X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ রাসেল: ফুল-পাখির অমলিন সুর

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
১৮ অক্টোবর ২০২১, ১৭:১০আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২১, ১৭:১০

হায়দার মোহাম্মদ জিতু বিশ্বজুড়ে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে মানবাধিকার কাউন্সিল নামের সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। যদিও বৈশ্বিক ক্ষমতা কাঠামোর ব্লকভিত্তিক কিংবা স্বার্থগত চর্চার কারণে দেশে-দেশে এর আচরণ ও কার্যক্রমের হেরফের আছে। অর্থাৎ কোথাও কোথাও একে বগলদাবায় ঘুমিয়ে পড়তে দেখা যায়, আবার কোথাও কোথাও মাত্রাতিরিক্ত সোচ্চার কণ্ঠে আলোড়ন তুলতে দেখা যায়। আরও বিস্তৃত অর্থে বললে, ১৯৪৬ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন সর্বস্থানে নিজেদের স্বতন্ত্রবোধ এবং সত্তাগত ভূমিকা ধরে রাখতে পারেনি। এ দেশের ক্ষেত্রেও এই যুক্তি উপস্থাপনের কারণ আছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর মানবাধিকার সংস্থাসহ আঞ্চলিক পর্যায়ের সংগঠনগুলোর কার্যত কোনও জাগরণ লক্ষ করা যায়নি। বরং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সুবিধা বিবেচনায় এবং নিজেদের পৃষ্ঠপোষকতার আদলে একে সর্বস্থানে একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে উপস্থাপন করার কৌশলে সায় দিতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ফুল পাখির সুর শিশু শেখ রাসেল ও তাঁর পরিবারের অনাগত সন্তানগণ কোনও রাজনৈতিক মানচিত্র কিংবা হিসাব-নিকাশে পড়েন এ বিষয়ে সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী কিংবা মানবাধিকার সংগঠন-সংস্থাগুলো কোনও জোরালো প্রশ্ন উত্থাপন করেনি।

বলা যায়, সেই বিচারহীন সংস্কৃতির ধারাবাহিকতার ফলাফলই আজকের শিশুদের আক্রান্ত ও আক্রোশের কারণ। পরিসংখ্যান বিচারে না গেলেও এটা স্পষ্ট যে বর্তমানে শিশুরা ভীষণভাবে নির্যাতিত। তবে ট্র্যাজিডি হলো– টকশো-আলোচনায় এ নিয়ে বেশ সরগরম মন্তব্য এবং তাত্ত্বিক পরিসংখ্যান তুলে ধরলেও ময়নাতদন্তের আদলে এর সূত্রপাত কোথায় সেটার ইঙ্গিত করা হয় না।

পুকুরে একখানা ঢিল ছুড়লে তা পাড়ের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লহরি খেলে। কাজেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ রাসেলসহ তাঁর পরিবারের অনাগত সন্তানগণের আনুষ্ঠানিক অথচ বিচারহীন হত্যাকাণ্ডই যে এই বেড়ে চলা শিশু নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের সামাজিক প্রবাহের ফসল, সেটাও বুঝে ওঠা যৌক্তিক।

কেসস্টাডি শীর্ষক গবেষণার আশ্রয় নিলে তা-ই নির্দেশ করে। অথচ সেই হত্যাকাণ্ডের পর খুনিদের বিরুদ্ধে যদি দল-মত নির্বিশেষে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় পরিলক্ষিত হতো তবে আজ হয়তো কোনও শিশুকে কেউ পারিবারিক আক্রোশ কিংবা ফাঁদে ফেলে নির্যাতন ও মৃত্যুমুখে ফেলার সাহস করতে পারত না।

ভিন্নভাবে বললে, রাষ্ট্র এবং সামাজিক কাঠামোয় এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক শিশু হত্যাকাণ্ড, যা বিচারবহির্ভূত থেকেছে দীর্ঘদিন। অথচ এই বিষয়টিই ঘটেছে এবং ঘটা করে বহাল ছিল। নির্লজ্জের মতো বললে, সকলের নাকের ডগায়ই বিচারহীন রয়ে গেছে। কিন্তু কেউ একে প্রশ্নোত্তর বা জবাবদিহির ভেতরে আনেননি। অথচ একে সামনে আনা এবং বিচারের আওতায় আনার প্রয়োজন ছিল।

কথায় আছে, লাভের গুঁড় পিঁপড়ায় খায়। কাজেই এখানে আর কেউ যেন বঙ্গবন্ধুর সাজানো বাগানে শিশু হত্যার মতো জঘন্য কার্যক্রম চালাতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, এখানে এখনও কোথাও কোথাও পাকিস্তানি ভূত আওড়ানোর চেষ্টা দেখা যায়। সেই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি ভূত, শিশু নির্যাতনকারী সিরিয়াল কিলার জাভেদের মতো কেউ যেন ১০০ মায়ের বুক খালি করার সাহস বা টার্গেট করতে না পারে সেই বিষয়েও সতর্ক থাকা জরুরি।

আর এসব মোকাবিলায় বাঙালির সাহস, আত্মবিশ্বাস শেখ হাসিনা। কারণ ঝঞ্ঝা, বিক্ষুব্ধ পথ পাড়ি দিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে সব অপশক্তিকে হটিয়ে সাম্য ও সততার বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি বিরামহীন লড়াই করে যাচ্ছেন। তাঁর কারণেই দুধে-ভাতে মানুষ করার স্বপ্ন দেখা শিশুদের নির্যাতন করে এখন পর্যন্ত কেউ পার পায়নি।

শিল্প-সাহিত্যে মৃত্যুকে সব সময় নির্মম সত্য, সুন্দর এবং অবধারিত গল্প হিসেবে রূপায়িত করা হয়েছে। নান্দনিক শব্দশৈলী, চিত্রকর্ম এবং সুরে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিন্তু কখনোই তা হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে নয়। আর শিশুদের ক্ষেত্রে তা নয়ই। তাই সব মিলিয়ে বলতে হয়, আজকের যে রাজনৈতিক, সামাজিক সম্পর্ক-সম্পদের আক্রোশে শিশু হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন তা যদি দেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক আক্রান্ত ও হত্যাকাণ্ড শিশু শেখ রাসেলকে দিয়ে গর্জে উঠতো, তবে তা বহুলাংশেই রুখে দেওয়া যেত।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।
[email protected]

 
 
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ