লে করে এক ঝলকে পিছনেও ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
অ্যাথলেট কমিশনের নতুন চার সদস্য আমেরিকান দৌড়বিদ অ্যালিসন ফেলিক্স, জার্মান জিমন্যাস্ট কিম বুই, অস্ট্রেলিয়ান ক্যানয়িস্ট জেসিকা ফক্স ও কিউই টেনিস তারকা মার্কাস ড্যানিয়েলকে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে নিজেদের কাজ সেরেছে আইওসি।
এরপরই শুরু হয় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মাঠের মাঝখানে মঞ্চে হাজির হন বংশীবাদকরা। বাঁশি বাজানোর সঙ্গে চলতে থাকে আলো ও শব্দের খেলা। পনেরো মিনিট আলো-শব্দ-প্রযুক্তির খেলায় স্টেডিয়ামে ভর্তি দর্শকরা বুঁদ হয়ে থাকেন। প্রযুক্তির মাধ্যমে আলো-আঁধারে চলে পিক্টোগ্রাম। শূন্যে থেকেও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন বাদকরা। অলিম্পিকের লোগো পাঁচ বৃত্তও ছিল সমাপনীর মঞ্চে। শেষ দিকে শূন্য থেকে এসে হলিউড তারকা টম ক্রুজ জানিয়ে গেলেন, ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলসের অলিম্পিকের বার্তা।
কেমন হলো এবারের প্যারিস অলিম্পিক?
ফ্রান্সের বাসিন্দা অ্যানি লরে তো বেশ খুশি। সমাপনী অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে বললেন, ‘আমরা অনেক খুশি এমন সুন্দর গেমস আয়োজন করতে পেরে। এই অলিম্পিক গেমসের মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশের ক্রীড়াবিদরা অংশ নেয়। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।’
এমন মন্তব্য করে গ্যালারিতেই অন্যদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছিলেন তিনি। গান-বাজনা সহ নানা আয়োজনের আগে প্যারিস অলিম্পিকে টানা চার আসরে পদক তালিকায় সবার ওপরে থেকে শেষ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার তারা জিতেছে ৪০ সোনা, ৪৪ রুপা ও ৪২ ব্রোঞ্জ মিলিয়ে ১২৬টি পদক।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীন পেয়েছে ৪০টি সোনা, ২৭টি রুপা ও ২৪টি ব্রোঞ্জসহ মোট ৯১টি পদক। ২০টি সোনা, ১২টি রুপা ও ১৩টি ব্রোঞ্জসহ মোট ৪৫টি পদক নিয়ে তালিকায় তৃতীয় স্থানে জাপান।
স্বাগতিক ফ্রান্স ১৬টি সোনা, ২৬টি রুপা ও ২২টি ব্রোঞ্জসহ ৬৪টি পদক নিয়ে পঞ্চম স্থানে।
দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর মধ্যে পদক জয়ের স্বাদ পেয়েছে শুধু পাকিস্তান ও ভারত। বর্শা নিক্ষেপে অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে পাকিস্তানকে সোনা এনে দিয়েছেন আরশাদ নাদিম। এই একটি পদক নিয়ে তালিকায় ৬২তম স্থানে আছে তারা। সোনা জয়ের স্বাদ এবার নিতে পারেনি ভারত। ১টি রুপা ও ৫টি ব্রোঞ্জ জিতে তালিকায় তারা জায়গা করেছে ৭১তম স্থানে।
বিপরীতে বাংলাদেশের প্যারিস অলিম্পিক অভিযান শেষ হয়েছে অনেক আগেই। পাঁচ জনের মধ্যে সামিউল শুধু ব্যক্তিগত সেরা নৈপুণ্য ছাড়িয়ে যেতে পেরেছেন।
তবে অলিম্পিকের মতো আসরে পদক কিংবা ভালো ফল করতে হলে যে, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দরকার সেটি আবারও ফুটে উঠেছে।