X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘পৃথিবীর কোথাও এত কম ট্রান্সমিশন চার্জ নেই’

হিটলার এ. হালিম
০৮ অক্টোবর ২০২২, ১০:০০আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২২, ১০:০৭

সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আরিফ আল ইসলাম বলেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্যাবলের সংখ্যা কম। দেশে বেশ কয়েকটি সাবমেরিন ক্যাবলের চাহিদা আছে। সে হিসেবে বেসরকারি খাতে সাবমেরিন ক্যাবল- সরকারের ভালো একটা উদ্যোগ।

তিনি আরও বলেন, ৭-৮ বছর আগে দেশে ব্যান্ডউইথের ট্রান্সমিশন চার্জ ছিল দুই থেকে তিন হাজার টাকা। বর্তমানে যা ৩০-৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে খুব কম খরচে ব্যান্ডউইথ ট্রান্সমিশন করা হচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও এত কম ট্রান্সমিশন চার্জ নেই। বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

বাংলা ট্রিবিউন: সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দেওয়া হলো। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

আরিফ আল ইসলাম: পৃথিবীর সব দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সাবমেরিন ক্যাবল আছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্যাবলের সংখ্যা কম। ফিলিপাইনে ১১টি সাবমেরিন ক্যাবল, ভারতে ১৭টি, পাকিস্তানে সাতটি, ভিয়েতনামে ছয়টি, শ্রীলংকায় পাঁচটি ও থাইল্যান্ডে আটটি সাবমেরিন কেবল রয়েছে বলে আমরা জানি। উপরোক্ত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে দেশে বেশ কয়েকটি সাবমেরিন ক্যাবলের চাহিদা আছে। সে হিসেবে এটা সরকারের ভালো একটা উদ্যোগ।

বাংলা ট্রিবিউন: যে বিশাল বিনিয়োগ হবে সেই তুলনায় কি বাজার তৈরি?

আরিফ আল ইসলাম: বাজারে আমাদের ব্যান্ডউইথের বৃদ্ধির হার কত হবে তার ওপর নির্ভর করছে বিনিয়োগ সুবিধা আছে কিনা। কোনও বিনিয়োগের আগে একটি মার্কেটের ওপর ফোরকাস্ট করা হয় অনুমানের ওপর ভিত্তি করে। তাতে অনেকগুলো প্যারামিটার থাকে। ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার—এই দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করা যায়। এরা ডেটা কনজাম্পশনের (ব্যান্ডউইথের ব্যবহার) দিক থেকে আমাদের চেয়ে ২০-১০০ শতাংশ এগিয়ে আছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে নেপালের চেয়ে একটু ওপরে। সেই হিসাবে বাংলাদেশের অনেক বেশি ডেটা বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। আগামী ৭-১০ বছরে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ ২৫-৩০ টেরাবাইটে যেতে পারে। বর্তমানে যার পরিমাণ মাত্র ৪ টেরাবাইট। ডেটার ব্যবহার বৃদ্ধি পায় সবার হাতে স্মার্টফোন থাকলে। কিন্তু স্মার্টফোনের দাম বেশি হওয়ায় সবার হাতে স্মার্টফোন নেই। দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান স্মার্টফোন উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করেছে। আমরা আশা করতে পারি এর ফলে স্মার্টফোনের দাম কমে আসবে। কম দামে স্মার্টফোন সরবরাহ করা হলে ডেটার (ইন্টারনেট) ব্যবহার বাড়বে। পাশাপাশি দেশের সব জায়গায় সম্পূর্ণভাবে ফোরজি চালু হলেও ডেটার ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে ।

বাংলা ট্রিবিউন: বেসরকারি খাতের সাবমেরিন ক্যাবলে দেশ সংযুক্ত হওয়ার পরে যদি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যান্ডউইথ উদ্বৃত্ত থাকে তাহলে রফতানি করা যাবে?

আরিফ আল ইসলাম: দেশের সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই-৫-এর আওতায় মধ্যপ্রাচ্যে ব্যান্ডউইথ রফতানি করা হচ্ছে। তবে আমরা এই মুহূর্তে শুধু বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর কানেকটিভিটির পরিকল্পনা করছি। সিঙ্গাপুরের সঙ্গে কানেকটিভিটি তৈরি হলে পৃথিবীর সমস্ত ডাটা সেন্টারের তথ্য সেখান থেকে পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের এক্সপোর্টের সম্ভাবনা কম, যদি আমরা সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে অন্যান্য ইস্ট বাউন্ড ও ওয়েস্ট বাউন্ড রুটে কানেকটিভিটি স্থাপন করি তাহলে সেই সব কানেকটিভিটি রুটে রফতানির সম্ভাবনা থাকতে পারে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রতিষ্ঠানের (সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড) এনটিটিএন লাইসেন্স আছে। দেশে আপনাদের কাভারেজের পরিমাণ কেমন?

আরিফ আল ইসলাম: এনটিটিএনে (নেশানওয়াইড টেলিকমিউনিকেশস ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) আমাদের কাভারেজের পরিমাণ ৪৭ হাজার কিলোমিটার। দেশের প্রতিটা জেলা ও উপজেলা এবং ৩০ শতাংশ ইউনিয়নে আমাদের কাভারেজ রয়েছে। সময়ের সঙ্গে এটা বাড়ছে। তবে যেটুকু কাভারেজের আওতায় রয়েছে, সেখানেও ক্যাপাসিটি বাড়ানোর সুযোগ আছে।

আরিফ আল ইসলাম

বাংলা ট্রিবিউন: এনটিটিএন সেবায় সরকারের দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

আরিফ আল ইসলাম: সরকার আসলে অনেক কম দামে সীমা বেঁধে দিয়েছে। আগের দামের তুলনায় এই দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। তবে এই দামও যদি স্থায়ী হয় তাহলে সহজলভ্যতার কারণে মার্কেট বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

বাংলা ট্রিবিউন: আইএসপিদের (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) অভিযোগ ছিল আপনারা ট্রান্সমিশন চার্জ বেশি নেন। দাম বেঁধে দেওয়ায় কি সংকট কাটবে?

আরিফ আল ইসলাম: সাত থেকে আট বছর আগে ব্যান্ডউইথের ট্রান্সমিশন চার্জ ছিল দুই থেকে তিন হাজার টাকা। সেই চার্জ বর্তমানে ৩০-৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সেই হিসাবে দাম ৯৫ থেকে ৯৭ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে খুব কম খরচে ব্যান্ডউইথ ট্রান্সমিশন করা হচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও এত কম ট্রান্সমিশন চার্জ নেই।

বাংলা ট্রিবিউন: ঢাকা শহরে বাড়ি বাড়ি এনটিটিএন ক্যাবল পৌঁছাতে কতদিন লাগতে পারে?

আরিফ আল ইসলাম: আমাদের দেশে এই বিষয়ে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। এটা আসলে আমাদের দায়িত্ব নয়, আইএসপিদের (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) দায়িত্ব। আমরা যেসব জায়গায় আন্ডারগ্রাউন্ড সেবা নিয়ে গেছি আইএসপিদেরকে আমাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা এনফোর্স করতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: বাড়ি বাড়ি ক্যাবল পৌঁছানোর ব্যাপারে আপনাদের কোনও পরিকল্পনা আছে?

আরিফ আল ইসলাম: আমরা এ বিষয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সঙ্গে যাওয়া সম্ভব হলে আমরা বাসায় বাসায় আন্ডারগ্রাউন্ড ফাইবার অপটিকস কানেকটিভিটি স্থাপন করতে রাজি আছি। তবে এক্ষেত্রে স্বপ্রণোদিত হয়ে আমাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: ঢাকা শহরে ঝুলন্ত তার অপসারণের বিষয়ে আপনাদের উদ্যোগ কী ?

আরিফ আল ইসলাম: ঢাকা শহরের ঝুলন্ত তার অপসারণের জন্য বিটিআরসির নেতৃত্বে সবাইকে নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের প্রতিনিধিত্ব থাকবে এবং সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বিটিআরসিকে ৩ থেকে ৫ বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পনা করতে হবে। সংস্থাটি চাইলে এই কাজ করা সম্ভব। বিটিআরসি ইতোমধ্যে গত এক দশকে এনটিটিএন’র সহায়তায় সারা বাংলাদেশে এক লাখ কিলোমিটারের বেশি ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক স্থাপনের মত একটি অসাধারণ উদ্যোগ সফল করে তাদের সক্ষমতা দেখিয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রতিষ্ঠানের একাধিক টেলিকম লাইসেন্স রয়েছে। আগামীতে সরকার লাইসেন্সের জঞ্জাল কমাতে ইউনিফায়েড লাইসেন্স দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। ইউনিফায়েড লাইসেন্সের সুবিধা সম্পর্কে যদি বলতেন?

আরিফ আল ইসলাম: বাংলাদেশে ইউনিফায়েড লাইসেন্সের গাইডলাইন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এটি এখনও আমাদের কাছে ধারণা পর্যায়ে আছে। আমি মনে করি, লাইসেন্সে বিভিন্ন লেয়ার (স্তর) থাকার চেয়ে ইউনিফায়েড লাইসেন্স থাকা ভালো। তাহলে দেশের বাইরেও ভাবমূর্তি ভালো থাকে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এতগুলো লাইসেন্সের বিষয়গুলোকে জটিল বলে মনে করেন। তবে এই খাতের সব প্রতিষ্ঠানকে (লাইসেন্স গ্রহীতা) বিশেষ করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রেখে কীভাবে কাজটি করা যায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমার দৃষ্টিতে ধারণাগত দিক দিয়ে এটা একটা ভালো উদ্যোগ ।

/এমআর/
সম্পর্কিত
আইসিটির ‘ট্যাক্স হলিডে’ নিয়ে কাজ করতে হবে: নিয়াজ মোর্শেদ এলিট
ওয়ালটনের চিফ বিজনেস অফিসার মোস্তফা নাহিদ হোসেন‘দেশের টেলিভিশন বাজারের ৩০ শতাংশ ওয়ালটন টিভির দখলে’
যমুনা ইলেকট্রনিক্সের মার্কেটিং ডিরেক্টর সেলিম উল্যা সেলিম‘টিভি দেখার এক নতুন অভিজ্ঞতা এনে দিলো যমুনা টিভি’
সর্বশেষ খবর
পশ্চিম তীরে ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো ইসরায়েলি সেটেলাররা
পশ্চিম তীরে ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো ইসরায়েলি সেটেলাররা
রিক্রুটিং এজেন্সিকে মানবিক হওয়ার আহ্বান প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর
রিক্রুটিং এজেন্সিকে মানবিক হওয়ার আহ্বান প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর
চুয়াডাঙ্গায় বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৪০.৬ ডিগ্রি
চুয়াডাঙ্গায় বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৪০.৬ ডিগ্রি
জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ী স্ট্রাইকার পরপারে
জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ী স্ট্রাইকার পরপারে
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’