চন্দ্র গুরুং নেপালের গোর্খা জেলার নিভৃত গ্রামে পৃথিবীর আলোর সংস্পর্শে এলেও তাঁর শৈশব শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে ভারতের হিমাচল প্রদেশে। জননী ও জন্মভূমির স্নেহবঞ্চিত হয়ে তিনি নির্জনতাকে শব্দ ও পুস্তকের নিঃস্বর তরঙ্গে ভরে তোলেন। তাঁর সংবেদনশীলতার প্রথম প্রকাশ ঘটে 'তার হৃদয়ে নেই তার দেশের মানচিত্র' (২০০৭) কাব্যে। তাঁর দ্বিতীয় কাব্য 'My Father's Face' (2020) নয়াদিল্লির রুব্রিক পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এ কাব্যের অন্তর্ভুক্ত সাতচল্লিশটি কবিতার অনুবাদক মহেশ পাউড্যাল। স্বদেশের অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশে তিনি যন্ত্রণাদগ্ধ; তাঁর মর্মদ্রাবী সংবেদনা ভাস্বর হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক কবিতাবলিতে। বাহরাইন প্রবাসী গুরুং More of My Beautiful Bahrain, Snow Jewel, The Poet প্রভৃতি অনলাইন ও প্রিন্ট ম্যাগাজিনে কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশ করছেন। Robin Barratt (UK) সম্পাদিত Collection of Poetry and Prose গ্রন্থে তাঁর কবিতা সংকলিত হয়েছে। অনুবাদকর্মকে তিনি সমধিক গুরুত্ব দিয়ে হিন্দি, ইংরেজি ও আরবি কবির অনেক সৃষ্টিকর্ম নেপালি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। বাংলাদেশের কিছু কবিতা ও গল্পকেও তিনি নেপালিতে ভাষান্তরিত করেছেন। তিনি প্রথম ঢাকা ট্রানস্লেশন ফেস্টিভাল ২০১৮ এর গুরুত্বপূর্ণ সেশনে অংশগ্রহণ করেন। অনূদিত কবিতাগুলো My Father's Face কাব্য থেকে সংগৃহীত।
জাতি, অস্থি ও সারমেয়
সূর্য, সন্ত্রাসের একটি গোলক
মাথার ওপর বহ্নিজ্বালাময়
রাজপথে দৃষ্ট হচ্ছে হিংস্র মুখ
দুষ্ক্রিয়ার ছায়ারা সর্পিল গতিতে অপ্রতিহত
প্রতিধ্বনিরা কর্ণকুহরে কর্কশ চিৎকার
প্রভাতকে সম্ভাষণ জানাতে
প্রস্ফুটিত ক্ষুদ্র কোরক যায় শুকিয়ে
বেহায়াপনার বেপরোয়া উৎসব চলমান
সন্ত্রাসের জীবাণু হৃদয় ও মনকে পূর্ণ করে
বৃক্ষশীর্ষে ব্যাহত পাখির কলকাকলি
অঙ্গনে ক্রিড়ারত শিশুরা সন্ত্রস্ত
সারমেয়দের তীক্ষ্ণ দন্তরাজি সৃষ্টি করে ক্ষত
ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তীব্রতা দিয়ে তারা
শান্তির নখরকে আঘাত করে ও চিবোতে থাকে
এ ভয়ঙ্কর সময়ে
দেয়ালের ছিন্নভিন্ন মানচিত্রে
জাতি ঝুলন্ত অস্থিখণ্ড রূপে দৃশ্যমান।
স্মৃতিধারা
তুমি যখন দূরে থাকো
হৃদয়ের সমস্ত পাহাড় স্মৃতির মেঘে আচ্ছন্ন থাকে
বক্ষ আবদ্ধ থাকে ঝড়ের আতঙ্কে
হৃদয়ের মহাকাশে—
মুখোমুখি হবার বাসনা বিদ্যুতের মতো জ্বলে ওঠে
মস্তিষ্কের সকল অঞ্চলে
মধুর ও তিক্ত স্মৃতিরা আসে আর যায়
যখন তুমি দূরে থাকো
পূর্বস্মৃতির মহাপ্লাবন বয়ে যায়
চোখ থেকে ঝরে পড়ে বিমর্ষতার বৃষ্টি
এবং প্রতিটি মুহূর্ত পরিপূর্ণভাবে আর্দ্র হয়ে ওঠে
যখন তুমি দূরে থাকো
আমি নিজেই অঝোরধারায় ঝরে পড়ি
ক্ষুধা ও একটি ধ্বজভঙ্গ রাষ্ট্র
নতুন ভ্রূণ ধারণে সক্ষম হয়নি
এমন বন্ধ্যা একটি জরায়ুর মতো
অনেকদিন থেকে একটি সেকেলে পাত্র
ঘরের কোণে অধোমুখ হয়ে আছে
ওতে কোনো আহার্য রান্না হয়নি
নতুন জীবন সৃষ্টিতে অক্ষম
বীর্যহীন অণ্ডথলির মতো
অনেকদিন থেকে সম্ভাবনাহীন দোমড়ানো-মোচড়ানো
শস্যদানার শূন্য থলে
ঘরের কোণে রয়েছে নিক্ষিপ্ত
ঘরের কোণে রক্ষিত
প্রেমঘন ক্রীড়াঙ্গন হয়ে উঠতে পারেনি
এমন শীতল বিছানার মতো
অনেকদিন থেকে নিশ্চুপ অগ্নিস্থলে
অগ্নিশিখা ক্রীড়ারত হয়নি অগ্নিশিখার সাথে
সেই সেকেলে পাত্র
সেই শূন্য থলে
সেই শীতল অগ্নিস্থল
অনাহারী মানুষেরর মতো অসহায়
ধ্বজভঙ্গ সরকারকে উপহাস করে।
উন্নতি
মানুষের মৌলিক প্রয়োজন তিনটি:
খাদ্য, বস্ত্র, ও বাসস্থান।
খাদ্য—
আজকাল যে খাবার খাচ্ছি তার স্বাদ অন্যরকম।
আমি ক্ষুধার নিষ্ঠুর মুখ বিস্মৃত হয়েছি।
বস্ত্র—
অনেক আগের তুলনায় আমি সুন্দর পোশাক পরি।
কিন্তু আমার হৃদয়জ লোভ এখনও উলঙ্গ।
বাসস্থান—
আজকাল আমি আলিশান ও সুউচ্চ ভবনে বাস করি
যেখান থেকে মানুষকে খর্বকায় মনে হয়।