X
রবিবার, ০৪ মে ২০২৫
২১ বৈশাখ ১৪৩২

রংপুর টাউনহল বধ্যভূমিতে পাওয়া যাচ্ছে হাড়গোড়

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:৩৭আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ২২:৫৫

টাউনহল বধ্যভূমিতে খননকাজের সময় পাওয়া হাড়গোড় রংপুর নগরীতে পাক হানাদার বাহিনীর টর্চার ক্যাম্প বলে পরিচিত টাউনহল বধ্যভূমিতে খননকাজের সময় পাওয়া যাচ্ছে মানুষের হাড়গোড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র। টাউন হল চত্বরে নির্মাণাধীন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ খননের সময় পাওয়া গেছে একটি কুয়া। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে এসে নির্যাতনের পর হত্যা করে ফেলে দিতো। মা-বোনদের ধর্ষণের পর হত্যা করেও ফেলে দেওয়া হতো সেই কুয়ায়। কুয়াটি সংরক্ষণের দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন ব্যক্তিরা।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রংপুর টাউন হলে পাক হানাদার বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। সেখানে তারা একটি টর্চার সেলও স্থাপন করে। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল টাউন হলে এসে ওই কুয়ার কাছে অসংখ্য নারীর পরিধেয় বস্ত্র ও হাড়গোড় দেখতে পান। এর পর ওই জায়গাটি বেদখল হয়ে যায়, গড়ে ওঠে স্থাপনা। সরকার ওই বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কাজ শুরু করতে গিয়ে মাটি খনন করলে সেই কুয়াটি দৃশ্যমান হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু জানান, ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে তারাই প্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল রংপুর শহরে প্রবেশ করে। তারা রংপুর টাউন হলে গিয়ে দেখতে পান, সেখানে বেশ কয়েকজন নারী বস্ত্রহীন অবস্থায় আধামরা অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের পরনের চাদর ও কাপড় সংগ্রহ করে তাদের দিই। এরপর সেখান থেকে তাদের বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করি। এছাড়া টাউন হলের পেছনে থাকা বিশাল কুয়ায় মাথার খুলি , হাড়গোড়, পরনের কাপড়, শাড়িসহ বিভিন্ন সামগ্রী পড়ে থাকতে দেখি। কুয়ার ভেতরে বেশ কয়েকটি লাশও আমরা দেখতে পাই। টাউন হলের কুয়াটিতে পাকবাহিনী অনেক লাশ ফেলে দিয়েছে।’

এদিকে সেক্টরস কমান্ডারস ফোরাম রংপুরের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন বলেন, ‘আমরাই প্রথম টাউন হলের পেছনে ইটের গাথুনি দিয়ে একটি প্রতীকী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করি। সেখানে প্রতি বছর বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, এই বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হোক। দেরিতে হলেও সরকার সেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেই ভয়াল কুয়াটি এতদিনে ভরাট হয়ে গিয়েছিল। অবৈধভাবে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল। দখলমুক্ত করে স্মৃতিসৌধের কাজ শুরু করতে গিয়ে কুয়াটি দৃশ্যমান হয়। সেখান থেকে মানুষের হাড়গোড়, দাঁত উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা ওই কয়াটি সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছি যাতে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে পাক হানাদারদের বর্বরতা।’

রংপুরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টু বলেন, ‘আমরা টাউন হল বধ্যভূমিতে কুয়াটি দৃশ্যমান হওয়ার পর সেটাকে সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। আমরা বলেছি, স্মৃতিসৌধের পাশেই যেন কুয়াটি সংরক্ষণ করা থাকে।’

এ ব্যাপারে রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি কুয়াটি সংরক্ষণ করার এবং সেই সঙ্গে কুয়াটির পুরোটাই খনন করতে। স্মৃতিসৌধের পাশাপাশি কুয়াটিও দৃশ্যমান রাখা হবে।’

 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (৪ মে, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৪ মে, ২০২৫)
হারের শঙ্কা উড়িয়ে রিয়ালকে সাত পয়েন্ট পেছনে ফেললো বার্সা
হারের শঙ্কা উড়িয়ে রিয়ালকে সাত পয়েন্ট পেছনে ফেললো বার্সা
বিমানবাহিনীর সদস‍্যকে হাতকড়া পরিয়ে মারধর, ২ এএসআই প্রত‍্যাহার
বিমানবাহিনীর সদস‍্যকে হাতকড়া পরিয়ে মারধর, ২ এএসআই প্রত‍্যাহার
রাস্তায় কলেজছাত্রীকে ইভটিজিং, গ্রেফতার ২
রাস্তায় কলেজছাত্রীকে ইভটিজিং, গ্রেফতার ২
সর্বাধিক পঠিত
৩০০ ফিট দিয়ে রামপুরা করিডোর চালুর পরিকল্পনা ডিএনসিসির
৩০০ ফিট দিয়ে রামপুরা করিডোর চালুর পরিকল্পনা ডিএনসিসির
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
টিএসসিতে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ, সমালোচনার ঝড়
টিএসসিতে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ, সমালোচনার ঝড়
ইঞ্জিন বিকল, মাঝপথে থামলো চলন্ত ট্রেন
ইঞ্জিন বিকল, মাঝপথে থামলো চলন্ত ট্রেন
দর্শক-শ্রোতা প্রতিক্রিয়ায় ‘তীর’বিদ্ধ জেফার!
দর্শক-শ্রোতা প্রতিক্রিয়ায় ‘তীর’বিদ্ধ জেফার!