X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বইমেলার জলবায়ু

তুষার আবদুল্লাহ
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:৪২আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:৪৫

তুষার আবদুল্লাহ গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় একজন প্রকাশক ও জনপ্রিয় বই দোকানের স্বত্বাধিকারী মুঠোফোনে জানালেন, তিনি বইমেলার দ্বার থেকে ফিরে আসছেন। বাইরে থেকে মেলার আবহাওয়া দেখে ফিরে আসছেন তিনি। কারণ জানতে চাইলে বলেন, মেলার অবস্থা মুড়ির টিন বাসের মতো। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে,ভেতরে মানুষ আর মানুষ। রাত সাড়ে আটটাতেও অনেককে দেখা যাচ্ছে মেলায় প্রবেশ করছেন বা করার অপেক্ষায়। বললাম, বিক্রি তাহলে ভালোই হচ্ছে। তিনি বললেন, ভিড় আছে কিন্তু বইপ্রেমিক বা ক্রেতা কম। ওনার সঙ্গে আমিও একমত হই। কারণ, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমিও বইমেলায় ছিলাম। কীভাবে যেন প্রথমবারের মতো এবার সব কয়টি শুক্রবারই মেলাতে যাওয়া হয়েছে। অন্য দুই একদিনও গেছি। অভ্যেস নেই কোনও স্টলের ভেতরে বসে আড্ডা দেওয়ার। কোনও কোনও স্টলের সামনে চা ফুরনো পর্যন্ত বিশ্রাম। বাকি পুরো সময়টাই মেলা ঘুরে দেখা। যারা আসছেন মেলাতে, তাদের পর্যবেক্ষণ করাটাই নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লক্ষ্য করি কোন কোন প্রকাশনার স্টল, প্যাভিলিয়নে ভিড় বেশি, বই নিয়ে মেলাতে এসেছে কোন কোন প্রকারের প্রকাশনী এবং ভালো বই প্রকাশ করেও কারা ক্রেতা পাচ্ছেন না।
প্রথমত বলতে হয় ছুটির দিন বা ভিড়ের দিনগুলোতে বইয়ের প্রকৃত ক্রেতারা বিড়ম্বনায় পড়েন। ভিড়ের জন্য স্টল ঘুরে ঘুরে সময় নিয়ে নিজের চাহিদা ও পছন্দের বই তারা খুঁজে বের করতে পারেন না। ফর্দ ধরে বই খুঁজতে আসা পাঠকের সংখ্যা কমেছে। অনেক পাঠক চান স্টল ঘুরে বই নেড়েচেড়ে দেখে বই কিনবেন, এই সুযোগ তারা ভিড়ের দিনে কম পাচ্ছেন। এই যে ভিড়ের কথা বললাম,এই ভিড় যদি প্রকৃত ক্রেতা বা বইপ্রেমিকদের হতো তাহলে বিড়ম্বনা একটু কম হতো। কারণ, সকলের উদ্দেশ্য যখন এক,তখন ভিড় দুর্ভোগের পর্যায়ে পড়ে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি বড় অংশ মেলায় আসছেন অন্য কোনও বিনোদন কেন্দ্র ঘুরে দেখার বিকল্প হিসেবে। তারা স্টলের সামনে যাচ্ছেন, বই দেখার চেয়ে স্টলে কারা আছেন সেদিকে নজর বেশি। লেখকদের চিনতে পারুক না পারুক তাদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। সেলফি তোলার পর জানতে চাইছেন, আপনি কি লেখক,কী নাম? এমন কাণ্ড ঘটছে হরদমই। একটি অংশ আসছে ভিড় দেখতেই। ললনাদের দেখার জন্য ভিড় কমেছে এমন দাবি করাও যাবে না।

বইমেলার আরেক বড় বিড়ম্বনা–মৌসুমি লেখকদের দাপট। তারাই কোনও কোনও স্টল আঁকড়ে থাকেন। তাদের কেউ দেশের, কেউ প্রবাসের। বলে রাখতে চাই, মেলা উপলক্ষে প্রবাস থেকে আমাদের শিল্প, সাহিত্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখকও আসেন। তবে বেশিরভাগ আসেন ব্যক্তিগত প্রচারের জন্য। তারা স্টলে বসে আত্মীয়-পরিজন-বন্ধুদের নিয়ে সেলফি উৎসবে মেতে ওঠেন। চলে জোর-জবরদস্তি করে বই কেনানো এবং অটোগ্রাফ দেওয়ার প্রদর্শনী। ডলার-পাউন্ডের কথা ভেবে বেচারা প্রকাশকরা এদের মনে কষ্ট দিতে চান না। কিন্তু বিপদ হলো প্রকৃত ক্রেতা ওই স্টল থেকে তাদের প্রয়োজনীয় বা পছন্দের বইটি নিতে পারলেন না। তার পক্ষে হয়তো দ্বিতীয় দিন মেলাতে আসাও সম্ভব হবে না। অন্যদিকে লেখকও বঞ্চিত হলেন তার বইয়ের একটি কাটতি থেকে।

ভিড় নিয়ে যে এত কথা লিখলাম। অনেকে বলতে পারেন সমস্যা কী? বইমেলার মতো পরিবেশে এসে যদি কেউ একটি বইও কেনেন,একটি বইও পড়েন তাহলেই তো আমরা সার্থক। আয়োজন সার্থক। তাদের কাছে জানতে চাইবো, বইমেলায় বছরের পর বছর যারা নারীদের লাঞ্ছিত করার সঙ্গে যুক্ত ছিল কিংবা আছে তাদের মানসিকতা কি পাল্টেছে বইমেলাতে এসে? যারা বাণিজ্যমেলার বিকল্প ভেবে এখানে আসেন, তারা কি বই-মনস্ক হবেন কোনও কালে? বরং এই প্রকারের ‘ভিড়’ বা উটকো মানুষের বিড়ম্বনার ভয়ে অনেকে ছুটির দিনে মেলায় আসতে চান না পরিবার নিয়েতো বটেই,নিজেও। এই প্রকার প্রকৃত পাঠক, ক্রেতার সংখ্যা অফুরান। তাদের পক্ষে ছুটির দিন বাদে অন্যদিন মেলার জন্য বরাদ্দ রাখা এই ‘জীবিকা’র জীবনে প্রায় অসম্ভব। তাই বইমেলায় প্রকৃত বইপ্রেমিক ও ক্রেতার জলবায়ু রক্ষার স্বার্থে প্রবেশ মূল্য (সেটা পাঁচ টাকাও হতে পারে) ঠিক করা যায় কিনা। এতে অনেকে কোরাস কণ্ঠে চিৎকার করে বলতে পারেন,একুশের চেতনা। বইমেলার চেতনা ভূলুণ্ঠিত হবে। কিন্তু দিনকে দিন গোলকের মতো বইমেলার জলবায়ুও যে দূষিত হচ্ছে,সেই নজর ও বোধ কি আমাদের হয়েছে, হবে?

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আবারও জীবিত দুই জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস
আবারও জীবিত দুই জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ এপ্রিল, ২০২৪)
সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা
সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ