মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে একটি বিবৃতি দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। নিজেদের মালিকানাধীন মিয়াওয়াদ্দি টেলিভিশনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তা পড়ে শোনানো হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়, নির্বাচনে জালিয়াতির পর বেসামরিক সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সার্বভৌমত্ব ও বিভাজন রুখতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাং-এর হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। এক বছর জরুরি অবস্থা কার্যকর থাকবে বলেও জানানো হয়।
গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে সোমবার ভোরে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি-সহ ঊর্ধ্বতন নেতাদের গ্রেফতারের পর দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর মিয়াওয়াদ্দি টেলিভিশনে (এমডব্লিউডি) পঠিত হওয়া বিবৃতিটি এমন:
‘গত ৮ নভেম্বরের বহু দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের ভোটার তালিকায় বিপুল অসামঞ্জস্য পাওয়া গেছে আর কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন (ইউইসি) এ সমস্যা নিরসনে ব্যর্থ হয়েছে।
জনগণই যেখানে দেশের সার্বভৌমত্বের রক্ষক, সেখানে ভোটার তালিকা নিয়েই ভয়াবহ জালিয়াতি হয়েছে। এটা স্থিতিশীল গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ভোটার তালিকার জালিয়াতি ইস্যুর সমাধান প্রত্যাখ্যান করা, ব্যবস্থা নিতে এবং পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ এবং উচ্চকক্ষের অধিবেশন স্থগিতের অনুরোধ অনুসরণ করতে ব্যর্থ হওয়া ২০১৮ সালের সংবিধানের ৪১৭ ধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ওই ধারায় ‘কেন্দ্রের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক সার্বভৌমত্ব দখলের প্রচেষ্টা কিংবা কার্যাবলিকে’ অসাংবিধানিক বলা হয়েছে। আর এসব ব্যর্থতা জাতীয় সংহতিতে বিভাজনের কারণ হতে পারে।
এ ধরনের কার্যকলাপ চলার কারণে ইউইসি’র বিরুদ্ধে অনাস্থা তৈরি হয়েছে এবং মিয়ানমারের বিভিন্ন নগর ও শহরে বিক্ষোভ চলছে। অন্যান্য দল এবং কিছু সংখ্যক মানুষকে দেখা গেছে পতাকা প্রদর্শনসহ বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক কাজ করছে। আর তাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তা।
এই সংকটের সমাধান না হলে তা গণতন্ত্রের পথে বাধা সৃষ্টি করবে আর এই সংকটের সমাধান অবশ্যই আইনসঙ্গতভাবে করতে হবে। সে কারণেই ২০০৮ সালের সংবিধানের ৪১৭ ধারা অনুযায়ী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ২০০৮ সালের সংবিধানের ৪১৮ ধারার (এ) উপধারা মোতাবেক ভোটার তালিকা যাচাই এবং ব্যবস্থা নেওয়া, জাতীয় আইন প্রণয়নের ক্ষমতা, শাসন এবং বিচারিক ক্ষমতা কমান্ডার ইন চিফের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে।
জরুরি অবস্থা দেশজুড়ে কার্যকর হবে এবং ২০০৮ সালের সংবিধানের ৪১৭ ধারা অনুযায়ী জরুরি অবস্থা ঘোষণার দিন থেকে শুরু করে এক বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।’
আরও পড়ুন:
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান, জরুরি অবস্থা জারি
মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের নিন্দায় সরব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়
সু চি-কে ছেড়ে না দিলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা জাতিসংঘের
মিয়ানমারের ব্যাংকগুলোতে সব ধরনের আর্থিক পরিষেবা স্থগিত
সু চিকে আটক করেছে সেনাবাহিনী