X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি থেকে ফিরে কৃষিকাজ করে মাসে আয় ৩ লাখ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
২৫ জুলাই ২০২১, ১১:০০আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২১, ১১:০৫

সৌদি আরব থেকে ফিরে কৃষিতে বাজিমাত করেছেন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের শেখ আব্দুল মান্নান (৫৫)। শুধু নিজেই সফল হয়েছেন তা নয়, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের অনাবাদি প্রায় ৪০০ একর জমি স্থানীয় কৃষকদের জন্য আবাদি জমিতে পরিণত করেছেন। এখানে ১৫ একর জমিতে মিশ্র চাষাবাদের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। এলাকার কৃষকরা তার কাছে গেলেই পাচ্ছেন চাষাবাদের পরামর্শসহ নানা সহযোগিতা। তিনি এখন হয়ে উঠেছেন কৃষকদের কাছের মানুষ।

দত্তেরবাজার এলাকার যাত্রাসিদ্ধি গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান আব্দুল মান্নান। ঢাকার গাবতলী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ছয় মাসের অটোমোবাইলসের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৯৮৬ সালে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। মরুভূমিতে কঠোর পরিশ্রম করে কয়েক বছরের মাথায় পরিবারের আরও চার ভাইকে নিয়ে যান। কষ্টার্জিত অর্থে দেশের বাড়িতে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের উঁচু কাশবনের অনাবাদি জমি কেনেন। দীর্ঘ ২৫ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে ফিরে আসেন। কাজ না করে এক মুহূর্তও বসে থাকতে পারেন না মান্নান। এ কারণে সিদ্ধান্ত নেন কৃষিকাজে নিজেকে নিয়োজিত করবেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও আশপাশের বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষকদের সঙ্গে পরামর্শ করেন কীভাবে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের উঁচু অনাবাদি জমি আবাদি জমিতে পরিণত করা যায়।

ব্রহ্মপুত্র পাড়ের প্রায় ৪০০ একর জায়গা আবাদি জমিতে পরিণত করেছেন

শেখ আব্দুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে এসে বসে থাকতে ভালো লাগছিল না। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের জমিতে কৃষিকাজ করার। কিন্তু বেশিরভাগ জমি ছিল ব্রহ্মপুত্র পাড়ের উঁচু কাশবনে ঘেরা। আমার মতো শতাধিক কৃষকের জমিও পতিত ছিল কাশবনে। পরে কৃষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে হাতে থাকা নগদ অর্থে একটি ভেকু মেশিন কিনে কাশবন পরিষ্কার করে ওই মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করি। পরে বাঁধটি সড়ক হিসেবে কৃষকরা ব্যবহার করতে থাকেন। বেশ কয়েক বছরে অনাবাদি প্রায় ৪০০ একর জমি আবাদি হয়। এখন আমার মতো প্রায় শতাধিক কৃষক ব্রহ্মপুত্র পাড়ে কৃষি আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।’

বছরে ধান-খড় বিক্রি করে আব্দুল মান্নানের আয় ১২ লাখ টাকা। ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে বারোমাসি লাউ, কুমড়া, চিচিঙ্গা, বেগুন, শসা ও কাঁচা মরিচসহ বেশকিছু জাতের শাক-সবজি রয়েছে। শাক-সবজি বিক্রি করে তার বছরে প্রায় ছয়-সাত লাখ টাকা আয় হয়। তিন একর জমিতে পাট চাষ করেছেন তিনি। বর্তমানে শ্রমকিদের সঙ্গে তিনি পাট কেটে পচানোর ব্যবস্থা করছেন। তিন একর জমি থেকে প্রায় ৬০ মণের মতো পাট ঘরে তুলতে পারবেন। এছাড়া তার কৃষি খামারে রয়েছে গরু ও ছাগল লালন-পালনের ব্যবস্থা। সেখান থেকেও আয় করেন বছরে ১০ লাখেরও বেশি।

কৃষি খামারে রয়েছে গরু ও ছাগল লালন-পালনের ব্যবস্থা

খামারের চারপাশে লেক বানিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে মাছ চাষ করেছেন। মাছ চাষের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে নতুনত্ব। প্রাকৃতিক পরিবেশে নদীর মাছ আটকে রেখে সারা বছর লালন-পালন করেন। বছর শেষে মাছ বিক্রি করে আট-নয় লাখ টাকা আয় করেন তিনি। সবমিলে তার বছরে আয় ৩৭-৩৮ লাখ টাকার মতো। সে হিসাবে তার মাসে আয় প্রায় তিন লাখ টাকা।

এছাড়া গোবর ব্যবহার করে একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করেছেন মান্নান। উৎপাদিত গ্যাসের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি পরিবারের রান্নার কাজ চলছে। বায়োগ্যাসে ব্যবহৃত গোবর দিয়ে জৈব সার তৈরি করে কৃষি জমিতে ব্যবহার করছেন। তিনি জমিতে রাসায়নিক সার কম ব্যবহার করেন। জৈব সারকেই বেশি কাজে লাগিয়ে থাকেন।

আব্দুল মান্নান বলেন, ‘অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি যেমন হারায়, তেমনি উপকারী পোকামাকড়ও মরে যায়। এ কারণে খামারের গোবর ব্যবহার করে একদিকে বায়োগ্যাস উৎপাদন করছি, অন্যদিকে জৈব সার তৈরি করে ফসলি জমিতে ব্যবহার করছি। আশপাশের কৃষকরাও জৈব সার তৈরি করে ফসলি জমিতে ব্যবহার করছেন। এতে করে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে এবং বিষমুক্ত সবজিসহ ফসল মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে।’

চাষ করেন লাউ, কুমড়া, চিচিঙ্গা, বেগুন, শসা ও কাঁচা মরিচ

তিনি জানান, বাঁধের পাশে পুরো খামারজুড়ে রয়েছে মাছ চাষের একটি লেক। হ্যাচারি থেকে পোনা না কিনে নিজস্ব পদ্ধতিতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সঙ্গে আসা মাছ লেকে আটকে প্রাকৃতিক পরিবেশে চাষ করছি। বছর ঘুরলেই মাছ বিক্রি করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতে চলে আসে। খামারে মিশ্র কৃষি ফসলের আবাদের কারণে বছরজুড়ে কোনও না কোনও ফসল থাকে। খামারে প্রায় অর্ধশতাধিক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

আব্দুল মান্নান বলেন, সৌদি আরবে গিয়ে মরুভূমিতে খুব কষ্ট করে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে হয়েছে। বিদেশে না গিয়ে সৎ থেকে মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে কাজ করলে যে কেউ দেশেই সফল হবেন।

আব্দুল মান্নান এখন কৃষকদের কাছের মানুষ

স্থানীয় কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘কৃষিকাজ কীভাবে করতে হয় তা আব্দুল মান্নান ভাইয়ের কাছ থেকে শিখেছি। তিনি আমাদের অনাবাদি জমি আবাদি করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ কারণে এখন ফসল ফলিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পেরেছেন স্থানীয় শতাধিক কৃষক। বিভিন্ন এলাকার লোকজন মান্নান ভাইয়ের কৃষি খামার দেখতে আসেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মতিউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সৌদিফেরত কৃষক আব্দুল মান্নানের মধ্যে একজন আদর্শ কৃষকের সব ধরনের যোগ্যতা রয়েছে। কৃষি বিষয়ে তিনি স্থানীয় কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি একজন সফল কৃষক।

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানতীব্র গরমে ঝরছে আমের গুটি, উৎপাদন নিয়ে চাষিদের শঙ্কা
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
প্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি