বদলে গেছে সন্ত্রাসবাদের পুরনো ধ্যানধারণা আর কৌশল। নতুন তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে নিজেদের কণ্ঠস্বর আরও জোরালো করছে সন্ত্রাসবাদীরা। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার দায় স্বীকার করতে অজ্ঞাত স্থান থেকে রেকর্ড করা অডিও এবং ভিডিও টেপ আন্তর্জাতিক টেলিভিশনে প্রচারের জন্য পাঠাতে হয়েছিল আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে । তবে আজ পশ্চিমাদের প্রধানতম আতঙ্ক ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কাছে তাদের নিজেদের পরিচালিত ‘আমাক’ শীর্ষক সংবাদ সংস্থা রয়েছে। তারা মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা সংবাদ প্রচার করে থাকে। আর প্রচারণার মধ্য দিয়ে তারা ‘তথ্য কর্তৃত্ব’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে।
আইএস গত মঙ্গলবারের ব্রাসেলস হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘আমাক’ ওই সংবাদ সংস্থার মাধ্যমেই। সংবাদ সংস্থাটি নিরাসক্ত সাংবাদিকতার শৈলীতে তাদের নেতার কোনও ছবি বা দলিল ছাড়াই ইংরেজি এবং আরবিতে ওই খবর প্রচার করে। প্রচারণার গুণ বজায় রাখতে তাতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক জোটের সঙ্গে যুদ্ধের পরিসর বৃদ্ধির জন্যই ওই হামলা চালানো হলো।
‘আমাক’ নামটি প্রাচীন সিরিয়ার একটি শহরের নাম থেকে নেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় কুর্দি শহর কোবানিতে হামলা চালানোর সময় জনসমর্থন আদায়ের জন্য ‘আমাক’কে ব্যবহার করা হয়। পরে সান বার্নারডিনোতে হামলার দায় স্বীকার করা হয় ওই সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে। এটি আইএসের প্রপাগান্ডাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থকদের কিছু কমেন্টের মধ্যেই সীমিত রাখেনি। বিভিন্ন স্থানের সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে তা নতুন সমর্থক এবং আগ্রহীও তৈরি করতে সক্ষম।
লিবিয়া-সিরিয়া-ইরাক থেকে শুরু করে ফিলিপাইনের বিভিন্ন ঘটার ওপর লেখা প্রতিবেদনগুলো আরবি, ইংরেজি, ফরাসি এবং রুশ ভাষায় প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে আইএস তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড; এমনকি শিরশ্ছেদের ভিডিও সেখানে প্রকাশ করা হয়। সেই সঙ্গে আত্মঘাতী হামলাকারীদের ‘শহীদ’ বলে উল্লেখ করা হয়।
জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যেষ্ঠ গবেষক চার্লি উইন্টার মন্তব্য করেন, আমাক হলো আইএসের ‘তথ্য কর্তৃত্ব’ প্রতিষ্ঠার একটি প্রচেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এটি প্রথমত প্রপাগান্ডা হিসেবে এবং দ্বিতীয়ত কৌশলগত কারণে ব্যবহৃত হয়েছে। যা কেন্দ্রীয়ভাবে বার্তা সরবরাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।’
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার মিডল ইস্ট ফোরামের গবেষক আইমেন জাওয়াদ আল-তামিমি জানান, ‘আমাক’ হলো আইএসের ‘বিকল্প মিডিয়া ইউনিট’। তিনি বলেন, ‘এতে আইএসের প্রতীক নাই, কিন্তু এটি ব্যবহার করে আইএসের প্রচারণাই চালানো হয় উল্লেখ করে তিনি টেলিফোনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘এটি আইএসের-ই অংশ, তাদের মূল প্রচার কৌশলের অংশ।’ তিনি আরও জানান, এটি কোথা থেকে এবং কার মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
আইএসের ওই সংবাদ সংস্থাটি ‘আরাওয়ি’ নামক একটি অ্যাপ তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে ওই প্রতিবেদনগুলো আরবিতে শোনা যায়। আইএস তাদের সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আরও কিছু মাধ্যম ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রয়েছে, এনক্রিপ্টেড টেলিগ্রাম ম্যাসেজ সার্ভিস। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আইএস ‘খিলাফাহবুক’ নামক একটি প্ল্যাটফরম তৈরি করছে বলেও জানা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের আমেরিকান ইউনিভার্সিটির গণযোগাযোগের প্রফেসর ট্রিসিয়া ব্যাকন বলেন, ‘এনক্রিপ্টেড প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা বেশ অগ্রসর আর তা কার্যকরও।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাদের কাজের মধ্যে অনেক রূপান্তরও ঘটেছে। আর তাই তাদের আটকে দেওয়াটা এতো সহজও হবে না।’ সূত্র: ব্লুমবার্গ, এনডিটিভি।
/এসএ/বিএ/