X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ইসলামী ধারার ৮ ব্যাংকে আয় কমেছে ৬০ শতাংশ

গোলাম মওলা
১৫ আগস্ট ২০১৬, ০৪:৪৮আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০১৬, ০৪:৫৫


ইসলামী ধারার ৮ ব্যাংকে আয় কমেছে ৬০ শতাংশ দেশে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পেয়েও সেই তুলনায় মুনাফা করতে পারেনি। বরং তিন মাসের ব্যবধানে ইসলামী ধারার ৮ টি ব্যাংকে মুনাফার প্রবৃদ্ধি কমেছে গড়ে প্রায় ৬০ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে ইসলামী ধারার এই ব্যাংকগুলো মুনাফা বা আয় করেছিল ২ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে এই ব্যাংকগুলো মুনাফা করেছে মাত্র ১ হাজার ৭১ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী মুনাফার প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। যা টাকার অংকে ১ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় মার্চ প্রান্তিকে এমনিতেই ব্যাংকগুলোর মুনাফা কম থাকে। তবে এ সময়ও ইসলামী ব্যাংকে আগের তুলনায় মুনাফা কমেনি,বরং বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড.সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুধু যে ইসলামী ধারার ব্যাংকের মুনাফা কমেছে এমনটিই নয়, দেখা যাবে অন্যান্য ব্যাংকের মুনাফাতেও টান ধরেছে। তিনি বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবাহে যথেষ্ট গতি না থাকায় ব্যাংকগুলোয় বিপুল পরিমাণের বিনিয়োগযোগ্য তহবিল পড়ে আছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে লোকসান দেওয়ায় এর বিপরীতে প্রভিশন রাখতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের তৈরি করা এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে,৮টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকের বাইরে আরও ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ২৫টি ব্যাংক ১ হাজার ১২টি শাখার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। এর মধ্যে ৮টি ব্যাংক পুরোপুরি ইসলামী ব্যাংকিং করছে ৯৬৬টি শাখার মাধ্যমে। ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ২১ ইসলামী শাখা এবং ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ২৫ ইসলামী  উইন্ডোর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আর এইসব ব্যাংক চলছে সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার জন্য প্রণীত আইন দিয়েই।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৮টি ইসলামী ব্যাংক পূর্ণাঙ্গভাবে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য মতে,শরিয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত ইসলামী ব্যাংকগুলো মার্চ পর্যন্ত মুনাফা করেছে ৯৫৪ কোটি টাকা। তিন মাস আগে এই ব্যাংকগুলো মুনাফা করেছিল ২ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। এই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে ৮ ইসলামী ব্যাংকের গড়ে মুনাফার প্রবৃদ্ধি কমেছে ৬০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। একইভাবে ৯টি সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২১টি ইসলামী শাখায় লেনদেন করে মুনাফা হয়েছে মাত্র ৯২ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে এই শাখাগুলোর মুনাফার প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫০ দশমিক ৪৭ শতাংশ।  এর বাইরে ৮টি সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২৫টি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর মাধ্যমে লেনদেন করে মুনাফা হয়েছে মাত্র ২৪ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে এই ২৫টি ইসলামী শাখায় মুনাফার প্রবৃদ্ধি কমেছে গড়ে ১৪ শতাংশ।

অবশ্য এ ব্যাংকগুলোর মুনাফা আগের তুলনায় কমে গেলেও আমানত বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তৈরি করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত পুরো ব্যাংক খাতের মোট আমানতের মধ্যে ২২ শতাংশ আমানত রয়েছে ইসলামী শাখাগুলোতে। একইভাবে মোট ঋণের ২৩ শতাংশেরও বেশি পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে এই ইসলামী ব্যাংকগুলো। এছাড়া মোট রেমিটেন্সের ৩০ শতাংশ এসেছে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এক বছরে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.১৫ শতাংশ। এছাড়া, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এই ব্যাংকগুলো মোট বিনিয়োগ করেছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এক বছর আগে বিনিয়োগ ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। এক বছরে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭.৯১ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে পুরো ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ৯ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: ১৫ আগস্ট যেভাবে সময় কাটে শেখ হাসিনার

/জিএম/এমএসএম/আপ-এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেলারুশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে বড় বিনিয়োগের পথে পোল্যান্ড
বেলারুশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে বড় বিনিয়োগের পথে পোল্যান্ড
বাজারে সংকট সৃষ্টি করতে মজুত করা এক লাখ ডিম উদ্ধার
বাজারে সংকট সৃষ্টি করতে মজুত করা এক লাখ ডিম উদ্ধার
কলেজশিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার
কলেজশিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার
‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি’
‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি’
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি