অফিসে জরুরি মিটিংয়ে বসেছেন। হঠাৎ মোবাইলফোনটা বেজে উঠল। জরুরি ফোন ভেবে রিসিভ করলেন। কানে ঠেকাতেই ওপ্রান্ত থেকে ভেসে এলো, ‘জনপ্রিয় শিল্পী… এর গান শুনতে চাইলে ডায়াল করুন… নম্বরে।’ মেজাজ বিগড়ে খেই হারিয়ে ফেললেন। মিটিংয়ের ১২টা বাজল।
আপনি খেয়াল করলেন, মোবাইলের মেসেজ বক্স ফুল (ভর্তি) হয়ে গেছে। একটি পুরনো মেসেজ খুঁজে বের করা প্রয়োজন আপনার। কিন্তু এতো মেসেজের ভিড়ে সেই মেসেজটি আর খুঁজে পেলেন না। মোবাইলফোন অপারেটর ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভয়েস কল, এসএমএস –এর মাধ্যমে অফার পাঠাচ্ছে।কিন্তু গ্রাহক তা চান কিনা, বিরক্ত হচ্ছেন কিনা সেসব ভাবছে না। গ্রাহক চাইলেও -এর থেকে কোনও প্রতিকার পাচ্ছেন না।
সম্প্রতি মোবাইলফোনের মাধ্যমে এ ধরনের ‘অত্যাচার’ বাড়ছে। যখন-তখন ফোন কল (শর্টকোড থেকেও),এসএমএস, এমএমএস, এসে ব্যবহারকারীকে যন্ত্রণা দিচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। হালে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শুরু হয়েছে আরেক যন্ত্রণা। শুভেচ্ছা মেসেজের পাশাপাশি শুরু হয়েছে ‘বিজ্ঞাপন তরঙ্গ।’ হাজারও ছাড় আর অফারের মেলা। গ্রাহক এসব চাচ্ছেন কিনা সেসবে মনোযোগ নেই কারও।
আরও পড়তে পারেন: মোবাইলফোনের চার্জ হবে হেঁটেই
অনেকে জানতে চেয়েছেন এর থেকে প্রতিকারের উপায়। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি কী বলে? সংস্থাটির সচিব সরওয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে জানালেন, এ বিষয়ে গত বছর বিটিআরসি ‘ডিরেক্টিভস অন সার্ভিস অ্যান্ড ট্যারিফ’ বিষয়ক একটি নির্দেশনা জারি করেছে। ওই নির্দেশনাতেই গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। মোবাইল গ্রাহক যিনি এসব সেবা চাইবেন না তিনি তার প্রতিকার ওতেই চাইতে পারেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মোবাইলফোন অপারেটরদের এসব সেবা কেউ না চাইলে তিনি সংশ্লিষ্ট অপারেটরের নির্দিষ্ট নম্বর এসএমএস বা কল করে ওই সেবা বন্ধ করতে পারবেন। আর এটি বন্ধ করা গেলে যখন-তখন মোবাইলে শুনতে হবে না জনপ্রিয় শিল্পীর গান, পাওয়া যাবে না প্লট-ফ্ল্যাটের অফার, বেড়াতে যাওয়ার লোভনীয় অফার, স্বল্প খরচে আকাশপথ পাড়ি দেওয়ার সুযোগ, তারকাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার মওকা, বিশেষ ও বর্ধিত ছাড়ে পণ্য কেনার অফার।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিজেকে উদ্ধৃত না করে বলেন, মোবাইল অপারেটরদের এই সুবিধার কথাটি গ্রাহকরা জানেন না। কোনও গণমাধ্যমে সে ধরণের প্রচার-প্রচারণা না থাকায় বিষয়টি যন্ত্রণাভোগকারীদের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে গেছে। প্রচারণা থাকলে যিনি সমস্যা বোধ করছেন তিনি এই সেবা বন্ধ করে দিতে পারতেন।
আরও পড়তে পারেন: স্মার্টফোনে রাখা যাবে পাসপোর্ট
এ বিষয়ে গ্রামীণফোন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গ্রামীণফোনের কোনও গ্রাহক এসব সেবা পেতে না চাইলে তিনি তা বন্ধ করে দিতে পারেন। গ্রামীণফোনের ১২১ নম্বরে ফোন করে মোবাইলফোন ব্যবহারকারী এই সেবা বন্ধের জন্য অনুরোধ জানাতে পারবেন। অনুরোধ জানালে গ্রামীণফোন এসব বন্ধ করে দেয়। তবে গ্রামীণফোন বিবৃতিতে দাবি করে, এসব বিজ্ঞাপন গ্রাহকের প্রাত্যহিক জীবনে বিশেষ ভ্যালু অ্যাড করে। গ্রাহকরা এসব বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যয় সাশ্রয়ী প্যাকেজ ও মূল্যছাড়ের অফার সম্পর্কে জানতে পারেন। অপারটরটি বলে, এ সুবিধা বন্ধ করার পরে অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন, কোনও অফার পাচ্ছি না, কিছুই জানতে পারছি না। একারণে গ্রামীণফোন মনে করে, এসব গ্রাহকের কল্যাণের জন্যই।
আরও পড়তে পারেন: সেলফি তোলার উড়ন্ত স্টিক
এদিকে রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবির জানান, রবিরও এই সেবা বন্ধ করার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, রবির গ্রাহকরা ১২৩ নম্বরে ফোন দিয়ে ডিএনডি (ডু নট ডিস্টার্ব) সেবা চালুর জন্য বলবেন। বলতে হবে, আমি এই সেবা চাই না। তাহলে ওরা (মোবাইলের অপর প্রা্ন্ত থেকে) সংশ্লিষ্ট ফোনদাতাকে ডিএনডি ক্যাটাগরিতে ফেলে দেবে। তখন প্রমোশনাল কোনও কিছু আর মোবাইলে আসবে না।
এসব অফার, বিজ্ঞাপন বন্ধ করার সুবিধা বাংলালিংক ও এয়ারটেলেও রয়েছে। বাংলালিংকের জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, বাংলালিংকের গ্রাহকরা এই প্রমোশনাল এসএমএস না চাইলে বন্ধ করে দিয়ে ঝামেলাবিহীন থাকতে পারেন। বাংলালিংকের গ্রাহকদের মেসেজ অপশনে গিয়ে অফ (OFF) লিখে ৬১২১ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। তাহলে বন্ধ হবে অপারেটরের বিজ্ঞাপন সেবা।
এপিএইচ/