গাজীপুরের কাপাসিয়ায় সড়কে নিহত হয়েছেন সাংবাদিক মঞ্জুর হোসেন মিলন (৫২)। বাক-বিতণ্ডার জেরে বালুবাহী ড্রাম ট্রাকের চাকায় পিষে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পরিবার। শুক্রবার (৪ আগস্ট) কাপাসিয়ার কোট বাজালিয়া বাজারের পাশে ভাকোয়াদি-কাপাসিয়া আঞ্চলিক সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মিলন কাপাসিয়ার পাবুর গ্রামের মৃত আব্দুস সাঈদ শেখের ছেলে। তিনি দৈনিক করতোয়া ও দৈনিক ভোরের দর্পণের গাজীপুর প্রতিনিধি এবং সাপ্তাহিক গাজীপুর দর্পণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি বৈশাখী টেলিভিশন, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক দিনকালে কাজ করেছেন। তিনি কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের তিন বারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
নিহতের ভাই কামাল হোসেন অভিযোগ করেন, ‘আমার ভাই সাংবাদিক মঞ্জুর হোসেন মিলনকে ট্রাকচাপা দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি গাজীপুর সিটি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ছিলেন। পরিবার নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ গাজীপুর শহরের জয়দেবপুরে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।’
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সকালে পেশাগত ও পারিবারিক কাজে জয়দেবপুরের বাসা থেকে মোটরসাইকেলে কাপাসিয়ায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। তিনি সোয়া ১০টার দিকে ভাকোয়াদি-কাপাসিয়া আঞ্চলিক সড়কের কোটবাজালিয়া বাজার এলাকায় পৌঁছেন। সরু ওই সড়ক দিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা বেপরোয়া গতির বালুভর্তি ড্রাম ট্রাক মোটরসাইকেলকে সাইড না দিয়ে ওভারটেক করতে চাইলে সাংবাদিক মিলন আত্মরক্ষার্থে সড়কের বাইরে চলে যান।
‘পরে তিনি মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে রেখে ট্রাকচালকের সঙ্গে কথা বলার জন্য এগিয়ে যান। তিনি ট্রাকটিকে থামিয়ে চালকের সঙ্গে কথা বলার সময় তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ট্রাকচালক ক্ষিপ্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিক মিলনের ওপর ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে তাকে চাপা দেয়। উত্তেজিত চালক মৃত্যু নিশ্চিত করতে ট্রাকটিকে মিলনের দেহের ওপর তুলে দিয়ে সামনে-পেছনে নিয়ে পিষ্ট করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাটি কোনও দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা নিহতের মোটরসাইকেলটি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে কাপাসিয়া থানা পুলিশ। শীতলক্ষ্যা নদীর অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি এ হত্যার ঘটনার বিচার চাই।’
কাপাসিয়া থানার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম লুৎফুল কবির জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পুলিশ ঘাতক ড্রাম ট্রাক আটক করলেও চালক ঘটনার পরপরই পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় গাড়ি চালক এবং মালিককে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে, এ ঘটনায় গাজীপুরে সাংবাদিকসহ সব মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। সাংবাদিক মঞ্জুর হোসেন মিলনের নিহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী শফিকুল আলম, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমানত হোসেন খান, জেলা পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান আরিফ, গাজীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক মাসুদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান, দৈনিক গণমুখ সম্পাদক অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, সাংবাদিক অধ্যাপক এনামুল হক, শ্রীপুর রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী আকতার হোসেন, শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আলমগীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা, শ্রীপুর উপজেলা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আনিছুর রহমান শামীম, সাধারণ সম্পাদক সেলিম শেখসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা এ ঘটনায় ট্রাকচালক ও মালিকসহ দায়ীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করেন।
বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন মাঠে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
সাংবাদিক মিলন মৃত্যুকালে অসুস্থ স্ত্রী, দুই মেয়ে, মা, ভাই-বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।