X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বসেরা কোথায়?

তুষার আবদুল্লাহ
০৭ আগস্ট ২০২১, ১৪:২৪আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২১, ১৪:২৪

তুষার আবদুল্লাহ সাংবাদিকতায় তখন শৈশব। বিচিত্র খবরের দিকে খেয়াল। খবরের যত পাড়া-মহল্লা আছে সেদিকে ছুটে বেড়াই। সব মহল্লারই রাত-দিন আছে। দুই সময়ে দুই রং। পরিচয় বদলে যায়। সঙ্গে আচরণ। প্রথম-প্রথম বিষম খেতাম। শিউরে উঠতাম ভয়ে। মানুষ দিনের আলো আর রাতের আঁধারের সুতো ব্যবধানে এভাবে বদলে যেতে পারে। সহজ মানুষের কঠিন রূপ, কঠিনের সহজ। সুফি’র নেকড়ে চোখ-দাঁত দেখে সাংবাদিকতার শৈশবে আঁতকে ওঠাই স্বাভাবিক ছিল। যিনি রোদেলা বিকেলে সবুজ চত্বরে কবিতার আসর বসান, উচ্চারণ ঠিক করে দেন কিংবা যাকে রবীন্দ্র বা নজরুল সংগীতের ডিলার ভাবতাম, যার মুখে লেনিন, মার্কসের সংলাপ শুনে বিহ্বল হয়ে পড়েছি, যিনি গোধূলির আলোর মতো হতে বলতেন, বলতেন যিনি সাম্যের কথা, নারীমুক্তির কথা, সেই মানুষগুলোর সঙ্গে দেখা হয়ে যেত, খবরের কেঁচো খুঁড়তে হতো। তারা মুখ লুকোবার আগেই, আমি সরিয়ে নিতাম মুখ। বিব্রত তারা হননি কখনই। পরদিন সকালে আবার আগের সরল মানুষ তারা।

তখনও গুলশান, ধানমণ্ডি, বনানী, উত্তরা, বারিধারা এমন ঝলমলে হয়নি। নিকেতন, বনশ্রীর জন্ম হয়নি। রাজাবাজার, ইন্দিরা রোড, সেগুন বাগিচা, লালমাটিয়া, পরিবাগ, ইস্কাটনের কদর। জমজমাট কখন রূপালী পর্দা, বিটিভি’র প্যাকেজ নাটক সবে জমতে শুরু করেছে। শুনতে পেতাম সেখানকার উজ্জ্বল, অনুজ্জ্বল বা খসে পড়া নক্ষত্রদের কাছে গিয়ে সমাজের বিশেষরা ব্যক্তিগত বা কর্মজীবনের অবসাদ থেকে মুক্তি খুঁজেন। যে এলাকাগুলোর কথা বলা হলো, সেখানেই ভাত দুপুরে বা মধ্যরাতে তারা টিলোএক্সপ্রেস খেলেন। নির্দেশ এলো– তাদের পিছু নিতে হবে কেঁচোর খোঁজে। শুরু হলো খোঁড়াখুঁড়ি।

শহরের পথে পথে ঘুরি। এদিক-ওদিক উঁকি দেই। অভিজাত মানুষ দেখতে সোনারগাঁও, ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্রধান ভরসা। শুটিং বাড়িও যাই। সেখানে গিয়ে ঠাওর করতে পারি– সোনালী, রূপালী পর্দার গৌরি সেন কারা। একেক জন দেখি আর চোখ স্থান চ্যুত হয়ে কপালে ওঠে। নক্ষত্ররা যে নিজের আলোয় আলোকিত নয়, জেনারেটরের শক্তিতেই তাদের আলোর বিচ্ছুরণ ও তাপ নির্ভর করে। এখানে কিছু নক্ষত্র আছেন সত্যিই তারা নিজ আলোয় আলোকিত। কিন্তু তাদের সেই সহজাত স্ফুরণ নিভিয়ে দিতে, অন্ধকার গহ্বর সাজিয়ে রাখা। সেই গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্রদের ভস্ম শরীর দেখারও সুযোগ হয়েছিল।

একবার এফডিসিতে সুপার হিট এক তারকার ইন্টারভিউ নিতে গেছি। অপেক্ষায় আছি তার। একসময় একজন এসে বললেন, লাগবে নাকি বস? জানতে চাই, কী? তার চোখের স্বরলিপি পড়ে বুঝতে পারলাম, তিনি কী গছিয়ে দিতে চাইছেন। কবুল বলি। কারণ বুঝতে পারছিলাম খননের পথ পাওয়ার পূর্বাভাস। সেই সময়ে হাজার দুয়েক টাকায় দফারফা হয়। পরদিন ভাদ্রের ঘর্মাক্ত দুপুরে সাবেক এক অভিজাত পাড়ায় যাই। সেখানে গজিয়ে ওঠা সদ্য বহুতল ভবনের শীর্ষ তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। লিফট থেকে আমার গাইড হাওয়া। লিফট খুললে অভ্যর্থনা পর্ব পেরিয়ে অন্দরে যিনি আমাকে স্বাগত জানালেন, তাকে দেখে আমার পলক পড়ে না। তার লাবণ্য ও সৌন্দর্য্যের জন্য নয়, তিনি সমাজের এত পরিচিত মুখ, সমাজ তাকে নানা কারণে সমীহ করেন। তিনি মোটেও বিব্রত হননি। বরং কোমল পানীয় হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলছিলেন, অবসাদ দূর করতে কারা কারা সেখানে যান, সেই অবসাদ দূর করার ‘ যাদু’ হয়েও কারা আসেন। বাস্তবে, ছবিতে দেখলাম অনেককেই। এখানে এসে সবাই কেমন আপন হয়ে যায় একে অপরের। কারও কোনও অহং নেই। এরাই লিফট থেকে নেমে আবার ভিন্ন, কুর্নিশ জাগানিয়া মানুষ।

‘লাগবে নাকি বসে’র আহবানে সাড়া দিয়ে আরও কয়েক ডেরায় গিয়েছি। তাদের নিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে লিখেছি। কেউ কেউ বুঝতেও পেরেছেন সেটা। দেখা হলে কাষ্ঠ হাসি হেসেছেন। দেখেছি জলে ভেসে পদ্ম কোথা থেকে আসে, আবার চলে যায় কত দূরে। দূরে যেতে যেতে কীভাবে তাদের শরীরে পচন ধরে। পচন, ক্ষয়ে যাওয়া শরীরে কোনও ভ্রমর এসে আর বসে না। ভ্রমরেরা সেদিনও সুখে ছিল, আজও সুখে আছে। মাঝে আমরা সংবাদকর্মীরা আবেগ, ঠুনকো নৈতিকতার বড়াই করে বুকের ছাতিমা প্রশস্ত করি। আম মানুষের ক্ষোভ হারায় দৃশ্যমান ‘শুদ্ধতার’ চোরাবালিতে!

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
প্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ