X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নগরের চন্দ্রমল্লিকা

তুষার আবদুল্লাহ
০২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:১৩আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:২২

তুষার আবদুল্লাহ আলিঙ্গনের অপেক্ষায় মা। অপেক্ষায় সন্তান। তিনিও হয়তো ওই মুহূর্তটির জন্য ব্যাকুল। আলিঙ্গনে জড়াতে এসেছেন সন্তান, এসেছেন পিতা। তাঁকে জড়িয়ে নিয়েছিল এই নগরও। তিনি এই নগরের পিতা। বলতে হচ্ছে– ছিলেন। বলতে চাই থাকবেন। কারণ তাঁর মতো করে কেউ এই নগরের নকশা আঁকতে পারেননি। তিনি এঁকেছিলেন। এঁকে নগরবাসীর স্বপ্নের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখেননি। বাস্তবে স্বপ্নের কাঠামো তৈরি করে দিচ্ছিলেন। নগর যখন স্থবির, বসবাসের অযোগ্যের কিনারায় গিয়ে পৌঁছেছিল, তখনই সোনার কাঠি-রূপার কাঠি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি। নগর অভিভাবকের স্পর্শে মুমূর্ষু নগর প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছিল। দীর্ঘশ্বাস, তিনি ফিরলেন না। চলে গেলেন। নগরবাসীর কাছে খবরটি আচমকাই ছিল। রাজধানীর উত্তরপ্রান্ত ছবি’র মতো সাজিয়ে নিচ্ছিলেন। নগরবাসী মুগ্ধ হয়ে সেই বদলে যাওয়া উপভোগ করছিল। নগরের যে অস্বস্তিগুলো ছিল, পুরনো জঞ্জাল, তিনি ওপরে ফেললেন সাহসিকতা এবং নিখুঁত কৌশলে। আগামীর ঢাকা’র ফর্দটা খুব ছোট ছিল না। বরং নিত্য-নতুন উপকরণ যোগ হচ্ছিল তাতে। ভঙ্গুর গণপরিবহন ব্যবস্থাকে আধুনিক এবং নাগরিকবান্ধব করার কাজটিতো প্রায় গুছিয়েই নিয়ে আসা হয়েছিল। আর মাত্র কয়েকটা দিন...। না। কাজের সেই ক্যানভাসে শেষ আঁচড়টি দিয়ে যাওয়া হলো না। আজ শোকের নগরে, উৎকণ্ঠাও কিন্তু কম নয়। নগরবাসী নিজ স্বার্থের বৃত্তে থেকে উদ্বিগ্ন-তাহলে কি আগামীর ঢাকার ছবির ফ্রেমটি ভেঙে পড়বে স্বপ্নের দেয়াল থেকে? যতোটুকু আনতে পেরেছিলেন তিনি, সেইটুকু ফিরে যাবে আগের অগোছালো নষ্টের আস্তাবলে? তিনি উড়োজাহাজ থেকে নেমে এসে কি নগরবাসীর সেই দীর্ঘশ্বাসটুকু টের পেলেন? দেখতে পেয়েছেনতো স্বার্থকে ডিঙিয়ে এই নগরের চোখে, নাগরিকদের চোখে সত্যিই জল জমেছে।

তিনি উড়োজাহাজ থেকে নেমে আসলে, তার সামনে দাঁড়ানোর সাহসটুকু কি আছে আমাদের? যে ময়দানে তিনি অপেক্ষায় রইবেন নগরবাসীকে শেষ নজর দেখতে, সেখানে ভিড় করার মতো সাহস আছে ক’জনার? নাগরিক মাত্রইতো আমাদের লজ্জিত হওয়ার কথা। যখন তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, অন্য এক লড়াইয়ে- সেই দীর্ঘ যন্ত্রণার সময়টুকুতে রাজনীতি এবং সমাজের ক্ষুদ্রতা দিয়ে কি উপহারই না তাঁর প্রতি আমরা নিবেদন করেছি। রাষ্ট্রীয় এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কুশীলব বলে তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। জানি না সেই অভিমান থেকে তিনি বিদায় বললেন কিনা।

বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়ে যে বাড়ির উদ্দেশ্যে তাঁর যাত্রা, সেখানে পৌঁছানোর আগে তিনি শেষ দেখায় হয়তো দেখে নিয়েছেন নিজের আঁকা ক্যানভাস। কোনোটিতে হয়তো ধূলি পড়েছে। আঁকা-বাঁকাও হয়ে থাকতে পারে একটু। দুঃখ পাবেন হয়তো। তাঁর চেয়েও দুইধারে তাঁকে ঘিরে থাকা মানুষের দুঃখ বুঝি কম? শুধুই কি নাগরিকদের চোখে জলজট আজ? পর্দায় তাঁর উপস্থাপনায় মুগ্ধ ছিলেন যারা, উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে এগিয়ে চলছিলেন যারা, তাদের জলজট ফুরোবার নয়।

তাঁর স্থায়ী নিবাস হচ্ছে যে বাড়িটিতে। সেই পল্লীর সংস্কারও হয়েছিল তাঁর ছোঁয়াতে। সেখানে মাঝে মধ্যে যাওয়া হয়, আত্মার কতো আত্মীয় সেখানে ওঠে গেছেন। তাদের বাড়ি ঘিরে থাকা চন্দ্রমল্লিকা আমাকে টানে। যাবো। যেতেতো হবেই। ওই পল্লীর আঙিনায় যে আরেকটি চন্দ্রমল্লিকা রোপিত হলো আজ।

আনিস ভাই, আনিসুল হক–আপনি আমাদের নগরের চন্দ্রমল্লিকা ছিলেন।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে আছিম বাসে আগুন দেয় ছাত্রদলের নেতারা: সিটিটিসি
শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে আছিম বাসে আগুন দেয় ছাত্রদলের নেতারা: সিটিটিসি
গবেষণার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর
গবেষণার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর
পুণ্যস্নানে হাজারো ভক্তের ভিড়, জমজমাট লোকজ উৎসব
পুণ্যস্নানে হাজারো ভক্তের ভিড়, জমজমাট লোকজ উৎসব
বউ-শাশুড়ির ঝগড়া থামাতে গিয়ে প্রাণ গেলো একজনের
বউ-শাশুড়ির ঝগড়া থামাতে গিয়ে প্রাণ গেলো একজনের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ