X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘অপহরণ করে বিয়ে’, ৫ দিন পর শ্বশুরবাড়ি ছেড়েছেন ইশরাত

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
২১ অক্টোবর ২০২১, ২০:৪৭আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২১, ২১:০২

পটুয়াখালীতে কলেজছাত্র নাজমুল আকনকে বিয়ের পরে স্ত্রীর সম্মান দাবিতে তার শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান নেওয়া ইশরাত জাহান পাখি বাবার বাড়ি চলে গেছেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ভয়ভীতি দেখানোর কারণে পাঁচ দিন পরে ওই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান তিনি। বুধবার (২০ অক্টোবর) রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে মির্জাগঞ্জ উপজেলার গাজিপুরে তার বাবার বাড়িতে যান তিনি। এর আগে পাখির বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ের অভিযোগ আনেন নাজমুল।

সম্প্রতি, জোর করে আটকে বিয়ে করার ৪৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাজমুল আকন অভিযোগ করেন, মির্জাগঞ্জের ইশরাত জাহান পাখি সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে লঞ্চঘাট এলাকা থেকে তাকে তুলে নিয়ে জোর করে বিয়ে করেন। পরে তিনি পাখিকে প্রধান আসামি করে পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। মামলার আরও ছয়-সাত জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। নাজমুল পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের জালাল আকনের ছেলে।

এদিকে, অপহরণ করে জোরপূর্বক বিয়ে করার অভিযোগে করা মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, আদালতের নির্দেশে মামলার পর আইন অনুযায়ী এগোচ্ছেন তারা। তবে তদন্ত শেষে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসার বিষয়ে ইশরাত জাহান পাখি বলেন, ‘আমাকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। শ্বশুরবাড়িতে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। আমাকে সেখানকার সবাই মানসিক চাপ প্রয়োগ করছে। অনেক ভয়ভীতি দেখিয়েছে। আমার কাছ থেকে কাবিনের কাগজ এবং আরও কিছু প্রমাণ জোর করে করে কেড়ে নিয়েছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ জন্য পাঁচ দিন পরে আমি বাধ্য হয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বুধবার রাতে বাবার বাড়ি চলে এসেছি।’

বিয়ে প্রসঙ্গে ইশরাত জাহান পাখি বলেন, ‘আমি নাজমুলকে অপহরণ করিনি, প্রেম করে দুজনের ইচ্ছেতেই বিয়ে হয়েছিল। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার রায়ের বাজারের একটি কাজি অফিসের কাজি ফিরোজ আলম আমাদের বিয়ে পড়িয়েছেন। বিয়ের আগে কাজি ফিরোজ আলম ও আমার ভাই নাজমুলকে তার বাড়িতে কল দিতে বললে সে জানায় বাড়ির ফোন বন্ধ।’

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিয়ে করতে আপনারা নাজমুলকে বাধ্য করেছেন– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে ভিডিওটি দেখা গেছে সেটির মূল কারণ, নাজমুল পঞ্চাশ হাজার টাকা কাবিন করে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু কাজি অফিসে থাকা সবাই বলেছেন পাঁচ লাখ টাকা কাবিন করতে হবে। নাজমুল রাজি না হয়ে উঠে চলে যেতে চেয়েছিল, এ জন্য তার ঘাড় ধরা হয়েছে। নাজমুল আমার নামে যে মামলাটি করেছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সে আরও অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে, যা আমি বিয়ের পরে জানতে পেরেছি।’

তাদের সম্পর্কের বিষয়ে ইশরাত জাহান পাখি বলেন, ‘আমি ঢাকার মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজে লেখাপড়া করি। পাশাপাশি একটি বেসরকারি কোম্পানির প্রজেক্টে চাকরি করতাম। করোনার কারণে কলেজ ও প্রজেক্টের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্য ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে লকডাউনের সময় পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে নিজের বাড়িতে চলে যাই। এপ্রিল মাসেই মির্জাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের নাজমুল আকনের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক হয়। সম্পর্কের শুরুতেই আমাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেয় নাজমুল। এতে আস্তে আস্তে আমাদের দুজনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। এভাবে কিছু দিন যাওয়ার পরে নাজমুল দ্রুত বিয়ে করবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার কাছ থেকে ধাপে ধাপে বিভিন্ন কথা বলে টাকা নিতে থাকে। এ ছাড়া জামা-কাপড়সহ অনেক উপহার দিয়েছি বিভিন্ন সময়। প্রায় তিন মাস পরে আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি পরিবার জেনে যায়। পরে আমার পরিবারের সদস্যরা দুজনের বিয়ের ব্যাপারে আলাপ করেন নাজমুলের সঙ্গে। নাজমুল তাদের কাছে বেকার থাকার বিষয়টি তুলে ধরে। পরে আমি নাজমুলের জন্য ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করি। চাকরি করতে সে ঢাকাতে যায়। এরমধ্যে আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি উভয় পরিবারের মধ্যে জানাজানি হয়। পারিবারিক বাধা না থাকায় ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে দুজনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করি। তখন তাকে বিয়ের কথা বললেই আজ নয় কাল বলে কথা অন্যদিকে নিয়ে যেত। নাজমুলের সঙ্গে আমি আমার পরিবারের অনেকের পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমি যখনই তার পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলতে চাইতাম সে এড়িয়ে যেত। এতে আমার সন্দেহ হয়। গত ঈদুল আজহার পরে নাজমুল তার ফেসবুকে নিজের ছবি পোস্ট করলে তাতে একটা মেয়ে কমেন্ট করেন। কমেন্টের সূত্র ধরে ওই মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তার বাড়ি বরগুনা জেলার আমতলীতে। তিনি নাজমুলের সহপাঠী। পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ছাত্রী। নাজমুলের সঙ্গে চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে তার। তাকেও বিয়ে করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নাজমুল। বিষয়টি জানার পরে নাজমুলের সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। কষ্টে আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়ি।

‘কিছু দিন পরে নাজমুলের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা থেকে গাড়িতে উঠেছি জানার পরে নাজমুল বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে মোবাইল ফোনে আমাকে জানায়, সে আমার সঙ্গে দেখা করবে এবং সুবেদখালীতে আমাদের কোর্ট-কাবিন হবে বলে আমাকে সান্ত্বনা দেয়।’ দুই দিন অপেক্ষার পরে বিষয়টি আমার অভিভাবকদের জানাই। তারা আমাকে নিয়ে নাজমুলের বাড়িতে যান। তার বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি, ঘর তালাবদ্ধ ছিল। পরে আমার বড়ভাই ওই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি অবহিত করেন। তারা বিষয়টি মীমাংসা জন্য উভয় পরিবারকে নিয়ে বসার কথা বললেও নাজমুলের পরিবার রাজি হয়নি। একপর্যায়ে নাজমুল আমাকে জানায়, সে যে টাকাপয়সা নিয়েছে সেগুলো দিয়ে দেবে। কিন্তু টাকা দেয়নি সে। পরে নাজমুল চাকরিতে ঢাকায় চলে গেলে তার সহকর্মীরা এবং আমার সহকর্মীরা তাকে বোঝাতে থাকে। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে আমার সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করে সে। পরে তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার রায়ের বাজারের কাজি অফিসে আমাদের বিয়ে হয়। এ সময় তার বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মূলত তারাই ভিডিওটা করেছিলেন।’

বিয়ের আগে তাদের ফোন আলাপের রেকর্ডে প্রেমের সম্পর্কের সত্যতা পাওয়া যায়। সাংবাদিকদের কাছে এসব রেকর্ড দিয়েছেন পাখি।

এদিকে পাখির বিরুদ্ধে বেপরোয়া আচরণের অভিযোগ করেছেন নাজমুল। তার দাবি, পাখির বেপরোয়া আচরণের কারণে পুরো পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়েছে। পটুয়াখালী সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কয়েক মাস আগে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বারবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন ইশরাত জাহান পাখি। তাতে কোনোভাবেই রাজি হননি তিনি। একপর্যায়ে তাকে বিয়ের জন্য বারবার বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। এক পর্যায়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সাত থেকে আট জন অপরিচিত লোক শহরের লঞ্চঘাট এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারা অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে জোর করে কাবিননামায় একটি স্বাক্ষর নেয়। এ সময় নাজমুলকে জোর করে মুখে মিষ্টি খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়।

নাজমুল বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি মানষিকভাবে ভেঙে পড়ি। একপর্যায়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করি। গত ৩ অক্টোবর পটুয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইশরাতের বিরুদ্ধে অপহরণ ও জোর করে স্বাক্ষর রাখার অভিযোগ এনে মামলা করি। মামলায় ইশরাতসহ ছয়-সাত জনকে আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি, বাড়িতেও যেতে পারছি না। ইশরাত জাহান পাখি কয়েকদিন ধরে আমার বাড়িতে অবস্থান করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় আমার মা-বাবাও সেখানে থাকতে পারছে না। সামাজিকভাবে আমি হেয় হচ্ছি। সামনে আমার পরীক্ষা। ঠিকভাবে পড়াশোনাও করতে পারছি না।’

/এমএএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
উপজেলা নির্বাচনে পলকের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!