X
রবিবার, ০৪ মে ২০২৫
২১ বৈশাখ ১৪৩২

শতভাগ মুক্তিযোদ্ধারই সম্মানী ভাতা বাড়ছে

শফিকুল ইসলাম
২৮ মে ২০১৬, ১৭:৪১আপডেট : ২৯ মে ২০১৬, ০০:০৫

বাজেট ২০১৬-১৭ আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় খেতাবপ্রাপ্ত, যুদ্ধাহত এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সবার জন্য মাসিক ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে সব বয়সের মুক্তিযোদ্ধা মাসে ১০ হাজার টাকা হারে মাসিক সম্মানী পাচ্ছেন। আসন্ন বাজেটে বেঁচে থাকা সব বয়সী অর্থাৎ শতভাগ মুক্তিযোদ্ধাকেই প্রতিমাসে ১২ হাজার টাকা হারে মাসিক সম্মানী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যা ১ জুলাই ২০১৬ থেকেই কার্যকর হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এর আগে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রতিমাসে ২ হাজার টাকা হারে সম্মানী ভাতা দেওয়া হতো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, এ বছর সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা নারী, প্রতিবন্ধী, দলিত, ভিক্ষুকসহ সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সুবিধাভোগী ও সুবিধা প্রাপ্তির হার উভয়ই বাড়বে। সেই আলোকে দেশের সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বাড়ানো সম্পর্কিত সুপারিশ আগেভাগে বিবেচনায় আনা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও বর্তমান বাজারে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনা করেই এবার মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা চার লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে তা সাড়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।

আরও পড়ুন:  শতভাগ মুক্তিযোদ্ধারই সম্মানী ভাতা বাড়ছে ‘শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ে মানুষের আস্থা নেই’

সম্মানী ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান। দেশে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে তার সুফল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এই দায়িত্ববোধ থেকেই রাষ্ট্র তাদের সম্মানী ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানা গেছে, এ বছর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকেও পৃথক প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ে। বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধারা কেউ জীবিত না থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার যেহেতু ভাতা পাচ্ছেন সেই হিসেবে অর্থ বিভাগ নিজে উদ্যোগী হয়ে বর্তমানের চেয়ে ১৮ হাজার টাকা বাড়িয়ে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের মাসিক সম্মানী ভাতা ৩০ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে। কিন্তু বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধারা কেউ জীবিত নেই বলে তাদের জন্য কোনও ভাতার প্রস্তাব করেনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাই বীরশ্রেষ্ঠদের বাদ রেখে বীর উত্তমদের সম্মানী ভাতা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা, বীর বিক্রমদের ৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা এবং বীর প্রতীকদের ৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে মাসিক সম্মানী ভাতা ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে। প্রতি ক্ষেত্রে ভাতা বৃদ্ধির এই হার ১৫০ শতাংশ।

আরও পড়ুন:  শতভাগ মুক্তিযোদ্ধারই সম্মানী ভাতা বাড়ছে বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান

জানা গেছে, সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা কাটছাঁট করে চূড়ান্ত করা হলেও খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যা প্রস্তাব করেছিল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার পুরোটাই, আবার অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি হারে ভাতা প্রস্তাব করেছে অর্থ বিভাগ। এছাড়া বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করলেও অর্থ বিভাগ আরও এক হাজার টাকা বাড়িয়ে সেটি ২৫ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৩ সালের জুলাইয়ে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো হয়, যা ওই বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর রয়েছে। এছাড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও মৃত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বর্ধিত সম্মানী ভাতা ওই বছরের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর রয়েছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৬৭৬ জনকে খেতাব দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ ৭ জন, বীর উত্তম ৬৮ জন, বীরবিক্রম ১৭৫ জন এবং বীরপ্রতীক ৪২৬ জন। বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার মাসিক ২০০ টাকা, বীর উত্তম ১৫০ টাকা, বীরবিক্রম ১২৫ টাকা এবং বীরপ্রতীক ১০০ টাকা হারে সম্মানী ভাতা পাচ্ছিলেন। পরে ২০১১ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করে। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী ২০১১ সালে তাদের ভাতা বাড়ানো হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে একটা অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। কারণ সশস্ত্র বাহিনী থেকে যারা মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন তাদের ভাতা বাড়ানো হলেও যারা সশস্ত্র বাহিনীর বাইরে বেসামরিক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো হয়নি। সে কারণে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালে সামরিক ও বেসামরিক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত সমন্বিত একটি নীতিমালা করে ২০১৩ সালে। ওই বছরেই ‘খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান নীতিমালা ২০১৩’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ওই নীতিমালার আলোকেই সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিয়ে আসছে।

 /এএইচ/আপ- এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যাদের নিয়ে এবারের ‘সেলিব্রিটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি’
যাদের নিয়ে এবারের ‘সেলিব্রিটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি’
হারের দায় নিজের কাঁধে নিয়েছেন ধোনি
হারের দায় নিজের কাঁধে নিয়েছেন ধোনি
গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃত্যু বেড়ে ৪
গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃত্যু বেড়ে ৪
নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিলের শুনানি চলতি সপ্তাহে 
নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিলের শুনানি চলতি সপ্তাহে 
সর্বাধিক পঠিত
৩০০ ফিট দিয়ে রামপুরা করিডোর চালুর পরিকল্পনা ডিএনসিসির
৩০০ ফিট দিয়ে রামপুরা করিডোর চালুর পরিকল্পনা ডিএনসিসির
টিএসসিতে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ, সমালোচনার ঝড়
টিএসসিতে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ, সমালোচনার ঝড়
বিমানবাহিনীর সদস‍্যকে হাতকড়া পরিয়ে মারধর, ২ এএসআই প্রত‍্যাহার
বিমানবাহিনীর সদস‍্যকে হাতকড়া পরিয়ে মারধর, ২ এএসআই প্রত‍্যাহার
ইঞ্জিন বিকল, মাঝপথে থামলো চলন্ত ট্রেন
ইঞ্জিন বিকল, মাঝপথে থামলো চলন্ত ট্রেন
দর্শক-শ্রোতা প্রতিক্রিয়ায় ‘তীর’বিদ্ধ জেফার!
দর্শক-শ্রোতা প্রতিক্রিয়ায় ‘তীর’বিদ্ধ জেফার!