X
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
৩০ বৈশাখ ১৪৩১

টেকসই বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা ইইউ’র বিনিয়োগ আকর্ষণে জরুরি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:১১আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:২৬

বাংলাদেশের শিল্প খাতের প্রস্তুতি, দীর্ঘমেয়াদি টেকসই বিনিয়োগবান্ধব নীতি সহায়তা, সহায়ক কর কাঠামো, বহির্বিশ্বে ইতিবাচক ভাবমূর্তির উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে দক্ষ মানবম্পদ, রফতানির সক্ষমতা ও পণ্যের বহুমুখীকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইইউ’র বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।

বুধবার (৪ অক্টোবর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে পরিচালিত ইউরোপীয়ান কোম্পানিগুলোর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা)এর নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া  অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সহযোগী হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যেখানে চলতি অর্থবছরে আমাদের মোট রফতানির প্রায় ৪৮ শতাংশের গন্তব্য হলো ইইউভুক্ত দেশগুলো। যার পরিমাণ ২৫.২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি জানান, ইইউ’র বেশকিছু কোম্পানি বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৩.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে। এ বিনিয়োগ  আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্প খাতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আনা, সাপ্লাই চেইন শক্তিশালী করাসহ সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি উল্লেখ করেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের পর ইইউ’র বাজারে পণ্য রফতানিতে আমরা বিদ্যমান শুল্ক সুবিধাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবো, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও স্থানীয় শিল্পায়নকে ব্যাহত করবে। এমন বাস্তবতায় আমাদের পণ্যে রফতানির শুল্কমুক্ত সুবিধা ২০২৯ পর্যন্ত অব্যাহত রাখা জরুরি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি পাদুকা, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, মেশিনারিজ, কেমিক্যাল প্রভৃতি আরও বেশি হারে আমদানি করার জন্য ইইউ’র উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান ব্যারিস্টার সাত্তার। তিনি আরও বলেন, ইইউ বাংলাদেশের জন্য শুধুমাত্র রফতানির গন্তব্যই নয়, একটি নির্ভরযোগ্য ব্যবসায়িক উন্নয়ন সহযোগী।

ডিসিসিআই সভাপতি আশা করেন, বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বিদ্যমান রফতানি সুবিধা রাখতে চলমান জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।   

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের প্রধান রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি বলেন, বহুবছর ধরেই ইইউভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্য রফতানির একটি আদর্শ গন্তব্যস্থল এবং ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগটি বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে ইইউ’র সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন ইইউ রাষ্ট্রদূত। তথ্য-প্রযুক্তি, এভিয়েশন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি, ওষুধ প্রভৃতি খাতে ইইউ কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে আরও বেশি হারে বাণিজ্য ও বিনিযোগ কার্যক্রম সম্প্রসারণের ওপর রাষ্টদূত জোরারোপ করেন।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং রানা প্লাজার ঘটানার পর আমাদের তৈরি পোশাক খাতে নতুন সম্ভাবনার তৈরি করেছে। যেখানে ইইউ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেটাকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সবার সহযোগিতায় মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে এদেশে পরিচালিত ইইউ কোম্পানিগুলোকে আরও বেশি হারে অ্যাডভোকেসি করার আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে বিডা বদ্ধপরিকর এবং চলতি বছরের ডিসেম্বরে বিডার ‘ওএসএস’ প্ল্যাটফর্ম থেকে বিনিয়োগকারীদের জন্য সব ধরনের সেবা স্বল্প সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করা হবে। তিনি জানান, আমাদের স্থানীয় বাজারের পরিমাণও বেশ বড়, যেখানে ইইউ কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো স্থানীয় উদ্যোক্তা খুঁজে পেতে বিডা সহযোগিতা করবে বলে তিনি অবহিত করেন। 

অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে ইইউ’র বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ: কোম্পানিজ প্রেক্ষিত’ এবং ‘জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশের কর্মপন্থা’ বিষয়ক দুটি বিষয়ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাসের কনস্যুলার জোরেট মারভেলিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে ইইউ’র বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ: কোম্পানিজ প্রেক্ষিত’ বিষয়ক সেশনে এয়ার বাসের আবাসিক প্রতিনিধি মুরাদ বুরোফালা, লাফাজ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও ইকবাল চৌধুরী, পেট্রোম্যাক্স এলপিজি লিমিটেডের সিইও মাসিহ নিয়াজি এবং জালো নিটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরিয়া লোপেজ অংশগ্রহণ করেন। এয়ার বাসের আবাসিক প্রতিনিধি বাংলাদেশের মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর জোরারোপ করেন। ইকবাল চৌধুরী বলেন, ইইউ কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষণে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই নীতি সহায়তা এবং জ্বালানি নিরাপত্তা একান্ত জরুরি। মাসিহ নিয়াজি বাংলাদেশের অবকাঠামো, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রস্তাব করেন। নুরিয়া লোপেজ বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে, সেইসঙ্গে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করা জরুরি। তিনি আরও জানান, শিগগিরই ইইউ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের কার্যক্রম শুরু করা হবে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশের কর্মপন্থা’ শীর্ষক সেশনে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিজেএমইএ’র সহ-সভাপতি মিরান আলী, বাংলাদেশ বাইসাইকেল অ্যান্ড পার্টস ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মোশতাক আহমেদ তানভীর, বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ এবং এইচঅ্যান্ডএম’র রিজিওন্যাল কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান অংশগ্রহণ করেন। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোরারোপ করেন জিয়াউর রহমান। মোহাম্মদ মোশতাক আহমেদ তানভীর বলেন, ইউরোপের বাজারে ই-বাইকের ব্যবহারের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যেটা আমাদের বাইসাইকেল শিল্পের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। মিরান আলী বলেন, তৈরি পোশাক খাতে সারা পৃথিবীতে আমাদের সবচেয়ে বেশি লিডসার্টিফাইড কোম্পানি রয়েছে, যেটি ইইউ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে সহায়তা করবে। রাসেল টি আহমেদ বলেন, বর্তমানে ৮৪টি বাংলাদেশি কোম্পানি তথ্য-প্রযুক্তিসেবা জাপানের বাজারে রফতানি করছে এবং বাংলাদেশের আইসিটি খাতের ইমেজ বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করতে হবে। সেই সঙ্গে এ খাতে জয়েন্ট ভেঞ্চার বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, বাংলাদেশ হতে চামড়া শিল্পের বিদেশি কোম্পানিগুলো পণ্য আমদানি করছে। ইউরোপীয়ন কোম্পানিকে বাংলাদেশের সাপ্লাইচেইন খাতে আরও বেশি হারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানান। বাংলাদেশের গ্রিন ফ্যাক্টরিগুলোর উপাদিত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ওপর তিনি জোরারোপ করেন। সেইসঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বাংলাদেশে ভোকেশন্যাল ট্রেনিং কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানান সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।

/জিএম/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
‘ইউরোপে অভিবাসীদের আশ্রয় চাওয়ার প্রেক্ষাপট পাল্টে যাবে’
বিস্তৃত অংশীদারিত্বের লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ ও ইইউ
রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আকাশসীমার নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ এস্তোনিয়ার
সর্বশেষ খবর
শিক্ষার্থীকে মারধর করে শিক্ষক বললেন, ‘শাসন করেছি’
শিক্ষার্থীকে মারধর করে শিক্ষক বললেন, ‘শাসন করেছি’
বিমানবন্দর ও টঙ্গী থেকে ৭ ছিনতাইকারী গ্রেফতার
বিমানবন্দর ও টঙ্গী থেকে ৭ ছিনতাইকারী গ্রেফতার
রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ
রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ
আবদুল্লাহ জাহাজ থেকে পণ্য খালাস শুরু
আবদুল্লাহ জাহাজ থেকে পণ্য খালাস শুরু
সর্বাধিক পঠিত
ফুটপাত থেকে দোকান ছড়িয়েছে প্রধান সড়কে, আসছে নতুন পরিকল্পনা 
ফুটপাত থেকে দোকান ছড়িয়েছে প্রধান সড়কে, আসছে নতুন পরিকল্পনা 
আমরা সুন্দর একটি সম্পর্ক মেন্টেইন করি: জয়া আহসান
বাংলা ট্রিবিউনের দশম বর্ষপূর্তিআমরা সুন্দর একটি সম্পর্ক মেন্টেইন করি: জয়া আহসান
যেভাবে বরণ করা হবে এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিককে
যেভাবে বরণ করা হবে এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিককে
জাতীয় দলে খেলতে গেলে সাপোর্ট লাগে: ইমরুল  
জাতীয় দলে খেলতে গেলে সাপোর্ট লাগে: ইমরুল  
চিনি খাওয়া বন্ধ করলে কী হয়?
চিনি খাওয়া বন্ধ করলে কী হয়?