X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেমন নগর ম্যানেজার চাই

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৫ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:২২আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:২৪

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আসন্ন। উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে বিভাজিত, কিন্তু এটি আসলে একটি শহর। ঢাকা সিটি করপোরেশন কেন্দ্রে অবস্থিত সবচেয়ে বড় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। তাই এর মেয়রদের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও তেমনই বড়। 
প্রথমত, নগরবাসী অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। যিনি মেয়রের আসনে বসবেন তিনি নিজে মন্ত্রীর পদমর্যাদা পাবেন, গাড়িতে, বাড়িতে জাতীয় পতাকা ওড়াতে পারবেন। কিন্তু তিনি নগরবাসীকে কী দেবেন? কিংবা তার দেওয়ার সাধ্য কতটুকু? রাজধানীর মেয়র, কিন্তু বাস্তবতা হলো এমন, এই মহানগরীর মেয়রের হাতে কার্যত কোনও ক্ষমতা নেই। তিনটি দৃশ্যমান কাজ আছে সিটি করপোরেশনের—সড়কে বাতি লাগানো, আবর্জনা পরিষ্কার করা এবং মশক নিধন করা।
কিন্তু আর সব কাজের জন্য তাকে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারস্থ হতে হয়। এই শহরের সব রাস্তার মালিক সিটি করপোরেশন, কিন্তু এই রাস্তায় যে যানবাহন চলে তাকে শৃঙ্খলায় আনার ক্ষমতা নেই মেয়রের। কোনও যানবাহনের চালক বা মালিক অন্যায় করলে, সিটি করপোরেশন সরাসরি কোনও অ্যাকশন নিতে পারে না। সেই গাড়িচালকের লাইসেন্স বাতিল করতে পারে না, গাড়ির রুট পারমিট বাতিল করতে পারে না। এ কাজ করতে পারে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিআরটিএ এবং প্রায়োগিক দিক থেকে ট্রাফিক পুলিশ। আমলানির্ভর কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা। এর ওপর যেটি আরও সত্য তা হলো, পরিবহন খাত যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তাকেও কিছু বলার সক্ষমতা মেয়রের নেই। 

মানুষ এমন মেয়র চায় যার নগরবাসীর প্রতি দায়িত্বানুভূতি থাকবে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন, যেকোনও সমস্যা সমাধানে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে, যিনি সৎ এবং সাহসী ভূমিকা পালন করতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে এটা কি আদৌ সম্ভব? 

আমাদের এই মহানগরের চারপাশের নদীগুলো দখলে দখলে আজ  বিলুপ্তির পথে। দখল উচ্ছেদের ক্ষমতা নেই সিটি করপোরেশনের হাতে। গুটি কয়েক জায়গা বাদে সারা শহরের পথঘাট খানাখন্দে ভরা ও অপরিচ্ছন্ন থাকছে। তার ওপর বৃষ্টির পানি জমে অত্যন্ত খারাপ অবস্থা থাকে সবসময়। অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। যারা এই রাস্তা দীর্ঘ সময় খোঁড়াখুঁড়ি করছে, উন্নয়নের কাজ করার নামে অর্ধ বা অসমাপ্ত করে ফেলে রাখছে, এই নগরীর মানুষের হয়ে, তার ভোটারদের পক্ষ নিয়ে সেইসব কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করতে পারছেন না মেয়র। 

পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের কাজ করার জন্য ওয়াসা নামের প্রতিষ্ঠানটিকে কেন সিটি করপোরেশনের অধীনে ন্যস্ত করা যাবে না, সেটা নগরবাসীর বোধগম্য হয় না। সিটি করপোরেশন ফুটপাত বানাবে, কিন্তু সেই ফুটপাতে যদি একটি বিদ্যুতের খাম্বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তবে মেয়র সেটি সরাতে পারেন না। করপোরেশনকে বিদ্যুৎ বিভাগের করুণাপ্রার্থী হতে হয়।  

এরকম অনেক দৃষ্টান্ত দেওয়া যাবে। কিন্তু তবুও মানুষ আশা করে মেয়র তাদের প্রত্যাশার কিছুটা হলেও পূরণ করবেন। ক্ষমতা সীমিত হলেও মানুষের জন্য যে কিছু করা যায়, সেটি দেখিয়ে গেছেন ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি পরিকল্পনা করে, মেধা, সততা আর দৃঢ়তার সঙ্গে এমন কিছু কাজ করেছেন যা অতীতের কোনও মেয়র কখনও করতে পারেননি। তিনি দৃষ্টি দূষণ কমাতে অত্যন্ত শক্তিশালী কিছু প্রতিষ্ঠানেরও বিলবোর্ড, পোস্টার সরাতে পেরেছিলেন। রাস্তা সম্প্রসারণ করতে গিয়ে অনেক অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দিয়েছেন। 

তাই একটা প্রত্যাশা এখন তৈরি হয়েছে, সেই ব্যক্তিরই মেয়র হওয়া উচিত যিনি নগর ভবনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কঠোর, নাগরিক সংকট দূরীকরণে আন্তরিক, নাগরিক সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারবেন এবং একটি পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে যিনি কাজ করবেন পুরোপুরি অঙ্গীকার নিয়ে। 

নগরবাসীদের প্রত্যাশাগুলো আকাশকুসুম নয়। নাগরিক সেবা পরিষেবার অনেক প্রাথমিক চাহিদা পূরণ করা ঢাকা সিটি করপোরেশনের পক্ষে নিতান্ত অসম্ভবও নয় যদি করপোরেশনের কাউন্সিলররা ওয়ার্ড পর্যায়ে ঠিকমতো কাজগুলো করেন। কিন্তু আমরা এটা জানি কারা বা কোন ধরনের ব্যক্তিরা কাউন্সিলর হন। তারা যতটা ব্যস্ত থাকেন নিজস্ব আয় রোজগারের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে, ততটা থাকেন না তার এলাকার মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে। মেয়র যদি একটু আন্তরিক হন, সচেষ্ট হন, সক্ষম হন, তাহলে  অনেক কাজের দায়িত্ব সক্ষম কাউন্সিলরদের মধ্যে বণ্টন করে তিনি নিজে নজরদারির দায়িত্ব নিতে পারেন। তাহলেই বহু দূর কাজ হয়। আসলে মেয়রের একমাত্র কাজ নজরদারিই। কোন বিভাগ কেমন কাজ করছে, সেসব কাজে সমন্বয় সাধিত হচ্ছে কিনা, সেটা তিনি খেয়াল রাখবেন। 

সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন মেয়র, যেটা করতে দেখেছি আনিসুল হককে। কত বড় ঝুঁকি নিয়ে তিনি তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডকে ট্রাক ও গুন্ডামুক্ত করেছেন, সেটা আমরা দেখেছি। অনেক মেয়রই সেই ঝুঁকি নেওয়ার মতো সাহস ও আন্তরিকতা দেখাবেন না।  

একথাও সত্য, সমস্যা শুধু নগরের বা সিস্টেমের নয় বা ব্যক্তির অক্ষমতা নয়। সমস্যা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির। সেই সংস্কৃতিকে মোকাবিলা করে কাজ করার প্রত্যয় মেয়রের মাঝে দেখতে চায় নগরবাসী। অদক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আসলে অনেক সমস্যা আর সীমাবদ্ধতা আছে জেনেও মানুষ এই নগরীর জন্য দু’জন ভালো ম্যানেজার চায়। 

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা  

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ