X
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

আ. লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় সফল পরিণতি পেলো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: প্রধানমন্ত্রী

মাহফুজ সাদি, রূপপুর থেকে
০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৫২আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:৪০

পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়া থেকে ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করার দিনটিকে ‘অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আজ সফল পরিণতি পেলো বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সনদ হস্তান্তর

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ থেকে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশের কাতারে শামিল হলো এবং বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের কার্যকর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো।

শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, তিনি ১৯৫৬-৫৭ সালে প্রাদেশিক সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতিরোধ এবং গ্রামীণ সহায়তামন্ত্রী থাকাকালে এ অঞ্চলে উৎপাদনমুখী শিল্পায়নের ওপর জোর দিয়ে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে একটি এবং পূর্ব বাংলার রূপপুরে একটিসহ মোট দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত নামমাত্র জমি অধিগ্রহণ ছাড়া সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য তারা (পাকিস্তান সরকার) আর কিছুই করেনি।

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে প্রস্তাবিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী কিছু কাজও হয়েছিল। দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর এই মেগা প্রকল্পসহ সব জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড থেমে যায়।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য আনা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠান

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে আমরা সরকার গঠন করি। ২০২০ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ‘ভিশন স্টেটমেন্ট’ ও ‘পলিসি স্টেটমেন্ট অন পাওয়ার সেক্টর রিফর্মস’ প্রণয়নও অনুমোদন করি। ১৯৯৬ সালে আমরা জ্বালানি নীতিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করি এবং ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করি। ‘বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাকশন প্ল্যান-২০০০’ প্রণয়ন করি। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সহায়তায় আমরা একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সাল থেকে পর পর তিন দফা সরকারে থাকার কারণেই আমরা আজ বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছি। অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সেগুলোর সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া দেশ।

তিনি বলেন, আমরা ‘রূপকল্প-২০২১’-এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যান-২০১০’ প্রণয়ন করি। আবার রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিই। বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে। এছাড়া আইএইএ শুরু থেকেই আমাদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছে।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আইএইএ-কে এই প্রকল্পে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তাদের সার্বিক সহায়তা ও মনিটরিং করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যেকোনও ধরনের দুর্যোগে আমাদের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকটা খেয়াল রেখে এই প্ল্যান্টের ডিজাইন প্রণয়ন এবং নির্মাণকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। 

অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য আনা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে রাশিয়া থেকে এই ইউরেনিয়াম গত শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছায়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানে বলেন, যেই স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আজ জ্বালানি হস্তান্তরের উদ্বোধন হচ্ছে তাঁর কন্যার হাত ধরে। এই এক অনন্য ইতিহাস যার সাক্ষী হচ্ছে সমগ্র পৃথিবী। একই সঙ্গে আজ গর্বিত সমগ্র বাঙালি জাতি। সমগ্র বাঙালি জাতির শুভকামনা ছিল বলেই একটি দুরূহ কাজ শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে আমরা এগিয়ে নিতে পেরেছি।

মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের দুর্দিনে বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়ার সহায়তার কথা উল্লেখ না করলে অন্যায় হবে। একই সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থন আমরা পেয়েছি।

আরও পড়ুন-

যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়নে রাশিয়া সবসময় পাশে থাকবে: পুতিন

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্লাবে বাংলাদেশ

২০২৫ সালে রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ পাবেন গ্রাহকরা

এক নজরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

আরেকটি ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ

/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আ.লীগকে নিষিদ্ধ করায় গরু ‘কোরবানি’ করলেন রফিকুল ইসলাম মাদানী
রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার আগে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে বললেন জেলেনস্কি
সর্বশেষ খবর
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আ.লীগেরর কার্যক্রম নিষিদ্ধে সরকারের সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী: মজলিস
আ.লীগেরর কার্যক্রম নিষিদ্ধে সরকারের সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী: মজলিস
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে আসতে যাচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে আসতে যাচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন
তারকাদের মা দিবস…
তারকাদের মা দিবস…
সর্বাধিক পঠিত
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ