X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম

ড. মো. শাখাওয়াৎ হোসেন ফিরোজ
১৭ জুন ২০২০, ১৫:৫২আপডেট : ১৭ জুন ২০২০, ১৫:৫৪

ড. মো. শাখাওয়াৎ হোসেন ফিরোজ করোনাকালের এই দুর্যোগ মুহূর্তে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শিক্ষার মান বজায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ প্রাইভেট  বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব একটা গুছিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না। এটিকে পুরোপুরি কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা ঠিকমতো নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। এখানে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত বিভিন্ন উপকরণের প্রাপ্তি ও তাদের ব্যবহারিক দিকগুলো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান অবস্থায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক অবস্থা, অনলাইন শিক্ষা উপকরণ, ইন্টারনেট সংযোগ, নিরবচ্ছিন্ন বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা সবকিছু মিলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা বাস্তবসম্মত মনে হওয়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো,  কবে আবার সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায়  ফিরে আসবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাহলে ঠিক কত দিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে? এখন থেকে যদি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বাধাগুলো চিহ্নিত করা ও তা সমাধানের পথ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করা না যায়, তাহলে হয়তো অনেক পিছিয়ে পড়তে হবে। করোনাকালের এই দুর্যোগে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর সম্ভাব্য কর্মপন্থা নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে বাধার সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করাই এই লেখার উদ্দেশ্য, যাতে এই সময়ের শিক্ষা কার্যক্রমে প্রক্রিয়াগত/পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা থাকলে তা সংশোধন করে এটিকে চালু করা যায় বা ভবিষ্যতে গবেষণার তথ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

আমার মনে হয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার প্রথম পদ্ধতি হতে পারে অনলাইন ক্লাস। জুম (Zoom) বা সমমানের সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাস চালানো যেতে পারে। জুম বেছে নেওয়ার কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা BdREN থেকে লাইসেন্সকৃত সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারবেন। জুম লাইভে ক্লাসের পক্ষে অবশ্যই বেশি ভোট পড়বে, কারণ এর মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষক মিথস্ক্রিয়া সম্ভব এবং ছাত্র-শিক্ষক মিথস্ক্রিয়াই হলো Quality Education-এর চাবিকাঠি। এই মিথস্ক্রিয়ার মূল বিষয়টি হলো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি যোগাযোগ স্থাপন করা। এবার একটু ভিন্নভাবে দেখি, বলা হয় Active Communication-এর ৭০% অ-মৌখিক (non-verbal)। প্রফেসর মেহরাবিয়ান অবশ্য একটু ভিন্নভাবে পরিমাপ করেছেন—তার ‘7-38-55 Rule.’ অনুযায়ী  শব্দ, কণ্ঠ এবং দেহের ভাষার (Body language) অবদান যথাক্রমে ৭%, ৩৮% ও ৫৫%। তাহলে দাঁড়ালো যে অনলাইন ক্লাসে ছাত্র-শিক্ষক মিথস্ক্রিয়া সাধারণ ক্লাস রুমের মতো যথাযথভাবে সম্ভব না। উপরন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্লাসে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৬০ জন। কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মনিটরে ৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কে ক্লাসে যোগ দিতে চায় বা কে কথা বলতে চায় তা বোঝা বা পরিচালনা একজন শিক্ষকের পক্ষে খুবই দুরূহ একটি বিষয়। ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য এটা সহজে করা সম্ভব। এর মধ্যে নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ, উচ্চগতির ইন্টারনেট এবং সর্বোপরি একটি কম্পিউটারের প্রাপ্যতার শর্তও থাকছেই। স্মার্টফোনের মাধ্যমে ক্লাসে যোগ দেওয়া সম্ভব, কিন্তু সঠিকভাবে শিক্ষককে অনুসরণ করা কঠিন। কাজেই এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত উপকরণ নিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো সম্ভব।

শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর দ্বিতীয় পদ্ধতি হতে পারে ভিডিও লেকচার, একটি Power Point ফাইলকে জুম বা সমমানের সফটওয়্যার ব্যবহার করে একজন শিক্ষক ক্লাসে যেভাবে পড়ান, সেভাবে বাসায় বসে রেকর্ড করতে পারেন। সেক্ষেত্রে কম্পিউটারের টাচ স্ক্রিন বা সমমানের স্ক্রিন ব্যবহার করে ক্লাসের মতো Whiteboad ব্যবহার করাও সম্ভব। টাচ স্ক্রিন না থাকলে এক্সটারনাল ডিভাইস (বা ডিজিটাল স্লেট) সংযোগ করেও এটা করা যায়। আমার জানা মতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ভিডিও লেকচারের পক্ষে, কারণ এতে তারা সুবিধামতো সময়ে, দোকান থেকে বা অন্যের  ডিভাইস ব্যবহার করে সব লেকচার সংগ্রহ করতে পারবে এবং কম্পিউটার/স্মার্টফোনের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবে। এক্ষেত্রে সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষকদের জন্য ভিডিও লেকচার তৈরির উপকরণ সরবরাহ ও প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ প্রদান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহজেই এই সমস্যা সমাধান করতে পারে। তবে ভিডিও লেকচার কী প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে যাবে তা নিয়ে মতভেদ তৈরি হবে শিক্ষকদের মধ্যে। ভিডিও ফাইলগুলোর স্বত্ব, নিরাপত্তা, সঠিক ব্যবহার ইত্যাদি বিষয় সামনে আসবে। এর মূল কারণ আমাদের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর দুর্বল নৈতিক অবস্থান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু সংখ্যকের এই ভিডিওগুলো নিয়ে কী করা যাবে/যাবে না, তা সম্পর্কে সঠিক বিবেচনা না থাকাই এর মূল কারণ। শিক্ষকদের তৈরি ভিডিও ফাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি, এর রক্ষার দায়িত্ব তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের। পৃথিবীর বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম ভিডিও লেকচার থাকে, কিন্তু শুধু সংশ্লিষ্ট কোর্সের শিক্ষার্থীই অনলাইন লগইনের মাধ্যমে ভিডিও লেকচার দেখতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তার IT বিভাগের মাধ্যমে সহজেই এটা করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্মানিত শিক্ষকদের তৈরি কোর্স মেটেরিয়ালের  জন্য  অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরির উদ্যোগ দেশের এই জরুরি অবস্থায় শিক্ষা ক্ষেত্রে উদাহরণ তৈরি করবে এবং এর মাধ্যমে বেশিরভাগ শিক্ষক ভিডিও লেকচার তৈরি করতে আগ্রহী ও উদ্যোগী হবেন। ভিডিও লেকচার তৈরি সম্ভব না হলেও উল্লিখিত অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে Course Material (Hand note, image, book, etc.) প্রদান করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব।  

উল্লিখিত দুটি পদ্ধতিতে বা এর যেকোনও একটির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার আনুষঙ্গিক কিছু বিষয় আলোচনা করা দরকার, যা ওই কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের জন্য আবশ্যক। শিক্ষার বিভিন্ন শাখায় বিশেষ করে, ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি, মেডিক্যাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয় যেখানে ব্যবহারিক ক্লাস রয়েছে সেখানে বড় সমস্যা তৈরি হবে। এক্ষেত্রে তত্ত্বীয় কোর্স পরিচালনা সম্ভব হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়া সম্ভব হবে না। তবে করোনা পরিস্থিতি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক না হলে চলতি সেমিস্টারের ব্যবহারিক কোর্সগুলো পরবর্তী সেমিস্টারে অফার করার ব্যবস্থা বিষয়টি চিন্তা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে একাডেমিক বিশেষজ্ঞরা একটি সমাধান বের করতে পারবেন বলে মনে করি।

বর্তমান বাস্তবতায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে ওপরের যেকোনোটি বা ভিন্ন কোনও পদ্ধতির ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি বাধা অতিক্রম করতে হবে।

ক) শিক্ষা উপকরণ-বর্তমানে ল্যাপটপ/ট্যাব/স্মার্টফোন/হেডফোন/পেন ড্রাইভ ইত্যাদি হলো শিক্ষা উপকরণ। এগুলোর অভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা লোনের মাধ্যমে বা অ্যালামনাইগণ তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে এর সমাধান করতে পারেন।

খ) দুর্বল মোবাইল নেটওয়ার্ক-দুর্বল মোবাইল নেটওয়ার্ক এই কার্যক্রমের একটি বড় বাধা। একেক এলাকায় একেকটি ফোনের নেটওয়ার্ক ভালো। একটি সার্ভের মাধ্যমে সারা দেশে নেটওয়ার্ক স্টাডি করে সরকারিভাবে BTCL-এর মাধ্যমে এটি সমাধানের চেষ্টা করা যেতে পারে বা এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া যেতে পারে।  

গ) মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকা-এটি খুব অল্প শিক্ষার্থীর জন্য প্রযোজ্য হবে বিধায় এসব এলাকায় বসবাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে প্রয়োজনে তার কাছে কোর্স মেটেরিয়াল পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে পারে।

ঘ) মোবাইল ডাটা-অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ চালানো শিক্ষার্থীদের জন্য কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে একজন শিক্ষার্থীর কী পরিমাণ খরচ হবে তা নির্ধারণ করে তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা যেতে পারে।

এর বিকল্প প্রস্তাবনাটি হলো—অনলাইন ক্লাস বা ভিডিও লেকচার দেখা ও ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে i) জুম বা সমমানের সফটওয়্যারে চালানোর সময় মোবাইল ডাটা ফ্রি করার ব্যবস্থা করা, ii) বিশ্ববিদ্যালয় সাইটে লগইন হওয়ার পর ভিডিও লেকচার দেখা, অনলাইন লাইব্রেরিতে পড়াশোনা, ফাইল ডাউনলোড ইত্যাদি কাজে ডাটা ফ্রি হওয়া। একটি বিশেষ সাইটে লগইনের মাধ্যমে ফ্রি ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে সহজ সমাধান দিতে পারবে বলে আমি মনে করি।  

শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার প্রক্রিয়াটি কারিগরি বিষয়াদি ছাড়াও সামাজিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পরিবার অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় আছেন এই সঙ্কট মুহূর্তে। অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে আবার অনেকে পরিবারকে নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এ ধরনের সামাজিক ও মানবিক বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে আশার কথা, সরকার বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য করছে। স্থানীয় প্রশাসনও এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনকি বিভাগে অ্যালামনাই, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা সরকারি সহায়তার বাইরেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়া করোনা কালের শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলাদাভাবে সার্ভে করছে। এর তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে গোটা দৃশ্যপট পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং এর মাধ্যমে সঠিক ও কার্যকর দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।          

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম এই মুহূর্তে না হলেও একসময় শুরু করতেই হবে। করোনার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে হেরে যেতে চাই না আমরা কেউই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমনিতে আমরা পিছিয়ে আছি গবেষণা কার্যক্রমে। স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমও দীর্ঘদিন চালাতে ব্যর্থ হলে কী জবাব দেবো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে? 

লেখক: অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, বুয়েট

 

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ