X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যন্ত অঞ্চলে ‘ওয়াইফাই হাট’ দিয়ে ইন্টারনেট সেবা কার্নিভালের

রুশো রহমান
১১ এপ্রিল ২০২১, ১৭:২৩আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২১, ১৮:৪০

সুনামগঞ্জের ছাতকের একটি গ্রাম গণেশপুর। এই গ্রামেই রয়েছে মেসার্স মানিক স্টোর। মানিক স্টোরে বসে ছিলেন এ গ্রামেরই রেজওয়ানুল হক। রেজওয়ানুল সরকারি চাকরিপ্রার্থী। তবে কিছু দিন আগে রূপালী ব্যাংকে পরীক্ষা দিলেন। আগে একটা সময় চাকরির ফরম হাতে পূরণ করতে হতো। কিন্তু এখন সবটাই হয় অনলাইনে। সুরমা নদীর ওপারে থাকেন বলে আগে ব্রডব্যান্ড সুবিধা ছিল না, দোকানে গিয়ে মডেমের সাহায্যে অনলাইনে চাকরির ফরম পূরণ করতে হতো। ভালো ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় একটা ওয়েবপেজ লোড হতেই তিন চার মিনিট লেগে যেত। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় কোনও ফাইবার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা সেখানে পৌঁছেনি। গেলো জানুয়ারিতে কার্নিভাল ইন্টারনেট এক বিশেষ ব্যবস্থায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিয়ে আসে এই গ্রামে। গ্রামে ওয়াইফাই হাট (স্পট) তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে।

রেজওয়ানুল হক বললেন, ওয়াইফাই লাইন আসার পর থেকে এখন আর কোনও সমস্যা হয় না। মানিকের দোকানে এসে নিজের ফোনেই ফরম পূরণ করি, বেশিক্ষণ লাগে না। মানিকের দোকানে বসে বইও অর্ডার করেছি ঢাকা থেকে। অনলাইনে অর্ডার করার পরে আমার বাড়িতে এসে দিয়ে গেছে। কার্নিভাল ‘ওয়াইফাই হাট’ না এলে আমাকে অনেক জায়গা ঘুরে শহরে গিয়ে বই কেনা লাগতো। এখন ঘরের কাছেই সব পাচ্ছি। এই দোকানে ওয়াইফাই কার্ড পাওয়া যায়। যখন যতটুকু লাগে, কিনে ব্যবহার করি।  স্পিড অনেক। ডাটা নিয়ে কোনও চিন্তা নাই, আনলিমিটেড।  

সৃজনশীল এই উদ্যোগের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম কার্নিভাল ইন্টারনেটের পরিচালক জামান খানের কাছে, যার হাত ধরে কার্নিভাল ইন্টারনেট যাত্রা শুরু করে আজ সারাদেশে বিস্তৃতি লাভ করেছে।

বাংলা ট্রিবিউন: ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় কি?

জামান খান: বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ে এখনও ইন্টারনেট সুবিধা সেভাবে পৌঁছেনি। বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে শহরের বাইরে ব্রডব্যান্ড সংযোগ এখনও বেশ সীমিত। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কার্নিভাল মনে করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের সবার। এই দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকেই আমরা শহরের বাইরে যেখানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা এখনও পৌঁছেনি, সেখানে তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। সাধারণত দেখা যায় কেন্দ্র থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক নিয়ে যাওয়ার খরচ অনেক বেশি, এরপর গ্রাহক পর্যায়ে সেই সেবা পৌঁছাতে খরচ আরও বেড়ে যায়। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা তো আছেই। কিন্তু আমরা আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা দেশের সব এলাকার গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যেতে পারবো।

 গ্রাম ও শহরে ইন্টারনেট সেবার মানের তারতম্য নিরসনে কার্নিভাল কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?

-চ্যালেঞ্জের জায়গাটা আমি আগেও বলেছি। হাইস্পিড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার জন্য যে ধরনের ‘ইউজার বেজ’ থাকা দরকার, মাসিক আয় দরকার, সেই অর্থনৈতিক জায়গাটা এখনও তৈরি হয়নি। পাশাপাশি গ্রামে মোবাইল ইন্টারনেট সেবাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। এই বিষয়গুলোই গ্রাম ও শহরে ইন্টারনেট সেবার মানে একটা বিভেদ তৈরি করে।

জামান খান আমাদের ডটলাইন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহবুবুল মতিন বর্তমান সরকারের ‘রূপকল্প ২০২১’-এর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লিখিত ‘গ্রাম হবে শহর’-এই মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে শহর এবং গ্রামের মানুষের ভেতর ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য ‘কার্নিভাল গো রুরাল’ প্রকল্পটি চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে হাইস্পিড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা। মানুষ যেন গ্রামে থেকেই শহরের মানের শিক্ষা, বিনোদন, অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বিভিন্ন সুবিধা পেতে পারে। ইতোমধ্যে কার্নিভাল এই সেবা নিয়ে পৌঁছে গেছে দেশের ৪৮ জেলার ১৮২ উপজেলার সাড়ে ১১ হাজার গ্রামে।  এক লাখ গ্রাহক পরিবার এবং প্রায় পাঁচ লাখ ওয়াইফাই গ্রাহক এখন আমাদের সঙ্গে। 

অর্থনীতিবিদরা আশাবাদী বাংলাদেশ ২০৫০ সালের মধ্যে শীর্ষ আয়ের দেশে পরিণত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আরও সহজলভ্য করার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আরও বড় বিপ্লব নিয়ে আসা সম্ভব এবং ২০৫০ সালের আগেই আমরা শীর্ষ আয়ের দেশে পরিণত হবো।

আগামীতে প্রান্তিক পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানোর ব্যাপারে কার্নিভালের পরিকল্পনা কী?

-আমাদের মূল পরিকল্পনা হলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষগুলোকে সুলভে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার আওতায় নিয়ে আসা। এই লক্ষ্য পূরণে কার্নিভাল পৌঁছে গেছে সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতেও। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ওপারের সঙ্গে স্থলযোগাযোগ না থাকায় যেখানে কোনও  ব্রডব্যান্ড সুবিধা ছিল না, এখন সেখানে পাওয়া যাচ্ছে কার্নিভালের ফাইবার ইন্টারনেট। এছাড়া টেকনাফ, তেতুলিয়া, হিলি, বুড়িমারি, তামাবিল, দর্শনা, বাংলাবান্ধা, সোনামসজিদের মতো দূরের স্থলবন্দরগুলোতে কার্নিভালের ব্রডব্যান্ড সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। আগে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের অভাবে গ্রামের সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ তেমন ছিল না। এখন আছে। আমরা বিশ্বাস করি, কার্নিভাল ইন্টারনেট শহর এবং গ্রামের ডিজিটাল বিভেদ কমাতে সক্ষম হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

জামান খান: বাংলা ট্রিবিউনকেও ধন্যবাদ

 

/এইচএএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!