X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন তারার সাতে সাত

রবিউল ইসলাম
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:২২আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:২৮

২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসর। এরপর একে একে কুড়ি ওভারের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ছয়টি সংস্করণ শেষ হয়েছে। আগামী মাসে আরব দেশে বসতে যাচ্ছে আরেকটি বিশ্বকাপের আসর। ২০০৭ থেকে ২০২১- সবকটি’তে একটি জায়গায় মিল। অনেক খেলোয়াড় অদল-বদল হলেও বাংলাদেশ স্কোয়াডে পরিবর্তন নেই তিনটি নামে- মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ। তামিম ইকবাল নাম প্রত্যাহার করে না নিলে ‘সাতে সাত’ ক্যাটাগরিতে থাকতেন তিনিও। সাত বিশ্বকাপের সাতটিতেই খেলা- ক্রিকেট বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকজনের আছে এই কীর্তি। 

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগের ছয় আসরে খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ-সাকিব-মুশফিক। এবারের প্রতিযোগিতা দিয়ে সপ্তম বিশ্বকাপে নামতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ, কুড়ি ওভারের বিশ্ব আসরের শুরু থেকে প্রত্যেকটিতে খেলেছেন তারা।

মুশফিক: অম্লমধুর স্মৃতি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিকের পথচলা শুরু সাকিব-মাহমুদউল্লাহরও আগে। ২০০৫ সালের ২৬ মে, ঐতিহাসিক লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার মাথায় টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দেন তখনকার অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। মাত্র ১৭ বছর ৩৫১ দিন বয়সে লর্ডসে অভিষেক হয় এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের। সেই যে শুরু, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরের বছর রঙিন পোশাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় ঘটে যায় মুশফিকের। ওয়ানডে অভিষেকের চার মাসের মাথায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক। মাত্র একটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েই ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়ে যান মুশফিক। এরপর একে একে সব বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।

তবে বিশ্বকাপের ময়দানে কখনোই খুব ভালো কিছু করতে পারেননি মুশফিক। ২০০৭ সালের প্রথম বিশ্বকাপে ছিলেন ব্যর্থ। ৫ ম্যাচে রান ছিল মাত্র ১৪! ২০০৯ সালের বিশ্বকাপে আসে ২ ম্যাচে ২৫ রান। ২০১০ সালের আসরেও খুব একটা বদল হয়নি পারফরম্যান্স। ব্যাট থেকে আসে ২৮ রান।

২০১২ সালের বিশ্বকাপে মুশফিক হতাশ করেছেন আবার। এবার করেন ২৯ রান। দুই বছর পর ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে কিছুটা সফল হন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। ২০১৪ বিশ্বকাপে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ১১৮ রান। আর ২০১৬ সালে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে করছিলেন ৪৪ রান।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা মুশফিকেরই। ২৫ ম্যাচে ২৫৮ রান করেছেন সাবেক অধিনায়ক। এই ফরম্যাটে ৫ হাফসেঞ্চুরি থাকলেও বিশ্বকাপে এখনও এমন মাইলফলকে পৌঁছাতে পারেননি। তবে বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান এখন আগের চেয়ে পরিণত। হয়তো অতীত ভুলিয়ে দেওয়া পারফরম্যান্সই করবেন ওমান ও আরব আমিরাতে!

সাকিব: সেরা পারফর্মার

২০০৬ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটে আর্বিভাব সাকিবের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিকের আগে অভিষেক হলেও কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে দুজনের একই সঙ্গে পথচলা শুরু। ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টির দলেও ছিলেন তারা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘রেকর্ডের বরপুত্র’ বলা হয় সাকিবকে। অন্য সব জায়গার মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার তিনি।

বিশ্বকাপে মুশফিকের সমান ২৫ ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। ২০০৭ বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচে ১৩.৪০ গড়ে সাকিবের রান ছিল ৬৭। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। প্রথম বিশ্বকাপের মতো ২০০৯ সালের বিশ্বকাপেও ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি বাঁহাতি অলরাউন্ডার। ২ ম্যাচে ২ উইকেট আর ১৫ রান করেছিলেন। ২০১০ বিশ্বকাপে সাকিব কিছুটা ভালো করেন। ২ ম্যাচে ৭৫ রান আর ৪ উইকেট। ২০১২ বিশ্বকাপে ২ ম্যাচে সাকিব ৯৫ রান করলেও বল হাতে সফল হননি। ঘরের মাঠে ২০১৪ বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ১৮৬ রানের পাশাপাশি ৮ উইকেট নিয়েছিলেন। ভারতে অনুষ্ঠিত ২০১৬ বিশ্বকাপে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলেন তিনি। ৭ ম্যাচে ১০ উইকেটের পাশাপাশি করেছিলেন ১২৯ রান।

সব মিলিয়ে ২৫ ম্যাচে সাকিবের ৫৬৭ রানের সঙ্গে ৩০ উইকেট। এবার হয়তো আগের সবকিছুকে ছাপিয়ে যাবেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার!

মাহমুদউল্লাহ: সুখকর নয় অভিজ্ঞতা

টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহর যাত্রা শুরু ২০০৭ সালে। মুশফিক-সাকিবের পর অভিষেক হলেও কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ম্যাচ সংখ্যায় এগিয়ে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। সাকিব ৮৮ ও মুশফিক ৯০ ম্যাচ খেললেও মাহমুদউল্লাহর ম্যাচ সংখ্যা ১০১। তবে বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর ম্যাচ ২২টি। পারফরম্যান্সের বিচারে খুব একটা ভালো কাটেনি বর্তমান অধিনায়কের। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নাইরোবিতে মাহমুদউল্লাহর মাথায় ওঠে টি-টোয়েন্টি ক্যাপ। ওই বছরই সুযোগ হয় বিশ্বমঞ্চে খেলার।

২০০৭ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকপে তরুণ মাহমুদউল্লাহ ২ ম্যাচে ১৭ রানের পাশাপাশি ২ উইকেট নিয়েছিলেন। পরের বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ১৫ রান। ২০১০ বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ ছিলেন ‘সুপার ফ্লপ’। ২ ম্যাচে করেন মাত্র ২ রান। বরাবরের মতো ২০১২ বিশ্বকাপেও হতাশ করেন মাহমুদউল্লাহ। এবারও ২ ম্যাচে ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি।

ঘরের মাঠে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ। সেখানে সাকিব-মুশফিকের ভাগ্য বদলালেও মাহমুদউল্লাহর ভাগ্য বদল হয়নি। সাকিব-মুশফিকের মতো সাত ম্যাচ খেলে মাহমুদউল্লাহর সংগ্রহ ছিল ৫৯ রান। যদিও ওই বিশ্বকাপে বল হাতে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। ২০১৬ বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ৮৬ রানের পাশাপাশি ১ উইকেট নিয়েছেন। সব মিলিয়ে ২৩ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর ১৯৪ রানের পাশাপাশি শিকার ৮ উইকেট।

দীর্ঘ বিরতির পর আরেকটি বিশ্বকাপ সামনে। ২০১৬ থেকে ২০২১- গত ৫ বছরে অনেক কিছুই শিখেছেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশের অনেক ম্যাচ জিততে ভূমিকাও রেখেছেন। এই মাহমুদউল্লাহ এখন দলের অধিনায়কও। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে নামবে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সিরিজে অন্য সব ব্যাটসম্যান ধারাবাহিক ব্যর্থ হলেও মাহমুদউল্লাহ ছিলেন ব্যতিক্রম। কে জানে হয়তো এবারের বিশ্বকাপে আগের সব ব্যর্থতা মুছে গড়বেন ‍নতুন কীর্তি!

/কেআর/
সম্পর্কিত
বেটিং অ্যাপকাণ্ডে জড়ালো সাকিবের বোনের নাম
শাকিবের শুভেচ্ছাদূত সাকিব!
বই মেলার উদ্বোধন করলেন সাকিব আল হাসান
সর্বশেষ খবর
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
ভাটারায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে লোহার পাইপ পড়ে হোটেল কর্মচারীর মৃত্যু
ভাটারায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে লোহার পাইপ পড়ে হোটেল কর্মচারীর মৃত্যু
সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউনের কয়রা সফর সম্পন্ন
সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউনের কয়রা সফর সম্পন্ন
২০২৩ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ
২০২৩ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ
সর্বাধিক পঠিত
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই