ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কমিশনার ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, তার কাছে কোনও অস্ত্র ও মাদক ছিল না। তার সহযোগী জাহিদের কাছ থেকে এই অস্ত্র ও মাদক পাওয়া গেছে।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগ পুলিশ সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কুদরত-ই খুদা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইরফান সেলিমের দুই মামলার ফাইনাল প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে অস্ত্র ও মাদক মামলা ছিল তা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
অভিযানে পাওয়া অস্ত্র ও মাদক কি হলো জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘অস্ত্র ও মাদক তার সহযোগীর কাছে পাওয়া গেছে। তার কাছে পাওয়া যায়নি। এখন সেগুলো মালখানায় আছে। পরবর্তীতে আদালতে জমা দেওয়া হবে।’
ডিএমপির চকবাজার থানায় দায়ের হওয়া এই দুটি মামলারই বাদী ছিল র্যাব। মামলার দুই মাসের মাথায় এ প্রতিবেদন দেওয়া হলো।
ইরফানের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইরফানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের মামলার তদন্ত করেছে লালবাগ থানা পুলিশ। আমরা তদন্ত করে যা পেয়েছি, তা রিপোর্টে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর ইরফান সেলিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় হত্যাচেষ্টার একটি মামলা হয়। নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন, ইরফান সেলিম, তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদ, হাজি সেলিমের মদিনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দীপু এবং গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাত আরও দুই তিন জন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২৫ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওয়াসিফ আহমদের মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় হাজি সেলিমের গাড়ি। ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে পেছন পেছন এলে কলাবাগানের ট্রাফিক সিগন্যালে হাজি সেলিমের গাড়ি থেকে দুই-তিন জন ব্যক্তি নেমে ওয়াসিফ আহমদ খানকে ফুটপাতে ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে গালাগাল করে ও হুমকি দেয়। পরে ট্রাফিক পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। পথচারীরা এই দৃশ্য ভিডিও করেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। পুলিশ হাজি সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার ও গাড়ি জব্দ করে।
পরে ২৬ অক্টোবর মামলা দায়েরের পর সেদিন দুপুরে র্যাব পুরান ঢাকায় চকবাজারের ২৬, দেবীদাস লেনে হাজি সেলিমের বাসায় অভিযান চালায়। র্যাব হাজি সেলিমের ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে হেফাজতে নেয়। বাসায় অবৈধভাবে মদ ও ওয়াকিটকি রাখার দায়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের দুই জনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন। পরে মাদক ও অস্ত্র আইনে তাদের বিরুদ্ধে দুটি করে মোট চারটি মামলা দায়ের করে র্যাব।
আরও পড়ুন-
হাজী সেলিমের ছেলেসহ দুজনকে কারাদণ্ড
‘আমি মারধর করিনি, করেছে সিকিউরিটি গার্ড জাহিদ’
আড়াই ঘণ্টার অভিযানে হাজী সেলিমের ছেলে র্যাব হেফাজতে
মারধরের দায় নিচ্ছেন না ইরফান, দেহরক্ষী বলছেন নির্দেশ ‘বসের’
ইরফানকে বাঁচানোর চেষ্টা তার সহযোগীদের!