X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার জাদুকরী কূটনীতি

নাদীম কাদির
১০ অক্টোবর ২০১৬, ১৯:০১আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৬, ১৯:০৩

নাদীম কাদির ৪৫ বছর আগে একটি যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে অভ্যুদয় ঘটেছিল বাংলাদেশের। এ যুদ্ধে আমাদের পাশে ছিল রাশিয়া। আর যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল চীন। তাদের ভাষায়, ‘পিংপং কূটনীতি’র নামে তারা এমন অবস্থান গ্রহণ করে। একের পর সরকারগুলো এসেছে এবং গিয়েছে। অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে আমাদের সদস্যপদ লাভে ভেটো দিয়েছে চীন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরই কেবল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে চীন। এই মানুষটিকে তারা পাকিস্তান ভাঙার জন্য দায়ী করেছে। বেইজিং বহু বছর ধরেই ঢাকার অবিচলিত বন্ধু ছিল; সেই সময়টি ছাড়া যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল।
একজন বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে দূরদর্শী শেখ হাসিনা যখন চীনে অভিষেক সফরে যান, তখন সেটাকে একটা ‘বরফগলানো’ সফর বলা হয়েছিল। বেইজিং তার  প্রতি বেশ উষ্ণ ছিল। খালেদা জিয়ার  বিএনপির সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক থাকার পরও তারা তার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি তার পরীক্ষিত বন্ধু চীনের সঙ্গে একটা সাংঘাতিক ভুল করে বসে। তারা তাইওয়ানকে বাংলাদেশে একটা পূর্ণ কনস্যুলার সার্ভিসসহ একটি প্রতিনিধিত্বমূলক অফিস খোলার অনুমতি দেয়। ফলে চীনের কাছে এটা মনে হয়েছিল যে, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের সময় থেকে বিদ্যমান মজবুত সম্পর্কের ওপর বিএনপি চপেটাঘাত করেছে। এই আঘাত পেয়ে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক নিম্নমুখী হতে শুরু করে।
শেখ হাসিনা রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী বন্ধন বজায় রাখেন। বেইজিংয়ের সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে তুলতে শুরু করেন। চীন, ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করা কোনও বাজে কূটনীতি নয়, বরং এটা শেখ হাসিনার জাদুকরী রাজনীতি। তার নেতৃত্বের গুণ ও কারিশমার সঙ্গে কৌশলগত পরিকল্পনার ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
এশিয়ার ক্রমবর্ধমান পরাশক্তির সঙ্গে তিন দশকেরও বেশি সময়ের দ্বিপক্ষীয় ও কূটনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে শেখ হাসিনা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ দিনের গুরুত্বপূর্ণ সফরে চীন যান। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন সরকার গঠনের পর এটাই ছিল তার প্রথম বিদেশ সফর।
শেখ হাসিনার সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট ওয়েন জিয়াবাওয়ের বহুল প্রত্যাশিত উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় কৌশলগত দিক থেকে ক্লোজার কম্প্রেহেনসিভ পার্টনারশিপ অব কোঅপারেশন নিয়ে আলাপ হয়। বিশ্লেষকদের মতে, বেইজিংয়ের সঙ্গে ‘ব্যাপক অংশীদারিত্বের’ ক্ষেত্রে এটা ছিল শেখ হাসিনার একটি দৃঢ় পদক্ষেপ।
ঐতিহাসিক এ আলোচনায় উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো বিষয় উঠে আসে। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্প, কৃষি ও বিদ্যুৎখাতে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতার জন্য শেখ হাসিনার আহ্বানে বেইজিং ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে। চীনা প্রধান ওয়েব জিয়াবাও সবগুলো খাতে সহযোগিতা ও সমর্থনের আশ্বাস দেন।

আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিপরীত ভূমিকা নিয়েছে।  শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করার পর থেকে বেশ কয়েকটি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতি স্বীকার না করার পর যুক্তরাষ্ট্র এ বিপরীত ভূমিকা গ্রহণ শুরু করে।

এখন, ১৪ অক্টোবর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আসন্ন সফরে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় যাবে। কারণ চীন বাংলাদেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অংশীদার হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম অংশীদার হয়েছে চীন। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর জন্য ট্যাঙ্ক, যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধ বিমান দিয়ে এ বৃহৎ অংশীদারে পরিণত হয়েছে চীন। পাশাপাশি পদ্মা সেতু প্রকল্প নির্মাণেও অন্যতম চীন।

স্বাধীনতা পরে বর্তমানে সব গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বেইজিং আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করতে পারে। এছাড়া আংসান সু চিকে মিয়ানমার হয়ে দক্ষিণ এশিয়া থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া হয়ে চীনে সড়ক পথ ‍উন্মুক্তে রাজি করাতে পারে।

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ