X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৩ ফেব্রুয়ারির আগে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না এফবিসিসিআই

শফিকুল ইসলাম
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৪২আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৪২

এফবিসিসিআই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি আগে কোনও প্রকার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। চীনে নববর্ষ উপলক্ষে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ছিল। তবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর এবং এ ভাইরাসে কয়েকশ’ চীনা নাগরিকের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি সামাল দিতে রোগটিকে মহামারি ঘোষণা করে সাধারণ ছুটি আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সঙ্গত কারণে চীনে এখন ব্যাংক, অফিস, কল-কারখানা সব কিছুই বন্ধ। ফলে পরিস্থিতি আরও দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে  এফবিসিসিআই। এ কারণে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও সেই প্রতিবেদন এখনও জমা দেয়নি এফবিসিসিআই।  বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এফবিসিসিআই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের প্রেক্ষাপটে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক অবস্থান নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেসময়ে তিনি  জানিয়েছিলেন, এফবিসিসিআইয়ের দাখিল করা ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। 

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যে কোনও কিছুর বিনিময়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক অব্যাহতভাবে ধরে রাখতে চায় সরকার। এ পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবারই সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্য সচিব। ওই বৈঠকে আগামী তিন দিনের মধ্যে (রবিবার) এফবিসিসিআইকে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হলেও রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত সেই প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আসেনি বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শরীফা খান জানিয়েছেন, এফবিসিসিআই এখনও এ প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়নি।

জানতে চাইলেএফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ জানিয়েছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তিনি ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আমাদের সংগঠনের সদস্য প্রায় চারশ’ অ্যাসোসিয়েশন ও ৮০ থেকে ৯০টি চেম্বারের কাছে লিখিতভাবে জানতে চেয়েছি যে এই সময়ে তাদের ব্যবসা বাণিজ্যে কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন থেকে এখনও সব তথ্য এসে পৌঁছেনি। এসব তথ্য পেলে তা সমন্বয় করে প্রতিবেদন তৈরি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। সে কারণে এই সময়ে হুটহাট করে কোনও প্রতিবেদন জমা দেওয়া ঠিক হবে না। তিনি জানান, যেহেতু আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীন সরকার সেখানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সেহেতু এই সময় পর্যন্ত দেশের সব অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বাণিজ্যে কী ধরনের সমস্যা বা প্রভাব পড়বে সেই প্রতিবেদন চেয়েছি। কৌশলগত কারণেই এ বিষয়ে আমরা একটু সময় নিচ্ছি। সে কারণে অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারগুলোকে তিন দিন সময় দিয়েছি।       

বিশ্বের সব দেশের ‘কারখানা’হিসেবে স্বীকৃত চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন বহু দেশ। এরইমধ্যে শীর্ষ কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চীন থেকে তাদের কারখানা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও দ্রব্যের ৮০ ভাগেরও বেশি জোগানদাতা চীন। এ অবস্থায় দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক কী হবে তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ বাড়ায় সরকার কী অবস্থান নিচ্ছে তা পরিষ্কার করার বিষয়ে সবাই তাকিয়ে আছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দিকে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ওইদিনই জানিয়েছিলেন, চীন বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। আবার করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ের ওপর নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে কোনও সমস্যা নেই। করোনা ভাইরাস সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে চিন্তা করতে হবে। চীনের সঙ্গে যেসব সেক্টরে বাণিজ্য রয়েছে, বিশেষ করে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কাজ করছেন। সেই সব সেক্টরের ব্যবসায়ীরাও বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন। এ বিষয়ে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামালের প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয় চীন থেকে।  এর বাইরেও কাপড়, আদা, রসুন, বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য সামগ্রী, বিভিন্ন প্রকার মেশিনারি, খুচরা যন্ত্রাংশ, খেলনা, মোবাইল, বৈদুতিক সামগ্রী মিলিয়ে শত শত আইটেমের পণ্য আমদানি করা হয় চীন থেকে। সব মিলিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ডলার। সবচেয়ে বড় বাণিজ্য হচ্ছে তৈরি পোশাক ও এর কাঁচামাল আমদানি। যা চীনের বাইরে প্রত্যাশা করাটাও হবে অন্যায়, এমনটাই মনে করেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

উল্লেখ্য, চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আতঙ্কে সারা বিশ্ব। চীনের গণমাধ্যমগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ যাবত দেশটিতে সাড়ে ৮শ’র বেশি মানুষ নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন আরও কয়েক হাজার ব্যক্তি। পরিস্থিতি সামলাতে মাত্র ১০ দিনে হাসপাতালও তৈরি করতে বাধ্য হয়েছে চীন। তবে সেখান থেকে সুস্থ হয়ে অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন এমন খবরও দিয়েছে দেশটির সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলো।

 

/এসআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের খারকিভে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রুশ সেনারা
ইউক্রেনের খারকিভে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রুশ সেনারা
প্রবাসীদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে কোটিপতি, দুই ভাই গ্রেফতার
প্রবাসীদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে কোটিপতি, দুই ভাই গ্রেফতার
আমার পাপ আর বাড়াবেন না: ইমন চক্রবর্তী
আমার পাপ আর বাড়াবেন না: ইমন চক্রবর্তী
হাজারীবাগে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
হাজারীবাগে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া