করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগকালেও রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর। ছাড়িয়ে গেছে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাও।
এবার বন্দরটির জন্য এনবিআর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩১৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের শেষ হওয়া ১১ মাসে (জুলাই-মে) আহরণ করতে হতো ৩১২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। তবে এ সময়ে বন্দরটি রাজস্ব আহরণ করেছে ৩৭০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। যা এই ১১ মাসের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা বেশি।
যদিও সদ্য সমাপ্ত মে মাসে অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। এ মাসে ৩২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আহরণের কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ২০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ কোটি ২৩ লাখ টাকা কম।
বন্দরের শুল্ক স্টেশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩১৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছিল ৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগস্টে ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিপরীতে ২০ কোটি ৮৬ লাখ; সেপ্টেম্বরে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকার বিপরীতে ২০ কোটি ৬৩ লাখ; অক্টোবরে ১৮ কোটি ১০ লাখ টাকার বিপরীতে ১৮ কোটি ৬৮ লাখ; নভেম্বরে ৩১ কোটি ৯ লাখ টাকার বিপরীতে ২৬ কোটি ৬০ লাখ; ডিসেম্বরে ৫১ কোটি ১৬ লাখ টাকার বিপরীতে ২২ কোটি ২১ লাখ; জানুয়ারিতে ২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বিপরীতে ২০ কোটি ৮১ লাখ; ফেব্রুয়ারিতে ২৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বিপরীতে ৪৭ কোটি ১৯ লাখ; মার্চে ২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার বিপরীতে ৬১ কোটি ৩৪ লাখ; এপ্রিলে ৩১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বিপরীতে ৬৮ কোটি ৬২ লাখ এবং মে মাসে ৩২ কোটি ৪৭ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০ কোটি ২৩ লাখ টাকা আহরণ হয়।
গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ১১ মাসে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৭১ কোটি ৬১ লাখ টাকা; এর বিপরীতে আহরণ হয়েছিল ১৮৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সে সময় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা কম রাজস্ব আহরণ হয়েছিলো।
হিলি স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের উপকমিশনার মো. কামরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্বের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১১ মাসেই এর চেয়ে ৫৮ কোটি টাকা বেশি আহরণ হয়েছে। অর্থবছরের আরও এক মাস বাকি রয়েছে। এই সময়ে রাজস্ব আহরণ হবে।
তিনি বলেন, বাড়তি রাজস্ব আহরণের মূল কারণ হলো- বন্দর দিয়ে গম, ভুট্টা, খৈল, ভুসি, পাথর, বিভিন্ন মসলা জাতীয় পণ্যসহ প্রচুর পরিমাণে চাল আমদানি হওয়া। দেশের বাজারে চালের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোয় চলতি অর্থবছরে এই বন্দর দিয়ে এক লাখ ৭১ হাজার টনের মতো চাল আমদানি হয়েছে। এবার চালসহ অন্যান্য পণ্য বেশি আমদানি হওয়ায় বন্দরে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণ সম্ভব হয়েছে।
বন্দরের এ কর্মকর্তা বলেন, আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানিকৃত পণ্যের পরীক্ষণ, শুল্কায়নসহ সবধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বন্দরে পণ্যজট কমানোসহ কাস্টমসের সব কর্মকর্তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এছাড়া বন্দরের আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ সব পক্ষের সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি সম্পন্নের ফলে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে। এ সময় তিনি সবাইকে নিয়মের মধ্যে থেকে বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি করার অনুরোধ করেন।
তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে যা আয় হয়েছে এর ওপর নির্ভর করে আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু আগামী অর্থবছরে যদি সরকার চাল আমদানিতে শুল্কহার না কমায় এবং ভারত থেকে চাল আমদানি যদি না হয় একইভাবে অন্যান্য পণ্যের আমদানি না বাড়ে তাহলে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।